গ্যাস্ট্রোডিওডেনাল আলসার (Gastroduodenal ulcer)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

এই রোগ পি-ইউ-ডি (PUD) এবং পেপটিক আলসার (peptic ulcer) ডিজিজ নামেও পরিচিত।

পেপটিক আলসার পাকস্থলী ও পরিপাক নালীর সবচেয়ে পরিচিত রোগ। রোগটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। পরিপাক নালী বা পাকস্থলীর ভিতরের আবরণের (mucosa) ক্ষত বড় হয়ে আলসার সৃষ্টি হয়। ৭০-৯০% আলসার পাকস্থলীর অম্লীয় পরিবেশে অবস্থিত স্ক্রু-এর ন্যায় প্যাঁচানো (helical shaped) হেলিকোব্যাক্টর পাইলরি (helicobecter pylori) নামক ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। তবে এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের মাত্র ৪০% ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। আলসার অ্যাস্পিরিন, আইবুপ্রোফেন এবং অন্যান্য এনএসএআইডিস(NSAIDS) এর মত ঔষধ সেবনের কারণেও হতে পারে।

পেপটিক আলসারের প্রকারভেদ:

  • গ্যাস্ট্রিক আলসার পাকস্থলীর অভ্যন্তরে হয়ে থাকে।
  • খাদ্য নালীর আলসার (ইসোফেজিয়াল আলসার) গলা থেকে পাকস্থলীতে খাদ্য বহনকারী ফাঁপা নালীর মধ্যে হয়ে থাকে।
  • ডিওডেনাল আলসার ক্ষুদ্রান্ত্রের (ডিওডেনাম) উপরিভাগে হয়ে থাকে।

সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে, মসলাযুক্ত খাবার এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এমন কোনো কাজ করলে পেপটিক আলসার হতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে এই আলসার ব্যাক্টেরিয়াঘটিত ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে, কোনো মানসিক চাপ অথবা খাদ্যাভাস এর জন্য দায়ী নয়।

কারণ

পরিপাকতন্ত্রে হজম ক্রিয়ার সহায়ক এ্সিড যখন খাদ্যনালী, পাকস্থলী এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের ভেতরের দেোয়ালের স্তর বা গাত্র নষ্ট করে দেয় তখন পেপটিক আলসার হয়ে থাকে। এই এসিডের কারণে যন্ত্রণাদায়ক  রক্ত ক্ষরণ হতে পারে।

মানুষের অন্ত্র মিউকাস স্তর দ্বারা আবৃত থাকে যা আমাদেরকে এসিড থেকে রক্ষা করে। কিন্তু যদি কখনো এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় অথবা মিউকাসের পরিমাণ কমে যায় তাহলে আলসার বৃদ্ধি পেতে পারে।

সাধারণ আলসারের প্রকারভেদগুলো হলোঃ

হেলিকোব্যাক্টার পাইলরি নামক ব্যাকটেরিয়া মিউকাস স্তরে অবস্থান করে। এই স্তর পাকস্থলি এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের টিস্যুকে আবৃত করে রাখে এবং সুরক্ষা প্রদান করে।

হেলিকোব্যাক্টার পাইলরি কিভাবে বিস্তার লাভ করে এটা এখনও পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। এটা এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে সংস্পর্শের মাধ্যমে যেমন চুম্বন এবং অথবা খাবার এবং পানির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।

নিয়মিত ব্যথা উপশমের ঔষধ সেবনঃ যখন তখন ব্যথার ঔষধ সেবন পাকস্থলি এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের গাত্রে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। এ সকল ঔষধের মধ্যে অ্যাস্পিরিন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রক্সেন, কিটোপ্রফেন অন্যতম। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যারা এ সকল ঔষধ নিয়মিত সেবন করেন অথবা যারা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা নিয়ে থাকেন তাদের পেপটিক আলসার সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।অন্যান্য ঔষধ সমূহঃ এছাড়াও অস্টিওপরোসিস রোগের চিকিৎসার জন্য বিসফসফনেট এবং পটাশিয়ামের সম্পূরক কোনো ঔষধ সেবনেও এই রোগের অন্যতম কারণ।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্মলিখিত লক্ষণগুলো দেখতে পানঃ

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলো দিয়ে থাকেনঃ

amoxycillin clarithromycin
esomeprazole famotidine
lansoprazole metronidazole
misoprostol omeprazole
rabeprazole ranitidine
sucralfate tetracycline
bismuth subsalicylate

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলো দিয়ে থাকেনঃ

লিভার ফাংশন টেস্ট (Liver function tests)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
এন্ডোস্কপি ওফ আপার জি-আই (Endoscopy of Upper GI)
সিরাম এমাইলেজ (Serum amylase)
সিরাম লাইপেজ (Serum lipase)
ইউরিয়া ব্র্যাথ টেষ্ট (urea breath test)
গ্যাষ্ট্রিন লেভেল, সেরাম (Gastrin level, serum)
বায়োপসি (Biopsy)
সিক্রেটিন সিমুলেশন টেষ্ট (Secretin Stimulation Test)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যে সকল কারণে এই রোগের  ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারেঃ

  • হেলিকোব্যাক্টার পাইলরি আক্রান্ত ব্যক্তি ধূমপান করলে পেপটিক আলসারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
  • মদ/অ্যালকোহল পাকস্থলির মিউকাস স্তরে জ্বালাপোড়া ও ক্ষত সৃষ্টি করে এবং এসিডের পরমাণ বাড়িয়ে দেয়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

  • লিঙ্গঃ পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মধ্যেই এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।
  • জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ, হিস্পানিক এবং অন্যান্যদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরপক্ষে, কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ ইউরিএজ এনজাইম পাকস্থলির এসিডিক পরিবেশে হেলিকোব্যাক্টার পাইলরি ব্যাক্টেরিয়াকে সন্নিবেশ করে রাখতে গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যাক্টেরিয়ার উপরিতলে এবং সাইটোপ্লাজমে  এই এনজাইম  সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। এই ইউরিএজ ইউরিয়াকে ভেঙ্গে অ্যামোনিয়া এবং বাইকার্বনেট উৎপাদন করে। উৎপন্ন অ্যামোনিয়া পাকস্থলীর এসিডকে প্রশমিত করে ফেলে। এই প্রক্রিয়া হেলিকোব্যাক্টর পাইলরিকে একত্রিত রাখতে সহায়তা করলেও গ্যাস্ট্রিক এপিথেলিয়াল কোষের জন্য ক্ষতিকারক।

উত্তরঃ হেলিকোব্যাক্টার পাইলরি ইনফেকশনের ব্যাপকতা আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং সময়ের সাথে সম্পর্কিত। নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থা ইনফেকশনের প্রবণতা বৃদ্ধি করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ইনফেকশন  সাধারণত বেশি পরিলক্ষিত হয়। উন্নত দেশগুলোতে হেলিকোব্যাক্টার পাইলরি আক্রান্তদের অনুপাত কমে গেছে, এবং গ্য্যাস্ট্রিক , ডিওডেনাল আলসার ও পাকস্থলি আলসার  আজকাল কম পরিলক্ষিত হয়।

উত্তরঃ পাকস্থলি এবং ডিওডেনামের গায়ে ক্ষত অথবা রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্তের ফলে রক্ত ক্ষরণ  এবং পাকস্থলি নালীর গতিপথ বাধাগ্রস্থ হলে হেলিকোব্যাক্টর পাইলরি ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পাকস্থলিতে তীব্র, হঠাৎ এবং অসহনীয় ব্যথা অনুভব, রক্তযুক্ত বা কালো পায়খানা এবং রক্তবমি এ রোগেরপ্রধান লক্ষণ।

হেলথ টিপস্‌

নিম্নে কতগুলো পেপটিক আলসারের প্রতিরোধক টিপস্‌ দেওয়া হলোঃ

  • স্বাস্থ্যসম্যত খাদ্যতালিকা নির্বাচনঃ প্রচুর পরিমাণে ফলমূল,শাকসবজি এবং শস্য জাতীয় খাবার খেতে হবে। ভিটামিনযুক্ত খাবার না খেলে আলসার প্রতিরোধ করা অসম্ভব।
  • ব্যথা উপশমকারি ঔষধ পরিবর্তনঃ ব্যথা উপশমকারি ঔষধ নিয়মিত সেবনের প্রয়োজন হলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে অ্যাসিটামিনোফেন/প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে হবে।
  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণঃমানসিক চাপের কারণে পেপটিক আলসার আরও গুরুতর হতে পারে।মানসিক চাপের উৎসগুলো নির্ধারণ করে এর থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। কিছু চাপ এড়ানো সম্ভব না হলেও শারীর চর্চা,বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সময় কাটিয়ে অথবা বই পড়ার মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে।
  • ধূমপান বর্জনঃ ধূমপান পাকস্থলি গাত্র ক্ষতিগ্রস্ত করে পাকস্থলিকে আলসার সৃষ্টিতে উপযোগী করে তোলে, এমনকি পাকস্থলিতে এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
  • অ্যালকোহল/মদ্যপান নিয়ন্ত্রণ অথবা পরিহার করাঃ অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে পাকস্থলি এবং অন্ত্রে মিউকাস স্তরে জ্বালাপোড়া ও ক্ষত সৃষ্টি হয় যার ফলে প্রদাহ এবং রক্ত ক্ষরণ হতে পারে।

পেপটিক আলসারের ঝুঁকি কমাতে নিম্নলিখিত উপায়গুলো অনুসরণ করতে হবেঃ

  • ইনফেকশনের হাত থেক নিজেকে রক্ষা করাঃহেলিকোব্যাক্টর পাইলরি কিভাবে বিস্তার লাভ করে এটা এখনও পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি।তবে এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে শারীরিক সংস্পর্শ অথবা খাবার ও পানির মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বারবার সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং পুরোপুরিভাবে রান্না করা খাবার খাওয়ার  মাধ্যমে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরির মত ইনফেকশন থেকে নিজেকে রক্ষা করা যেতে পারে।

  • ব্যথা উপশমের ঔষধ সেবনে সতর্কতা অবলম্বনঃ ব্যথা উপশমকারি ঔষধ নিয়মিত সেবনে পেপটিক আলসারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে, এই ঝুঁকি এড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে যেমন খাবারের সাথে/ খাবারের পরে ঔষধ সেবন।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাসান মাসুদ

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, এমডি(গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি)

ডাঃ মোঃ সাইফ উদ্দৌলা

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস (ডিএমসি) , এমসিপিএস (মেডিসিন) , এমডি (গ্যাস্ট্রো)

ডাঃ রকিবুল ইসলাম

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এম বি বি এস, , এম ডি(গ্যাসট্রোলজি),, এফ সি পি এস (মেডিসিন)

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোতালেব চৌধুরী

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(গ্যাষ্ট্রোএন্টারোলজী)

ডাঃ মোঃ দেলোয়ার হোসাইন

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন), এফসিপিএস(গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি)

ডাঃ মোহাম্মদ কামরুল হাসান

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস মেডিসিন, এমডি(গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজী)

ডাঃ মোহাম্মদ মোতাহার হোসাইন

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিসিএইচ, এফসিপিএস (মেডিসিন)

ডাঃ মোঃ বদরুজ্জামান

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস (ঢাকা) ,, পিএইচডি (মেডিসিন উইথ গ্যাষ্টো –লিভার,জাপান )