গর্ভকালীন সমস্যা (Problem during pregnancy)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

একজন সুস্থ মা-ই পারে একটি সু্স্থ ও স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের চাই বিশেষ যত্ন। কেননা এ সময়ে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। এমনকি এসকল জটিলতার কারণে মা ও শিশু উভয়ের জীবনের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। যেকোনো মহিলারই গর্ভাবস্থায় যেকোনো জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ

  • উচ্চ রক্তচাপঃ হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের বিভিন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত বহনকারী ধমনীগুলো সরু হয়ে গেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে গেলে ভ্রূণে পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবহকারী প্লাসেন্টায় পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পৌঁছাতে পারে না। যার ফলে ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই সন্তান প্রসব এবং প্রিএ্যাকলেম্পসিয়া (preeclampsia) এর সমস্যা হতে পারে।
  • প্রিএ্যাকলেম্পসিয়া (preeclampsia) ঃ গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপসহ শরীরে পানি আসা ও প্রোটিনিউরিয়া (মূত্রে প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া) দেখা দিলে তাকে প্রিএ্যাকলেম্পসিয়া বলা হয়। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই অপরিণত অবস্থায় সন্তান প্রসব করতে হয়।
  • জ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস (Gestational diabetes)ঃ প্রেগনেন্সি বা গর্ভাবস্থায় এই ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
  • গর্ভপাতঃ গর্ভকালীন সময়ে বিশ সপ্তাহের পূর্বেই যেকোনো শারীরিক বা প্রাকৃতিক কারণে ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গেলে তাকে গর্ভপাত বলে। গর্ভপাতের কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে। যেমনঃ যোনীপথে রক্ত দেখা দেওয়া, টান ধরা বা যোনীপথ দিয়ে টিস্যু বা তরল জাতীয় পদার্থ নির্গত হওয়া। যদিও যোনীপথে রক্ত দেখা দিলেই তা সবসময় গর্ভপাত নির্দেশ করে না। তবে এই লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।

কারণ

গর্ভকালীণ যেসকল জটিলতা দেখা দেয় তার অধিকাংশই অজ্ঞাত কারণে হয়ে থাকে। তবে কোনো মহিলা যদি সন্তান ধারণের আগে থেকে অপুষ্টিতে ভুগে থাকে তবে তার এই সকল সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

]চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:    

ডাঁটা সেন্টারে কোন প্রকার তথ্য পাওয়া যায়নি

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

ব্লাড গ্লুকোজ, ফাস্টিং (Blood Glucose, Fasting)
ব্লাড গ্লুকোজ, র‍্যান্ডম (Blood Glucose, Random)
ইউরিন আর/ই (Urine R/E)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
এইচ-বি% (হিমোগ্লোবিন) (HB% (Haemoglobin))
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ই-সি-জি) (Electrocardiogram, ECG)
ইউ-এস-জি প্রেগনেন্সি প্রোফাইল (USG Pregnancy profile)
এক্স-রে, চেস্ট পি-এ ভিউ (X-ray, Chest P/A view)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত কারণে গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়-

  • ধূমপান: ধূমপান মা ও শিশু উভয়ের জীবনের জন্য ঝুঁকিস্বরূপ। ধূমপানের কারণে মাতৃগর্ভে থাকা শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না, যার ফলে গর্ভপাতসহ যোনিপথে রক্তপাত দেখা দেওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও গর্ভকালে নিয়মিত ধূমপানের কারণে গর্ভবতীদের সকালে ঘুম থেকে উঠার পর অসুস্থবোধ হতে পারে।
  • অ্যালকোহলের ব্যবহার: নিয়মিত মদ্যপানের কারণে মায়েদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি এর ফলে প্রসবের পর শিশুর ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হতে পারে।
  • অপুষ্টি: অপুষ্টির কারণে মাতৃগর্ভে ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। বিশেষত, ফলিক এসিডের অভাবে বিকালাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • একাধিক যৌনসঙ্গী: একাধিক যৌনসঙ্গী থাকার কারণে বিভিন্ন যৌনরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। যার ফলে সন্তান ধারণ ও প্রসবের সময় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
  • অন্যান্য: অন্যান্য শারীরিক সমস্যার জন্যই গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, যেমন- হৃদরোগ, সন্তান জন্মের সময় মায়ের বয়স ১৫ বছরের কম বা ৩৫ এর বেশি হওয়া, অ্যাজমা, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা ইত্যাদি।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতি: শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর:

  • স্বাভাবিক ওজনের একজন মহিলার ওজন গর্ভাবস্থায় ২৫-৩৫ পাউন্ড বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • সন্তান ধারণের পূর্বে কোনো মহিলার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে গর্ভাবস্থায় তার ওজন ১৫-২৫ পাউন্ড বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • সন্তান ধারণের পুর্বে কোনো মহিলার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হলে গর্ভাবস্থায় তার ওজন ২৮-৪০ পাউন্ড পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • আবার যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন ৩৫-৪৫ পাউন্ড পর্যন্ত বাড়তে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসে গর্ভবতী মায়ের ওজন গড়ে ২-৪ পাউন্ড পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী প্রত্যেক সপ্তাহে ওজন ১ পাউন্ড করে বাড়তে থাকে।

উত্তর: গর্ভকালে জ্যাস্টেশানাল ডায়াবেটিস দেখা দিলে ব্রেস্টফিডিং বা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কেননা ব্রেস্টফিডিং ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং পরবর্তীতে মায়ের টাইপ 2 ডায়বেটিস প্রতিরোধ করে। এছাড়াও বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো হলে তা বাচ্চার মধ্যে স্থূলতা ও টাইপ 2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। ব্রেস্টফিডিংয়ের বিভিন্ন উপকারিতার জন্যে গর্ভবতী প্রত্যেক মহিলাকেই এ ব্যাপারে উৎসাহ ও পরামর্শ দেওয়া হয়।

হেলথ টিপস্‌

গর্ভাবস্থায় যেকোনো ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একই সাথে কৃত্রিম রঙ ও কেমিকেল রয়েছে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সন্তান প্রসব ও এর পরবর্তী সময় পর্যন্ত নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে এবং যেকোনো জটিলতা দেখা দিলে সাথে সাথে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ শরমিন জাহান উর্মি

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস(ঢাঃ মেঃ কলেজঃ), এমএস(অব্‌স ও গাইনী)

ডাঃ আফরোজা বেগম

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(গাইনী এন্ড অবস্‌)

অধ্যাপক ডাঃ পারুল জাহান

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস, ডিজিও, এফসিপিএস, এমএস(গাইনী ও অবস্‌)

লেঃ কর্ণেল ডাঃ নাজনীন আরা খান (অবঃ)

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস, ডিজিও, এফসিপিএস(গাইনী এন্ড অবস্)

অধ্যাপক ডাঃ জুলফি আরা হায়দার

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস,, ডিজিও(ভিয়েনা),, এফএমএমএস(ভিয়েনা),, এফসিজিপি (বিডি)

ডাঃ রেহানা শামীম

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস

ডাঃ আফরোজা সুলতানা(শান্তা)

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস, ডিজিও, এফসিপিএস, এমসিপিএস

ডাঃ রোকসানা আইভি

গাইনি ও অবসটেট্রিক্স ( Obstetrics & Gynaecology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমএস