কিডনিতে পাথর (Kidney stone)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

একটি বা উভয় কিডনিতে সৃষ্টি হওয়া ছোট ও শক্ত দানাদার পদার্থকে কিডনির পাথর বলে। বেশিরভাগ কিডনির পাথরে ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামক উপাদান থাকে। এছাড়া অন্যান্য কয়েক ধরনের কিডনির পাথরে ইউরিক এসিড, স্ট্রুভাইট ও সিসটিন থাকে। এই পাথর সাধারণভাবে কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। তবে এই পাথর কিডনি ও মূত্রাশয় সংযোগকারী নালীতে প্রবেশ করলে  কিডনি থেকে মূত্রাশয়ে মূত্রের প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়। এই বাধার কারণে প্রচন্ড ব্যাথার সৃষ্টি হয়। সাধারণত যে বিষয়গুলি কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে সেগুলো হলো- শরীরের অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ, গ্যাসট্রিক বাইপাস সার্জারি, পানিশূন্যতা ও বংশে কারো কিডনিতে পাথর হওয়া।

কারণ

সাধারণত কিডনির পাথরের কোনো নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু বিষয় এই রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। মূত্রে ক্যালসিয়াম অক্সালেট ও ইউরিক এসিডের মতো কেলাসসৃষ্টিকারী (স্ফটিক) উপাদানের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে। একই সাথে মূত্রে কেলাসকে (স্ফটিক) জমাট বাঁধতে দেয় না এমন উপাদানের পরিমাণ কম হলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

allopurinol ampicillin
ciprofloxacin gentamicin
ibuprofen ketorolac
levofloxacin hemihydrate metoclopramide
morphine sulphate nalbuphine hydrochloride
nifedipine ofloxacin
paracetamol prednisolone
tamsulosin hydrochloride

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

ক্যালসিয়াম, সেরাম (Calcium, Ca serum)
ক্রিয়েটিনিন, সেরাম (Creatinine, Serum)
ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
ইউরিক এসিড (Uric Acid)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
ইউ-এস-জি কে-ইউ-বি (USG KUB)
এক্স-রে, কে-ইউ-বি (X-ray, KUB)
ইউরিন এনালাইসিস (Urinalysis)
ফসফেট, সেরাম (Phosphate (PO4), serum)
Intravenus Urography, IVU

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নে লিখিত বিষয়গুলি কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে-


  • বংশগত বা জিনগত কারণ: আপনার পরিবারে কারো কিডনিতে পাথর হলে আপনারও এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া পূর্বে কিডনিতে পাথর হলে পুনরায় হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
  • প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া: ৪০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়স্কদের কিডনির পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে যে কোনো বয়সেই কিডনির পাথর হতে পারে।
  • পুরুষ: পুরুষদের কিডনির পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে মহিলারাও অনেক বেশী পরিমাণে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
  • পানিশূন্যতা: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যারা গরম আবহাওয়ায় বসবাস করে এবং বেশি পরিমাণে ঘামে তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • বিশেষ খাদ্য গ্রহণ: বেশি পরিমাণ প্রোটিন, সোডিয়াম ও শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে কয়েক ধরনের কিডনির পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিশেষত উচ্চ পরিমাণে সোডিয়ামযুক্ত খাদ্য এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। আপনি বেশি পরিমাণে সোডিয়াম (লবন) গ্রহণ করলে আপনার কিডনিকে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম পরিশোধন করতে হয়। এই কারণে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  •  অতিরিক্ত ওজন: শরীরের অতিরিক্ত ওজন, কোমরের আকার বৃদ্ধি পাওয়া ও ওজন বৃদ্ধির সাথে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্পর্ক আছে।
  • পরিপাকতন্ত্রের রোগ ও সার্জারি: গ্যাসট্রিক বাইপাস সার্জারি, অন্ত্রের প্রদাহযুক্ত রোগ ও ক্রনিক ডাইরিয়ার কারণে পরিপাক ক্রিয়ার পরিবর্তন হতে পারে। এই পরিবর্তন ক্যালসিয়াম ও পানি শোষণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে মূত্রে পাথর সৃষ্টিকারী পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। নারীদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাত: কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ ৯ মিমি কিডনির পাথরকে স্বাভাবিকের তুলনায় বড় বলা চলে। যে নালী দিয়ে মূত্র মূত্রাশয়ে আসে, পাথরটির অবস্থান তার মধ্যে হলে সেখানে বাধা সৃষ্টি হবে, এবং এই কারণে নানা জটিলতা ও ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় কিডনির পাথর নিজে থেকেই সরে যেতে পারে, তবে ৯ মিমি কিডনির পাথর সরানোর জন্য ‘লিথোট্রিপসি’ করা প্রয়োজন হতে পারে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

