কিডনি ফেইলিয়র (Kidney failure)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

এই রোগ রেনাল ফেইলিয়র ও অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরী নামেও পরিচিত।  কিডনির প্রধান কাজ হচ্ছে রক্তের দূষিত পদার্থ শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়া। কিডনি হঠাৎকরে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ছাঁকতে অক্ষম হয়ে পড়লে কিডনি ফেইলিয়র দেখা দেয়। কিডনির ছাঁকন ক্ষমতা কমে গেলে রক্তে বর্জ্য পদার্থ জমতে থাকে এবং রক্তের রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।  এটি কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করে। হাসপাতালে ইনটেনসিভ  কেয়ারে আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা  রোগীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। কিডনি ফেইলিওর মারাত্মক  আকার ধারণ করতে পারে এবং এতে আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ চিকিৎসার (ইনটেনসিভ ট্রিটমেন্ট) প্রয়োজন হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে কিডনি ফেইলিয়রের নিরাময় সম্ভব। একজন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলে স্বাভাবিকভানেই কিডনি ফেইলিয়র থেকে নিরাময় লাভ করতে পারবে।

কারণ

কোনো কারণে কিডনিতে রক্তের প্রবাহ ধীর হয়ে গেলে কিডনি ফেইলিয়র হতে পারে। এছাড়া কিডনি সরাসরিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং মূত্রনালীতে বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে বর্জ্য পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে নির্গত না হতে পারলে কিডনি ফেইলিওর দেখা দিতে পারে।

কিডনিতে রক্তের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া:

সাধারণত নিম্নে লিখিত কারণগুলির জন্য কিডনিতে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়-

  • রক্ত বা পানিশূন্যতা।
  • ব্লাড প্রেসারের ঔষধ গ্রহণ।
  • হার্ট অ্যাটাক।
  • হৃৎপিণ্ডের রোগ।
  • ইনফেকশন।
  • লিভার ফেইলিয়র।
  • অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রক্সেন ও এ জাতীয় অন্যান্য ঔষধ গ্রহণ।

কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া:  

নিম্নে লিখিত রোগ, অবস্থা ও উপাদানের কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে-

  • শিরা, ধমনী ও কিডনির ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধা।
  • কোলেস্টরল জমাট বাঁধার কারণে কিডনিতে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হওয়া।
  • গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস (কিডনির ক্ষুদ্র ছাঁকনিতে প্রদাহ)।
  • হিমোলাইটিক ইউরেমিক সিনড্রোম (অপরিণত অবস্থায় রক্তের লোহিত কণিকা ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া)।
  • ইনফেকশন।

কিডনিতে মূত্র আটকে যাওয়া: 

নিম্নলিখিত রোগ ও অবস্থার কারণে শরীর থেকে মূত্র নির্গমন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং কিডনি ফেইলিয়র দেখা দিতে পারে-

  • মূত্রাশয়ের ক্যান্সার।
  • মূত্রনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা।
  • সার্ভিক্যাল ক্যান্সার।
  • কোলন ক্যান্সার।
  • প্রস্টেট স্ফিত/বড়ো হয়ে যাওয়া।
  • মূত্রাশয় নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া।
  • প্রস্টেট ক্যান্সার।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

calcitriol epoetin alfa
hydralazine

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

ব্লাড গ্লুকোজ, ফাস্টিং (Blood Glucose, Fasting)
ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন, বি-ইউ-এন (Blood Urea Nitrogen, BUN)
ক্রিয়েটিনিন, সেরাম (Creatinine, Serum)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ই-সি-জি) (Electrocardiogram, ECG)
ইউ-এস-জি কিডনী এন্ড এড্রেনাল (USG kidney & adrenal)
এক্স-রে, চেস্ট পি-এ ভিউ (X-ray, Chest P/A view)
ইউরিন এনালাইসিস (Urinalysis)
রেনাল বায়োপসি (Renal Biopsy)
ক্রিয়েটিন ক্লিয়ারেন্স টেস্ট (Creatinine Clearance Rate, CCR)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

কিডনি ফেইলিয়র প্রায় সব ক্ষেত্রেই অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা বা অবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত। নিম্নলিখিত বিষয়গুলি কিডনি ফেইলিয়রের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়:

 

  • হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা, বিশেষত কোনো গুরুতর সমস্যার কারণে ইনটেনসিভ কেয়ারে থাকা।
  • বার্ধক্য।
  • বাহু ও পায়ের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা।
  • ডায়াবেটিস।
  • উচ্চরক্তচাপ।
  • হার্ট ফেইলিওর।
  • কিডনির রোগ।
  • লিভারের রোগ।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। নারীদের মধ্যে মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাত: শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ ক্রনিক কিডনি ফেউলিয়র সাধারণত নিরাময়যোগ্য নয়্, তবে অনেক সময় অ্যাকিউট রেনাল ফেইলিওরের চিকিৎসা ও নিরাময় সম্ভব।

