ওজন বৃদ্ধি (Weight gain)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

স্থূলতা ও ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। স্থূলতা একটি রোগ যা দেহে মেদ/চর্বির পরিমাণ বেড়ে গেলে হয়ে থাকে।অপরদিকে একজন ব্যক্তির ওজন বৃদ্ধি পাওয়া দেহে মাংসপেশী ও অস্থির ভর, পানির পরিমাণ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে । তবে উভয় অবস্থাতেই দেহের ওজন উচ্চতা ও বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। এটি শুধু দৈহিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়। স্থূলতার জন্য বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন:

মদ্যপানজনিত লিভারের রোগ (Alcoholic liver disease) ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাব জনিত রোগ (Vitamin D deficiency)
হার্ট ব্লক (Heart block) মেনোপজ/রজঃবন্ধ (Menopause)
ডায়াবেটিস (Diabetes) হার্ট ফেইলিয়র (Heart failure)
স্থূলতা (Obesity) অস্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস (Eating disorder)
হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism) ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স/ দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি অসহিষ্ণুতা (Lactose intolerance)
লৌহের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা (Iron deficiency anemia) পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (Polycystic ovarian syndrome, PCOS)
পলিসাইথেমিয়া ভেরা (Polycythemia vera) প্রিম্যাচিউর রাপচার অফ অ্যাম্নিওটিক মেমব্রেন (Premature rupture of amniotic membrane)
শিঙ্গেলস (হার্পিস জস্টার) (Shingles (herpes zoster)) সেন্ট্রাল অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (Central atherosclerosis)
গয়টার (Goitre) ইডিওপ্যাথিক অ্যাবসেন্স অফ মেন্সট্রুয়েশন (Idiopathic absence of menstruation)
গ্রেভস ডিজিজ (Graves disease) হাশিমোতো থাইরয়েডাইটিস (Hashimoto thyroiditis)
অ্যাকান্থসিস নাইগ্রিক্যানস্‌ (Acanthosis nigricans) নারকোলেপসি (Narcolepsy)
ফ্ল্যাট ফিট (Flat feet) মাইট্রাল ভাল্ভ ডিজিজ (Mitral valve disease)
অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপ্নিয়া (Obstructive sleep apnea (OSA)) হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া (Hypercholesterolemia)
অস্টিওকন্ড্রোসিস (Osteochondrosis) স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স (Stress incontinence)
অ্যানিমিয়া অফ ক্রনিক ডিজিজ (Anemia of chronic disease) প্যারাথাইরয়েড অ্যাডেনোমা (Parathyroid adenoma)
প্যারোক্সিসমাল সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া (Paroxysmal supraventricular tachycardia) পিটুইটারী অ্যাডেনোমা (Pituitary adenoma)
পিটাইরিয়াসিস রোজিয়া (Pityriasis rosea) হরমোন ডিজঅর্ডার (Hormone disorder)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলে এবং সে তুলনায় পরিশ্রম কম করলে স্থূলতা দেখা দেয়। এই অতিরিক্ত ক্যালরি আমাদের দেহে চর্বি হিসেবে জমতে থাকে। বিভিন্ন কারণে স্থূলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে, যেমন:

  • জিনগত কারণে স্থূলতা দেখা দিতে পারে। মানবদেহ কিভাবে গ্রহণ করা খাবার থেকে শক্তি উৎপাদন করবে এবং পরিশ্রমের সময় কতটুকু ক্যালরি খরচ হবে তা মাঝে মাঝে জিনের উপর নির্ভর করে। ফলে জিনগত ও পরিবেশগত কারণে স্থূলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • একই পরিবারের সকল সদস্যের খাদ্যাভাস ও জীবনযাত্রা একই ধরনের হয়ে থাকে। তাই একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে স্থূলতা দেখা দিতে পারে।
  • পরিশ্রম কম করলে ক্যালরি কম খরচ হয় এবং অতিরিক্ত ক্যালরি আমাদের দেহে চর্বি হিসেবে জমতে থাকে। ফলে স্থূলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার ও খাদ্যাভাস স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • দীর্ঘদিন ধূমপানের পর হঠাৎ করা ধূমপান ছেড়ে দিলে ওজন বাড়তে পারে। তবে এটি ক্ষণস্থায়ীভাবে হয়ে থাকে। তাই সুস্থ্য থাকার জন্য অবশ্যই ধূমপান ছাড়তে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় স্বভাবতই মেয়েদের ওজন বৃদ্ধি পায়।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে স্থূলতা দেখা দিতে পারে।
  • নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের ব্যবহার (ডায়াবেটিকের ঔষধ, antidepressants, anti-seizure medications, antipsychotic medications, steroids এবং beta blockers) স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • যেকোনো বয়সে স্থূলতা দেখা দিতে পারে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দেহে হরমোনের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে এবং পরিশ্রমের পরিমাণ কমে যায়। তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্থূলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণেও স্থূলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার (যেমনঃ arthritis) জন্যও স্থূলতা দেখা দিতে পারে।

এগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক বিষয় নিশ্চিতভাবে স্থূলতার ঝুকিঁ বৃদ্ধি করে না । স্থূলতার ক্ষেত্রে যেসকল ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় সক্রিয়ভাবে কাজ করে সেগুলো হলো- খাদ্যাভাস, আচরণগত বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক পরিশ্রম।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতি: শ্বেতাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: এটি একটি শারীরিক সমস্যা, যা জিনগত বা পরিবেশগত সমস্যার কারণে হতে পারে।

উত্তর: অতিরিক্ত মেদ কমানোর জন্য অবশ্যই প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। দুপুরের বা রাতের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। সোডা, জুস, দুগ্ধজাতীয় খাবার, অ্যালকহোল এবং ভাজাপোড়া কম খেতে হবে। একই সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি, সবুজ সবজি, টক আচার ও আপেল খেতে হবে। কেননা এসব খাবারে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম থাকে এবং এগুলি গ্রহণের মাধ্যমে খুব সহজেই ক্ষুধা নিবারণ করা যায়।

উত্তর: একটি শিশুর পরবর্তীতে স্থূলতা দেখা দেওয়ার সম্ভবনা কতটুকু বা এ ক্ষেত্রে তার ঝুঁকির পরিমাণ কতটুকু তা তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এই তিনটি বিষয় হল শিশুর ওজন ও উচ্চতার মধ্যে ভারসাম্য আছে কি না, শিশুর ওজন কি হারে বাড়ছে এবং মা-বাবার স্থূলতার সমস্যা আছে কি না। এই তিনটি বিষয় বিবেচনা করে ডাক্তার শিশুর মধ্যে এ সমস্যা শনাক্ত করে থাকেন।

হেলথ টিপস্‌

ওজন কমানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে, যেমন:

  • নিজের সমস্যা সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে হবে।
  • একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে।
  • ট্রিটমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী চলতে হবে।
  • নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ খেতে হবে।
  • ওজন কতটুকু কমছে বা বাড়ছে তা নিয়মিত লিখে রাখতে হবে।
  • যেসকল খাবারে ওজন বাড়তে পারে সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

মেদবৃদ্ধির ঝুঁকি থাকলে বা ওজন বেড়ে গেলে খুব সহজেই এ সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। অতিরিক্ত ওজন কমানো ও মেদবৃদ্ধি প্রতিরোধ এ দুটো কাজ একই সাথে করা সম্ভব। এক্ষেত্রে যেসব নিয়ম মেনে চলতে হবে সেগুলি হল:

  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
  • যেসকল কারণে মানুষ অতিরিক্ত খায় (যেমন- কোনো অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে গেলে) সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।