অ্যাপেন্ডিসাইটিস (Appendicitis)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

অ্যাপেন্ডিসাইটিস হল এ্যাপেন্ডিক্সের প্রদাহ। একে জরুরী অবস্থা হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই লেপারোটমি (Laparotomy) বা লেপারোস্কপি (Laparoscopy) অপারেশনের মাধ্যমে এ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করা হয়। এর চিকিৎসা না করা হলে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। কারণ এর ফলে  পেরিটোনিয়ামের (উদরের আবরকঝিল্লী) পচন ধরতে পারে। রেজিনাল্ড ফিটজ প্রথম ১৮৮৬ সালে তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী এ্যাপেন্ডিসাইটিসের বর্ণনা দিয়েছেন। এটি বিশ্বব্যাপী তীব্র পেটের ব্যাথার সবচেয়ে পরিচিত কারণ হিসাবে স্বীকৃত। সঠিকভাবে নির্ণিত কম তীব্রতার এ্যাপেন্ডিসাইটিস "এ্যাপেন্ডিসাইটিস রাম্বলিং" হিসাবে পরিচিত।

কারণ

এ্যাপেন্ডিক্সের আস্তরণের ভেতরের প্রতিবন্ধকতাই এ্যাপেন্ডিসাইটিস এর সম্ভাব্য কারণ। ব্যাকটেরিয়ার দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে এ্যাপেন্ডিক্স ফুলে ওঠে ও এতে পুঁজ জমা হয়। যদি অবিলম্বে চিকিৎসা না করা হয় তবে এ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যেতে পারে।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

ampicillin cefepime hydrochloride
ciprofloxacin gentamicin
levofloxacin hemihydrate meropenem trihydrate
metronidazole morphine sulphate
moxifloxacin

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
ইউ-এস-জি কে-ইউ-বি (USG KUB)
ইউ-এস-জি ডব্লিউ/এ (USG W/A)
ইউরিন এনালাইসিস (Urinalysis)
অ্যাপেনডেকটমি (Appendectomy)
ই-এস-আর (এরাইথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশন রেট) (ESR, Erythrocyte Sedimentation Rate)
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ই-সি-জি) (Electrocardiogram, ECG)
এক্স-রে, চেস্ট পি-এ ভিউ (X-ray, Chest P/A view)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যে যে কারণে এ্যাপেন্ডিসাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়:

  • বয়স: এ্যাপেন্ডিসাইটিস সব বয়সের মধ্যে হতে পারে কিন্তু যাদের বয়স ১১ এবং ২০ বছরের মধ্যে তাদের এই রোগ বেশি হয়।
  • লিঙ্গ: মহিলাদের তূলনায় পুরুষদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ১৪.১০ গুণ  বেশি।  সিস্টিক ফাইব্রোসিসে ভুগছে এরকম ছেলে শিশুর এ্যাপেন্ডিসাইটিস  হওয়ার  ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • খাবার: যারা  কম ফাইবার এবং প্রক্রিয়াজাত শর্করা বা রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার বেশী খান তাদের এ্যাপেন্ডিসাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি ।
  • জন্ম ও বংশগত: এ্যাপেন্ডিক্সের একটি বিশেষ অবস্থা যা জন্ম ও বংশগত কারণেও হয়ে থাকে । যদি পরিবারের কারো এই রোগটি থাকে তবে শিশুর এই রোগ হতে পারে।
  • ঋতু পরিবর্তন: এ্যাপেন্ডিসাইটিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শীতকালে - অক্টোবর থেকে মে মাসের মধ্যে হয়ে থাকে।
  • সংক্রমণ: Gastrointestinal infections যেমন Amebiasis, Bacterial Gastroenteritis, Mumps, Coxsackievirus B এবং Adenovirus এর ইনফেকশন এ্যাপেন্ডিসাইটিস হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতি: কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ, হিস্প্যানিক এবং অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: যদি কারো সন্দেহ হয় যে তার এ্যাপেন্ডিসাইটিস আছে তাহলে তার অবিলম্বে জরুরী চিকিৎসা নিতে হবে। যদি চিকিৎসা না করানো হয়, তবে এ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যেতে পারে এবং ব্যাকটেরিয়া পেটের গহ্বরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে পুরো পেট জুড়ে ইনফেকশন ছড়িয়ে পরতে পারে যা পেরিটোনাইটিস নামে পরিচিত। এ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে কোনো ব্যথানাশক ঔষধ, এ্যান্টাসিডস, ল্যাক্সাটিভ (Laxatives) বা গরম প্যাড ব্যবহার করা উচিৎ নয়, কারণ এর ফলে এ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যেতে পারে।

