হার্ট এ্যাটাক (Heart attack)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

রোগটি মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (Myocardial infarction), সংক্ষেপে এম-আই (MI) বা একিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (acute myocardial infarction), সংক্ষেপে এ-এম-আই (AMI) নামেও পরিচিত।

হৃৎপিণ্ডে সাময়িকভাবে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়াকে হার্ট অ্যাটাক বলে। করোনারি আর্টারি বা হৃৎপিণ্ডে রক্তসরবরাহকারী ধমনীতে প্রতিবন্ধকতা বা ব্লকেজ তৈরি হলে হৃৎপিণ্ডে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ধমনীর গায়ে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ফ্যাটি এসিড ও শ্বেত রক্ত কণিকা জমতে শুরু করলে (atherosclerotic plaque) এই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এবং হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে সেখানে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এই সমস্যার কারণে হৃৎপিণ্ডের পেশীর ক্ষতি হয়, এমনকি তা স্থায়ীভাবে নষ্টও হয়ে যাতে পারে।

কারণ

হৃৎপিণ্ডে রক্তসরবরাহকারী ধমনী বন্ধ হয়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। সময়ের সাথে সাথে হৃৎপিণ্ডে রক্তসরবরাহকারী ধমনীতে বিভিন্ন পদার্থ জমতে থাকে, যেগুলিকে প্লাক বলা হয়। এগুলির কারণে ধমনী সরু হয়ে যায়। এ সমস্যাকে বলা হয় করোনারি আর্টারি ডিজিজ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে করোনারি আর্টারি ডিজিজের কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।

হার্ট অ্যাটাক তখনই হয় যখন এই প্লাক ফেটে যায় এবং কোলেস্টেরল ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ রক্তের সাথে মিশে যায়। ধমনীর যে স্থানে প্লাক ফেটে যায় ঐ স্থানে নতুন করে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে।  এটি আকারে বড় হয়ে গেলে পুরোপুরিভাবে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

আবার ধমনীর অস্বাভাবিক ও দ্রুত সংকোচন-প্রসারণের জন্যও হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তামাক ও মাদকদ্রব্য ব্যবহারের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও কোনো কারণে ধমনী ছিঁড়ে গেলেও (spontaneous coronary artery dissection) হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিতলক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শদিয়ে থাকেন:  

aspirin atenolol
candesartan captopril
clopidogrel bisulphate enalapril maleate
enoxaperin sodium glyceryl trinitrate
heparin irbesartan
lisinopril losartan potassium
metoprolol tartrate morphine sulphate
valsartan

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শদিয়ে থাকেন:  

আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাসেস (এ-বি-জি-এস) (Arterial blood gases (ABGs))
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
করোনারী আর্টারী বাইপাস গ্রাফট, সি-এ-বি-জি (Coronary artery bypass graft, CABG)
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ই-সি-জি) (Electrocardiogram, ECG)
সি-পি-কে-এম-বি (creatine phosphokinase–myocardial band, CPK-MB)
ট্রোপোনিন (Troponin)
সি-কে-এম-বি (Creatine Kinase Myocardial Band, CK-MB)
মায়োগ্লোবিউলিন লেভেল (Myoglobin levels)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যেসব কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় সেগুলি হলো-

  • বয়স: পুরুষদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স ৪৫ বা এর বেশি এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স ৫৫ বা এর বেশি তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • ধূমপান: ধূমপানের কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে ধূমপান, স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের সাথে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাঃ: লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল হল এক প্রকারের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল। রক্তে এই কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আবার রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের (এক ধরনের ফ্যাট) মাত্রা বেড়ে গেলেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • ডায়বেটিস: মানবদেহে ইনসুলিনের প্রভাবে গ্লুকোজ ভেঙ্গে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ডায়াবেটিস হলে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণের পরিমাণ কমে যায়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • পারিবারিক সূত্র: কোনো ব্যক্তির পরিবারের অন্য কারো হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকলে তার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • কর্মবিমুখতা: শারীরিক পরিশ্রম কম করলে শরীরে মেদ বৃদ্ধি পায় ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • স্থূলতা: স্থূলতা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী। তাই স্থূলতার কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • দুশ্চিন্তাঃ মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতি: শ্বেতাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।  কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর:  এঞ্জাইনা ও হার্ট এ্যাটাক এক নয়। এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্তের অভাবে বুকে বারবার ব্যথা হলে তাকে এঞ্জাইনা বলে। এই ব্যথা কাঁধ, পিঠ, বাহু, ঘাড় ও চোয়ালেও হতে পারে। এই ব্যথার সাথে বুকে চাপ অনুভূত হয়, তবে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে ও ঔষধ খেলে এ ব্যথা ভালো হয়ে যায়।

উত্তর: একবার হার্ট অ্যাটাক হলে পরবর্তীতে এ রোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত টেস্ট ও চেক-আপ করাতে হবে। একই সাথে ধূমপান পরিহার করতে হবে, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে ও পরিশ্রম করতে হবে। কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় ঔষধ গ্রহণ করতে হবে এবং এঞ্জাইনার জন্য অ্যাসপিরিন ও নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট খেতে হবে। একই সাথে বিভিন্ন রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রামেও অংশগ্রহণ করা যেতে পারে।

উত্তর: একবার হার্ট অ্যাটাকের পর অনেক রোগীরই এঞ্জাইনা বা বুকে ব্যথা হয়ে থাকে। তবে এ ব্যথা ঔষধ সেবনের পর বা বিশ্রাম নিলে কিছুক্ষণ পর ভালো হয়ে যায়। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে এ ব্যথা আরও তীব্র হয়ে ওঠে এবং তা সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না।

হেলথ টিপস্‌

নিম্নলিখিত উপায়ে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব:

  • ধূমপান পরিহার করতে হবে।
  • কোলেস্টেরল, রক্তচাপ ও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এজন্য সর্বপ্রথম ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে ও খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ আবুল খায়ের

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস(ডিএমসি), ডি-কার্ড(এনআইসিভিডি), এফসিপিএস(কার্ডিওলজি)

ডাঃ মোঃ বাবুল মল্লিক

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস(স্বাস্থ্য), এমডি(কার্ডিওলজি)

ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস(স্বাস্থ্য), ডি-কার্ড(এনআইসিভিডি), এফসিপিএস(মেডিসিন)শেষ-পর্ব

ডাঃ রিয়াজ মাহমুদ হুদা

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য), এফসিপিএস(মেডিসিন), কার্ডিএফসিপিএসওলজী,(থিসিস), এমএসিসি(আমেরিকা)

প্রফেসর কর্ণেল ডাঃ জাহিদ খান

কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস, এফসিপিএস, এফআরসিপি(গ্লাসগো), এফএসিসি (ইউএসএ)

ডাঃ সৈয়দ নাসির উদ্দিন

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(কার্ডিওলজী)

ডাঃ সৈয়দ হারুন-অর-রশীদ

কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস,(ঢাকা), বিসিএস(স্বাস্থ্য), এমডি(কার্ডিওলজী)

ডাঃ মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান

কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস, ডি-কার্ড, এমএসিই(আমেরিকা), সার্টিফাইড ডায়াবেটোলজিস্ট, ট্রেইন্ড ইন ইকো