ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস (Diabetic ketoacidosis)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস হল ডায়াবেটিসের একটি গুরুতর অবস্থা বা ধরন, যা রক্তে কিটোন (Ketones) নামক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে দেখা দেয়। এই অবস্থায় রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

আমাদের শরীরে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় না তখন ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস দেখা দেয়। গ্লুকোজ হলো পেশী এবং অন্যান্য টিস্যুর শক্তির প্রধান উৎস। সাধারণত ইনসুলিন এই গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। ইনসুলিনের অভাব দেখা দিলে শক্তির অন্য উৎস হিসেবে ফ্যাট বা চর্বি থেকে আমাদের শরীর এই শক্তি সঞ্চয় করে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের রক্তে এক ধরনের বিষাক্ত এ্যাসিড তৈরী হয়, যা কিটোনস (Ketones) নামে পরিচিত। এর চিকিৎসা করা না হলে পরবর্তীতে ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস দেখা দেয়।

যদি কারো ডায়াবেটিস হয়ে থাকে বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে তবে অবশ্যই ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিসের লক্ষণগুলো জানতে হবে এবং একই সাথে চিকিৎসার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

কারণ

গ্লুকোজ হলো কোষের শক্তির প্রধান উৎস, যা আমাদের দেহে পেশী এবং অন্যান্য টিস্যুর জন্য শক্তি সরবরাহ করে থাকে। সাধারণত ইনসুলিনের সাহায্যে কোষে গ্লুকোজ প্রবেশ করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন ছাড়া আমাদের শরীর শক্তি উৎপাদনের জন্য সঠিকভাবে গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না। এ অবস্থায় শক্তির অন্য উৎস হিসেবে ফ্যাট বা চর্বি থেকে আমাদের শরীর এই শক্তি সঞ্চয় করে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের রক্তে এক ধরনের বিষাক্ত এ্যাসিড তৈরী হয় যা কিটোন (Ketones) নামে পরিচিত। অতিরিক্ত কিটোন আমাদের রক্তে জমতে থাকে এবং অবশেষে তা মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়।

ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস সাধারণত নিম্নের কারণগুলো দ্বারা ত্বরান্বিত হয়-

  • অসুস্থতা: কোনো ইনফেকশন বা অন্যান্য অসুস্থার জন্য আমাদের দেহে নির্দিষ্ট কিছু হরমোন যেমন এন্ড্রেনালিন বা কর্টিসলের পরিমাণ বেড়ে যায় যা ইনসুলিনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যার ফলে কখনও কখনও ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ত্বরাণ্বিত হয়। নিউমোনিয়া এবং মূত্রনালীর ইনফেকশনের (Urinary Tract Infections) মূল কারণ।
  • ইনসুলিন থেরাপিতে সমস্যা দেখা দেওয়া: পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন না নিলে বা ইনসুলিন থেরাপিতে সমস্যা দেখা দিলে আমাদের শরীরে ইনসুলিনের ঘটতি দেখা দেয়। যার ফলে ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস দেখা দিতে পারে।

অন্যান্য যেসকল কারণে ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ত্বরান্বিত হয় তা হল-

  • মানসিক চাপ।
  • শারীরিক বা মানসিক আঘাত।
  • তীব্র জ্বর।
  • অপারেশন।
  • হার্ট অ্যাটাক।

লক্ষণ

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখতে পানঃ

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের ঔষধগুলো দিয়ে থাকেনঃ

insulin potassium chloride
sodium bicarbonate insulin aspart
insulin glargine insulin detemir
insulin lispro insulin regular

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের টেস্টগুলো দিয়ে থাকেনঃ

আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাসেস (এ-বি-জি-এস) (Arterial blood gases (ABGs))
ব্লাড গ্লুকোজ, র‍্যান্ডম (Blood Glucose, Random)
ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
কিডনী ফাংশন টেস্ট (Kidney function test)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
ইউরিন কালচার (Urine Culture)
সিটি স্ক্যান অফ হেড (CT scan of head)
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ই-সি-জি) (Electrocardiogram, ECG)
ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এম-আর-আই) (Magnetic resonance imaging (MRI))
এক্স-রে, চেস্ট পি-এ ভিউ (X-ray, Chest P/A view)
ইউরিন এনালাইসিস (Urinalysis)
সিরাম এমাইলেজ (Serum amylase)
কিটোন বডি, সিরাম (Ketone body, serum)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত কারণে ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়-