উত্তরঃ মহিলা ও পুরুষদের ক্ষেত্রে একই সময় লাগে। বেশিরভাগ কিডনির পাথরই প্রথম ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সরে যায়। ১ সপ্তাহ পরে এটির সরে যাওয়ার সম্ভাবনা ৫০%।

উত্তরঃ যেসব পাথর মূত্রনালীকে বন্ধ করে না, তা স্বাধারনত প্রস্রাবে সমস্যা সৃষ্টি করে না। কিডনির পাথর যতোই মূত্রাশয়ের নীচের দিকে নামতে থাকে ততোই মূত্রাশয় ও পুরুষাঙ্গে বিভিন্ন লক্ষণ বা সমস্যা দেখা দেয়।

হেলথ টিপস্‌

নিম্নে লিখিত বিষয়গুলি অনুসরণের মাধ্যমে আপনি কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে পারেন:

  • সমস্ত দিনজুড়ে নিয়মিত এবং যথেষ্ট পানি পান: কিডনিতে পাথর হওয়া ব্যক্তিদের চিকিৎসকেরা প্রতিদিন ২.৫ লিটার পানি পান করতে বলেন। আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি গ্রহণ করছেন কিনা, তা বোঝার জন্য চিকিৎসক আপনাকে মূত্রের পরিমাণ পরিমাপ করতেও বলতে পারেন। আপনি যদি গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় বসবাস করেন এবং আপনার যদি বারবার ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকে, তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণ মূত্রের জন্য আপনাকে আরও বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হতে পারে। আপনি যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করলে আপনার মূত্র পাতলা ও পরিষ্কার হবে।
  • অতিরিক্ত অক্সালেটযুক্ত খাবার কম খাওয়া: আপনার কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেটযুক্ত পাথরের সৃষ্টি হলে চিকিৎসক আপনাকে অতিরিক্ত অক্সালেটযুক্ত খাবার পরিহার করতে বলতে পারেন। এ জাতীয় কিছু খাবার হল বিট, ঢেড়স, পালং শাক, মিষ্টি আলু, বাদাম, চা, চকলেট ও সয়াবিনজাত দ্রব্য।
  • কম লবণ ও প্রাণীজ প্রোটিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ: কম পরিমাণ লবণ গ্রহণ করুন এবং প্রাণীজ প্রোটিনযুক্ত খাদ্য এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
  • উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা, কিন্তু ঔষধ হিসেবে ক্যালসিয়াম গ্রহণ পরিহার করা: কিডনির পাথরের উপর ক্যালসিয়ামযুক্ত খাদ্যের কোনো প্রভাব নেই। তাই চিকিৎসক নিষেধ না করলে আপনি উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু ঔষধ হিসেবে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কারণ কিডনির পাথরের সাথে এই বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। তবে ঝুঁকি কমাতে আপনি খাবারের সাথে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারেন।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ সুদিপ দাস গুপ্ত

ইউরোলজি ( মূত্রতন্ত্রের সার্জারী) ( Urology)

এমবিবিএস, এমএস(ইউরোলজী)

এ টি এম মাওলাদাদ চৌধুরী

ইউরোলজি ( মূত্রতন্ত্রের সার্জারী) ( Urology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সার্জারী), এমআরসিএস(এডিন), এমআরসিপিএস(গ্লাসগো), এমএস(ইউরোলজী)

ডাঃ হাফিজ আল-আসাদ

ইউরোলজি ( মূত্রতন্ত্রের সার্জারী) ( Urology)

এমবিবিএস, এমএস(ইউরোজী)

ডাঃ হাবিবুর রহমান (দুলাল)

ইউরোলজি ( মূত্রতন্ত্রের সার্জারী) ( Urology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস (সার্জারী), এমএস (ইউরোলজী)

সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সালাউদ্দিন ফারুক

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery), ইউরোলজি ( মূত্রতন্ত্রের সার্জারী) ( Urology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সার্জারী), এমএস(ইউরোলজি)

ডাঃ শেখ আমিরুল ইসলাম

ইউরোলজি ( মূত্রতন্ত্রের সার্জারী) ( Urology)

এমবিবিএস , বিসিএস (স্বাস্থ্য) , এমএস (ইউরোলজি)

মেজর জেনারেল ডাঃ এইচ. আর. হারুন

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery), ইউরোলজি ( মূত্রতন্ত্রের সার্জারী) ( Urology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এফসিপিএস(বিডি), এফআরসিএস, ডি-ইউরোল

অধ্যাপক ডাঃ সাব্বির আহম্মেদ খান

জেনারেল সার্জারী ( General Surgery), ইউরোলজি ( মূত্রতন্ত্রের সার্জারী) ( Urology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সার্জারী), এমএস(ইউরোলজী)