উত্তর: এ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের Appendectomy (যে সার্জারিতে এপেনডিক্সে কেটে বাদ দেয়া হয়) করতে হতে পারে। অপারেশনের পর ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী রোগীর তত্ত্বাবধা্নে থাকেন এবং চিকিৎসা পরবর্তী যত্ন নিয়ে থাকেন।

উত্তর: রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে কি ঔষধ এবং কি পরিমাণে নিতে হবে তা নিশ্চিতভাবে জানতে হবে। কিছু ব্যথার ঔষধ বা পেইনকিলার যেমন এসপিরিন রোগীর রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করতে হবে কোন ঔষধ রোগীর জন্য নিরাপদ। ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য অপারেশনের স্থান পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। কিভাবে পরিষ্কার করতে হবে তা ডাক্তার বলে দিবেন।  নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করতে হবে কিন্তু শ্রমসাধ্য ব্যায়াম এড়িয়ে চলতে হবে।

হেলথ টিপস্‌

Appendectomy এর পর সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হতে কয়েক সপ্তাহ লাগে। নিম্নলিখিত পন্থা অবলম্বন করে এ্যাপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন পরবর্তী ঝুঁকি কিছুটা কমানো যায়ঃ

  • কায়িক পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে হবে। যদি অপারেশন ল্যাপ্রোস্কোপির মাধ্যমে করা হয়ে থাকে, তাহলে তিন থেকে পাঁচ দিনের জন্য সকল কার্যকলাপ সীমিত রাখতে হবে। যদি Open Appendectomy হয়, তাহলে ১০ থেকে ১৪ দিনের জন্য সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। কার্যকলাপের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম পুনরায় শুরু কবে করা যাবে তা ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করতে হবে।
  • কাশির সময় তলপেটে চাপ দিতে হবে। কাশি, হাসি বা নড়াচড়া করার আগে তলপেটের উপর একটি বালিশ রাখতে হবে এবং চাপ প্রয়োগ করতে হবে যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
  • পেইনকিলার খাওয়া সত্ত্বেও ব্যাথা না কমলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • নিজেকে সুস্থ মনে হলে ধীরে ধীরে দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে হবে।
  • ক্লান্ত বোধ করলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। যেহেতু রোগীর শরীর সুস্থ হচ্ছে সেহেতু স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী ঘুম বোধ হতে পারে।
  • ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে কাজে ফিরতে হবে। রোগী নিজেকে সুস্থ মনে করলেই কাজে ফিরে আসতে পারেন। শিশুরা অপারেশনের এক সপ্তাহ পর সাধারণত স্কুলে যেতে পারে। শ্রমসাধ্য কাজকর্ম যেমন জিম ক্লাস বা খেলাধুলা পুনরায় শুরু করতে দুই থেকে চার সপ্তাহ অপেক্ষা করা উচিৎ।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ রুখসানা পারভীন

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সার্জারী)

ডাঃ মোঃ শাহ্‌দাত হোসেন শেখ

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery), কোলোরেক্টাল সার্জারী ( Colorectal Surgery)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সার্জারী), এমআরসিএস(এডিনবার্গ)

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আতিকুর রহমান

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery)

এম বি বি এস, এফ সি পি এস, এফ ডব্লিউ এইচ ও (অস্ট্রেলিয়া)

অধ্যাপক ডাঃ শুকরিয়া নায়ক

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery)

এমবিবিএস, এমএস, এফআরসিএস

মেজর ডাঃ মোঃ শফিউল আলম

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery)

এমবিবিএস(বিডি), এমসিপিএস, এফসিপিএস(সার্জারী), ইএমএসএসবি(ইউএসএ)

ডাঃ মোঃ আসাদুজ্জামান

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery)

এমবিবিএস, এমএস(সার্জারী)

ডাঃ মোঃ আসাদুজ্জামান

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery)

এমবিবিএস, এফপিএস (সার্জারী), এম.এস ইউরো(থিসিস)

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ইব্রাহিম সিদ্দীক

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery)

এমবিবিএস, , এফসিপিএস (এস) , এফ আর সি এস (এডিন) ডিপ্লোমা ইন ল্যাপরোস্কপিক সার্জারী (ফ্রান