পিত্তথলির পাথর (Gallstone)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

পিত্তথলি বা গলব্লাডার পেটের ডানদিকে ও লিভারের ঠিক নিচে অবস্থিত। এটি দেখতে নাশপাতির ন্যায় ও আকারে ছোট হয়ে থাকে। পিত্তথলিতে বাইল নামক এক ধরনের ফ্লুইড বা তরল থাকে যা ক্ষুদ্রান্ত্রে নিঃসৃত হয়। পিত্তথলিতে পাচক রস জমে শক্ত আকার ধারণ করলে তাকে গলস্টোন বা পিত্তথলির পাথর বলে।  এই পাথর আকারে বালুকণার সমান ছোট বা গলফ বলের সমান বড়োও হতে পারে। পিত্তথলিতে এক বা একাধিক পাথর হতে পারে। এই অবস্থায় সাধারণত পাথর অপসারণের জন্য সার্জারির প্রয়োজন হয়। তবে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার পরও কোনো রকম লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা না দিলে এক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সমস্যা বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমনঃ কলেলিথিয়াসিস (Cholelithiasis), গল-স্টোন ডিজিজ (Gallstone Disease) এবং ক্যালকুলাস অব গল ব্ল্যাডার (Calculus Of Gallbladder)।

পিত্তথলির পাথর দুই প্রকার:

  • কোলেস্টেরল গল-স্টোন (Cholesterol gallstones): পিত্তথলিতে এই ধরনের পাথর বেশি হয়ে থাকে। এর বর্ণ হলুদ। এটি কোলেস্টেরল ও অন্যান্য উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।
  • পিগমেন্ট গল-স্টোন (Pigment gallstones): বাইলে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে পিত্তথলিতে গাঢ় বাদামী বা কালো বর্ণের পাথর সৃষ্টি হয়।

কারণ

পিত্তথলির পাথর হওয়ার সুনির্দিষ্টি কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে নিম্নলিখিত কারনে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে বলে চিকিৎসকেরা মনে করেনঃ

  • বাইলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলেঃ সাধারণত লিভার হতে নিঃসৃত কোলেস্টেরল সম্পূর্ণভাবে পরিশোষণের জন্য বাইলে পর্যাপ্ত পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থ উপস্থিত থাকে। কিন্তু স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক পরিমাণ কোলেস্টেরল নিঃসৃত হলে তা পরিশোষিত হতে পারে না এবং এই অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে পাথরে পরিণত হয়।
  • বাইলে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলেঃ রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙ্গে বিলিরুবিন উৎপন্ন হয়। লিভার সিরোসিস, বিলিয়ারী ট্রাক্ট ইনফেকশন অথবা রক্তের অন্যান্য ত্রুটি দেখা দিলে দেহে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত বিলিরুবিন ধীরে ধীরে পাথরে পরিণত হয়।
  • পিত্তথলি সম্পূর্ণরূপে খালি না হলেঃ পিত্তথলি সম্পূর্ণরূপে খালি না হলে বাইল জমাট বেধে পাথর সৃষ্টি হয়।

লক্ষণ

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষনগুলো দেখতে পানঃ

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলো দিয়ে থাকেনঃ

ursodeoxycholic acid ursodiol

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলো দিয়ে থাকেনঃ

ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
এন্ডোস্কপিক রেট্রোগ্রেড কোলানজিও-প্যানক্রিয়াটোগ্রাফি (ই-আর-সি-পি) (Endoscopic retrograde cholangio-pancreatography (ERCP))
সিটি স্ক্যান অ্যাবডোমেন (CT scan abdomen)
ইউ-এস-জি ডব্লিউ/এ (USG W/A)
ইউরিন এনালাইসিস (Urinalysis)
প্লেইন এক্স-রে (Plain x-ray)
কোলেসিস্টেক্টমি এন্ড কমন ডাক্ট এক্সপ্লোরেশন (Cholecystectomy and common duct exploration)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যে যে কারনে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়ঃ

  • লিঙ্গ(নারী)
  • বয়স ৬০-এর বেশি হওয়া।
  • স্থূলতা।
  • গর্ভধারণ।
  • ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে।
  • নিয়মিত অতিরিক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার খাওয়া।
  • কম আঁশযুক্ত খাদ্যগ্রহণ।
  • পরিবারের অন্য কোন সদস্যের একই সমস্যা থাকলে।
  • দ্রুত ওজন হ্রাস পাওয়া।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ এবং
  • এস্ট্রোজেন আছে এমন ঔষধের ব্যবহার।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিঃ কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ, হিস্প্যানিক এবং অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ পিত্তথলিতে পাথর হতে কয়েক মাস হতে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগে।

উত্তরঃ এই রোগের সাধারণ লক্ষণ হলো খাওয়ার পরে পেটের ডানে, উপরে বা বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া। তবে অ্যাকিউট ইনফেকশন বা কলিস্টাইটিসের ক্ষেত্রে রোগীর জ্বর আসতে পারে এবং হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে। তলপেটের ডানদিকে উপরের অংশও তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।

উত্তরঃ অপারেশন করালে এই রোগ সারানো সম্ভব।

হেলথ টিপস্‌

নিম্নলিখিত উপায়ে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভবঃ

  • নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া দাওয়া করতে হবে।
  • যদি আপনি ওজন কমাতে চান তবে ধীরে ধীরে চেষ্টা করুন। ওজন খুব তাড়াতাড়ি কমে গেলে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে ১ বা ২ পাউন্ডের (০.৫-১ কিলোগ্রাম) এর বেশি কমানো যাবে না।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অতিরিক্ত মেদ ও স্থূলতার কারণে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

অধ্যাপক ডাঃ সাব্বির আহম্মেদ খান

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery), ইউরোলজি ( মূত্রতন্ত্রের সার্জারী) ( Urology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সার্জারী), এমএস(ইউরোলজী)

অধ্যাপক ডাঃ নিশাত বেগম

কোলোরেক্টাল সার্জারী ( Colorectal Surgery), জেনারেল সার্জারী ( General Surgery)

এমবিবিএস(ঢাকা), এফসিপিএস(সার্জারী)

লেঃ কর্ণেল ডাঃ মোঃ আব্দুল গনি (অবঃ)

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery)

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ মোঃ ছাইদুর রহমান (অবঃ)

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology), মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস,(ডিইউ), এফসিপিএস(মেডিসিন), ওজেটি (গ্যাস্ট্রো), এফএসিপি, এফআরসিপি

ডাঃ মোঃ ইকবাল হোসেন তালুকদার

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery)

এমবিবিএস, , এফসিপিএস(সার্জারী)

অধ্যাপক ডাঃ নিশাত বেগম

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery)

এমবিবিএস(ঢাকা), , এফসিপিএস(সার্জারী), , ফেলোশিপ ইন ব্রেষ্ট ক্যান্সার(ইন্ডিয়া)

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডাঃ শেখ বাহার হোসেন (অবঃ)

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এফআরসিপি, এফআরসিপি(গ্লাসগো), এফএসিপি(ইউএসএ)

ডাঃ ফাওয়াজ হোসাইন(শুভ)

হেপাটোলজি ( লিভার) ( Hepatology)

এমবিবিএস(ডিএমসি), এমডি(হেপাটোলজী)