উত্তরঃ কিডনির কার্যাবলির উপর নির্ভর করে কিডনি ফেইলিয়রের প্রক্রিয়াকে ৫ ভাগে বিভক্ত করা হয়। তবে রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময়  ৬ষ্ঠ  পর্যায় বিবেচনা করা হয়। অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরিকে অনেক সময় কিডনির ক্রিয়াশীলতা, মূত্রের পরিমাণ ও ক্ষতের স্থায়ীত্বের উপরে ভিত্তি করে বিভক্ত করা হয়্।

উত্তরঃ কিডনি সঙ্কুচিত হলে কিডনির ক্রিয়াশীলতা কমে যায়। তবে একটি কিডনির ক্রিয়াশীলতা কমে গেলে আরেকটি কিডনি সেটির কাজ করতে নিয়োজিত হয়। একটি কিডনির সঙ্কোচনের কারণ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া উচিৎ,কারণ এই বিষটয়টির উপর ভিত্তি করেই চিকিৎসা ও থেরাপি নির্ধারিত হয় । কিছু রোগের কারণে দুটি কিডনিই সঙ্কুচিত হতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

কিডনি ফেইলিয়র থেকে সেরে ওঠার সময়ে চিকিৎসক আপনাকে বিশেষ ধরনের খাদ্য গ্রহণ করার নির্দেশ দিতে পারেন। চিকিৎসক প্রয়োজনে আপনাকে খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞের কাছেও পাঠাতে পারেন। পুষ্টি বিশেষজ্ঞ আপনার বর্তমান খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষণ করে কিডনির জন্য উপযোগী খাদ্য গ্রহণ করতে পরামর্শ দেবেন।

  • লবণযুক্ত খাবার পরিহার করা: কম পরিমাণে সোডিয়াম গ্রহণ করার জন্য হিমায়িত খাদ্য, ক্যানের সুপ ও ফাস্টফুডের মতো লবণযুক্ত খাদ্য এড়িয়ে চলুন। এছাড়া স্ন্যাকস, ক্যানের শাকসবজি, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও মাখনের মতো অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার কম  গ্রহণ করুন।
  • পটাশিয়ামযুক্ত খাবার কম গ্রহণ করা: চিকিৎসক আপনাকে কম পটাশিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারেন। কলা, কমলালেবু, আলু, পালংশাক ও টমেটোতে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। অপরদিকে আপেল, বাঁধাকপি, গাজর, শিম, আঙ্গুর ও স্ট্রবেরিতে কম পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে।
  • কম পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ: আপনার কী পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করা উচিৎ সে ব্যাপারে চিকিৎসক পরামর্শ দিতে পারেন। মাংস, ডিম, দুধ, মাখন ও শিমে বেশি পরিমাণে প্রোটিন থাকে। অপরদিকে শাকসবজি, ফল, রুটি ও শস্যজাতীয় খাদ্যে প্রোটিন কম থাকে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ আবু রেজা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান

ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস, এমআরসিপি (ইউকে)

ডাঃ পারভেজ ইফতেখার আহমদ

নেফ্রোলজি ( কিডনি) ( Nephrology)

এমবিবিএস, এমডি(নেফ্রোলজী)

ডাঃ মোঃ নূরুল হুদা লেনিন

নেফ্রোলজি ( কিডনি) ( Nephrology)

এফসিপিএস(সার্জারী), এমএস(ইউরোলজী), ফেলো-ইউ এ.এ

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আমজাদ হোসেন ফকির

মেডিসিন ( Medicine), নেফ্রোলজি ( কিডনি) ( Nephrology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এফসিপিএস(মেডিসিন), এফসিপিএস নেফ্রোলজী(পাকিস্থান), এফআরসিপি(আয়ারল্যান্ড)

ডাঃ মোঃ বাবরুল আলম

নেফ্রোলজি ( কিডনি) ( Nephrology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন শেষ পর্ব), এমআরসিপি(পার্ট-২)

ডাঃ সুনীল কুমার বিশ্বাস

ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine), মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস(ডিএমসি), এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(ইন্টারনাল মেডিসিন)

মেজর জেনারেল ডাঃ এ কে এম সফিউল্লাহ খান (অবঃ)

ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস (ঢাকা) , এমসিপিএস (পাকিস্তান)

ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান

নেফ্রোলজি ( কিডনি) ( Nephrology)

এমবিবিএস, বিসিএস, পিজিটি(নেফ্রোলজি)