  • টাইপ-ওয়ান (type-1) ডায়াবেটিস থাকা।
  • বয়স ১৯ বছরের কম হওয়া।
  • নিয়মিতভাবে ইনসুলিন না নেওয়া।

এছাড়াও টাইপ-টু (type-2) ডায়াবেটিস থাকলেও ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস হতে পারে। তবে এটি খুবই বিরল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস হতে পারে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম লক্ষণ।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতিঃ কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ হ্যাঁ। কিটোনসের কারণেই কিটোএ্যাসিডোসিস দেখা দেয়। এর উপস্থিতি প্রস্রাবের দেখা যায়।
উত্তরঃ এর জন্য অবশ্যই কিছু টেস্ট করতে হবে। টাইপ-ওয়ান (Type 1) এবং টাইপ-টু (Type 2) এই দুই প্রকারের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস হতে পারে। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো অসুস্থবোধ করা, বমি হওয়া এবং পানিশূন্যতা দেখা দেওয়া। এই রোগ খুব সহজে নির্ণয় করা যায়।

উত্তরঃ হ্যাঁ। এই কারণেই ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হয়। টাইপ-ওয়ান (Type 1) ডায়াবেটিসের সাথে ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস দেখা দিলে এক্ষেত্রে ইনসুলিনের অভাবে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধে নিম্নলিখিত টিপস্‌গুলো কাজে লাগতে পারে-

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে এবং প্রয়োজনমত ব্যায়াম করতে হবে। নির্দেশানুযায়ী ঔষধ ও ইনসুলিন নিতে হবে।
  • নিয়মিত ব্লাড সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কি পরিমাণ ইনসুলিন দরকার তা ঠিক করতে হবে।
  • কিটোনসের পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে এবং এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ডায়াবেটিক সংক্রান্ত সমস্যাগুলো খুবি জটিল হয়। তাই এক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের যত্ন নিতে হবে এবং যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

প্রফেসর ডাঃ ফেরদৌস আরা জে জানান

মেডিসিন ( Medicine), ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস, এমডি(ইউএসএ), এফআইবিএ(ইংল্যান্ড), এফসিপিএস(মেডিসিন), এফআরসিপি (এডিন), এফএসিপি(ইউএসএ)

ডাঃ আবু রেজা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান

ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস, এমআরসিপি (ইউকে)

ডাঃ মোঃ ফজলে নূর

এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজম ( হরমোন) ( Endocrinology & Metabolism)

এমবিবিএস(ঢাকা), ডিইএম(ডিইউ)

ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম(সোহান)

মেডিসিন ( Medicine), এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজম ( হরমোন) ( Endocrinology & Metabolism)

এমবিবিএস, ডিইএম, এমএসিই(ইউএসএ), এমডি(এন্ডক্রাইনোলজি পার্ট-২)

ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম

ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য), এমডি ইন্টারনাল মেডিসিন

ডাঃ মোঃ মাসুদুল হাসান

ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস , এমডি (ইন্টারনাল মেডিসিন) , এফসিপিএস (মেডিসিন), এফসিপিএস (রিউম্যাটোলজি)

ডাঃ মাহবুব ইফতেখার

এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজম ( হরমোন) ( Endocrinology & Metabolism)

এমবিবিএস (এসএমসি ঢাকা), এমএসসিইউ(ইউএসএ), ডিইএম

ডাঃ হাসান ইমাম

ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine), ডায়াবেটোলজিষ্ট ( Diabetologist)

এমবিবিএস, সিসিডি(বারডেম), এমডি(ইন্টারনাল মেডিসিন)