অস্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস (Eating disorder)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

যখন কোনো ব্যক্তি দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের তুলনায় নিজের খাদ্যাভাস ও ওজন নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকে ও এর জন্য অত্যাধিক সময় ব্যয় করে তখন এই অবস্থাকে অস্বাভাবিক খাদ্যাভাস বা Eating Disorder বলে। প্রধানত তিন ধরণের অস্বাভাবিক খাদ্যাভাস দেখা যায়। যেমন- i. এনোরেক্সিয়া নারভোসা / Anorexia Nervosa (ক্ষুধামন্দা), ii. বুলিমিয়া নারভোসা / Bulimia Nervosa (যে অবস্থায় ব্যক্তি, সাধারণত গোপনে, অত্যাধিক পরিমাণে খাবার খেয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে অতিরিক্ত ক্যালরি ও মেদ দূর করার জন্য বমি করে থাকে, উপবাস করে বা অধিক ব্যায়াম করে থাকে) এবং iii. বিঞ্জ / Binge-Eating Eisorder (যে অবস্থায় ব্যক্তি অত্যাধিক পরিমাণে খেয়ে থাকে কিন্তু ওজন বা মেদবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত থাকে না)। এর ফলে গুরুতর শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং একই সাথে মৃত্যুও হতে পারে। মেয়েদের এই সমস্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে। তবে Binge-Eating Disorder এর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা দিতে পারে কেননা নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে এ রোগের সমান ঝুঁকি রয়েছে। সাধারণত সাইকোথেরাপি, পুষ্টিসম্পর্কিত শিক্ষাদান, পারিবারিকভাবে পরামর্শ দান (Family counseling) ও ঔষধের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়।

কারণ

অস্বাভাবিক খাদ্যাভাসের সঠিক কারণ এখনও অজানা। কিছু মানসিক সমস্যার কারণেও এ রোগ হতে পারে। এ রোগের সম্ভাব্য কারণগুলো হলঃ

  • জিন এবং বংশগত কারণ: জিনগত কারণে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মধ্যে অস্বাভাবিক খাদ্যাভাস দেখা দেয়। জিনগত কারণে ভাইবোনদের মধ্যে বা মা-বাবার থেকে সন্তানের এই রোগ হতে পারে। এছাড়াও মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামক  এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান উৎপন্ন হয় (স্বাভাবিক ভাবেই শরীরে তৈরী হয়) যা খাদ্যাভাসকে প্রভাবিত করে থাকে।
  • মানসিক কারণ: মানসিক যেকোনো সমস্যা যেমন আত্মবিশ্বাসের অভাব, খুঁতখুঁতে স্বভাব, অত্যাধিক আবেগপ্রবন হয়ে পড়া ও সুসম্পর্কের অভাব ইত্যাদির কারণে খাদ্যাভাসে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।
  • সামাজিক কারণঃ মিডিয়া ও পাশ্চত্য সংস্কৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই, বিশেষ করে তরুণীরা, অতিরিক্ত সৌন্দর্য্ সচেতন হয়ে পড়ে। যার ফলে তাদের মধ্যে অস্বাভিক খাদ্যাভাস দেখা দেয়।

লক্ষণ

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখতে পানঃ

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের ঔষধগুলো দিয়ে থাকেনঃ

baclofen bupropion hydrochloride
ergocalciferol (d2) fluoxetine hydrochloride
imipramine hydrochloride lithium carbonate
ondansetron hydrochloride potassium chloride
sertraline hydrochloride

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের টেস্টগুলো দিয়ে থাকেনঃ

প্রেগনেন্সি টেস্ট, ইউরিন (Pregnancy test, Urine)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
ইউরিন এনালাইসিস (Urinalysis)
ইউরিন ড্রাগ স্ক্রিনিং (Urine drug screen)
কগনিটিভ বিহেবিয়ার থেরাপী (Cognitive Behavior Therapy, CBT)
সিরাম এমাইলেজ (Serum amylase)
মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলিং (Mental health counseling)
ডিপ্রেশন স্ক্রিনিং (Depression screen)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

বিভিন্ন কারণে এ রোগের ঝুঁকির পরিমাণ বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো হলঃ

  • অল্পবয়স্ক ও তরুণীদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি।
  • যদিও এই সমস্যা যেকোনো বয়সে দেখা দিতে পারে তবে এই অস্বাভাবিকতা সাধারণত বিশ বছর বয়সের দিকে বেশি হয়ে থাকে।
  • ভাইবোনদের মধ্যে বা মা-বাবার থেকে সন্তানের এই রোগ হতে পারে।
  • হতাশা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি হয়ে থাকে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রনের জন্য ও দৈহিক সৌন্দর্য রক্ষার জন্য অনেকেই ডায়েট (Diet) করে থাকে যার ফলে খাদ্যাভাসে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।
  • যেকোনো পরিবর্তন যেমন নতুন কোনো জায়গায় যাওয়া, নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়া বা পুরানো সম্পর্ক ভেঙ্গের যাওয়ার কারণে মানসিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে এবং এর ফলে খাদ্যাভাসে অস্বাভাবিকতা দেখ দিতে পারে।
  • ক্রীড়াবিদ বা যারা মিডিয়ার সাথে যুক্ত টিভি অভিনেতা- অভিনেত্রী বা নৃত্যশিল্পীদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২ গুণ কম।

জাতিঃ কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ৩ গুণ কম। হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ মেয়েদের এই সমস্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে। যমজদের মধ্যে একজনের এই সমস্যা থাকলে অন্যজনেরও এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে এটিকে জিনগত কারণ বলা যাবে না, বরং এটি এই রোগের একটি সামাজিক কারণ।

উত্তরঃ এটি একটি জটিল ও গুরুতর সমস্যা। এটি জিনগত কারণে বা যে কোন শারীরিক সমস্যা বা সামাজিক যেকোন কারণে হতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

খাদ্যাভাসে অস্বাভাবিকতা প্রতিরোধের জন্য নিম্নের টিপস্‌গুলো কাজে লাগতে পারেঃ

  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
  • সঠিক মাত্রার ভিটামিন ও ঔষদের জন্য এবং বয়স ও শরীর উপযোগী ব্যায়াম সম্পর্কে জানতে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • পরিবার ও অন্যান্য বন্ধুদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরানো উচিত নয়।
  • সঠিক ডায়েট সম্পর্কে জানতে  হবে।
  • বারবার আয়না দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে হবে।
  • সবসময় সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে এবং শিশুদের মধ্যেও এ ব্যাপারে আগ্রহ গড়ে তুলতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ এ এইচ এম মঞ্জুরুল হক

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

ডাঃ মোঃ ফজলুল বারী মিঠু

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস , এমসিপিএস,, এমডি (কোর্স)

ক্যাপ্টেন ডাঃ এ এস এম আনিসুজ্জামান

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস (ঢাকা), ডি-সাইক, এফ-সাইক (ভিয়েনা)

অধ্যাপক মোঃ ওয়াজিজুল আলম চৌধুরী

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এমএএপি (ইউএসএ), এফসিপিএস

ডাঃ শোয়েবুর রেজা চৌধুরী

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস,, এমসিপিএস,, এমফিল

ডাঃ মোঃ আসাদুজ্জামান

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, ডিটিএম(ডাবলিন), ডিপিপি(মনোরোগ), লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়

ডাঃ মোঃ জোবায়ের মিয়া

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, , এমফিল(সাইকিয়াট্রি)

ডাঃ সুরজিত কুমার তালুকদার

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সাইক্রিয়াট্রি)