পাকস্থলীর ক্যান্সার (Stomach cancer)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

পাঁজরের ঠিক নিচে ও তলপেটের উপরের অংশে অবস্থিত প্রায় ২০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১৫ সেন্টিমিটার চওড়া বাঁকানো থলির মত অংশটিই হল পাকস্থলি। খাদ্যবস্তু খাদ্যনালীর মধ্য দিয়ে পাকস্থলিতে এসে জমা হয় এবং বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে তা হজম হয়। পাকস্থলিতে যে ক্যান্সার হয়ে থাকে তাকে পাকস্থলির ক্যান্সার বলে। এটি স্টোমাক কার্সিনোমা (Stomach Carcinoma), কার্সিনোমা অব স্টোমাক (Carcinoma of Stomach), এবং গ্যাস্ট্রিক কার্সিনোমা (Gastric Carcinoma) নামেও পরিচিত।

কয়েক ধরণের পাকস্থলির ক্যান্সার দেখা যায়। যেমনঃ

  • এডেনোকার্সিনোমা (Adenocarcinoma)ঃ পাকস্থলির ক্যান্সারের মধ্যে এডেনোকার্সিনোমা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ পাকস্থলির ক্যান্সার হলো এডেনোকার্সিনোমা। সাধারণত পাকস্থলির ভেতরের স্তরে যে কোষগুলো থেকে মিউকাস তৈরী হয় সে কোষগুলোই সর্বপ্রথম ক্যান্সার আক্রান্ত হয়। এই ক্যান্সারকে এডেনোকার্সিনোমা (Adenocarcinoma) বলা হয়।
  • লিম্ফোমা (Lymphoma): কখনও কখনও পাকস্থলির প্রাচীরে রোগ প্রতিরোধকারী টিস্যু পাওয়া যায়। এই টিস্যুতে যে ক্যান্সার হয়ে থাকে তাকে লিম্ফোমা বলে। প্রায় ৪ শতাংশ পাকস্থলির ক্যান্সার হল লিম্ফোমা।
  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্ট্রোমাল টিউমার (Gastrointestinal stromal tumor): এই টিউমারকে সংক্ষেপে জি-আই-এস-টি (GIST) বলা হয়। পাকস্থলির প্রাচীরে অবস্থিত কোষে (Interstitial cells of Cajal) এই টিউমার হয়ে থাকে। তবে কোষ গঠনের একদম প্রাথমিক পর্যায়ে এই টিউমার সৃষ্টি হয়। এই টিউমারগুলোর অধিকাংশই ক্ষতিকর হয় না বা ক্যান্সা্রের সৃষ্টি করে না। এই টিউমার পরিপাক নালীর যেকোনো অংশেই হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি পাকস্থলিতে হয়ে থাকে।
  • কার্সিনোয়েড টিউমার (Carcinoid tumor): পাকস্থলির হরমোন উৎপাদনকারী কোষে এই টিউমার হয়। প্রায় ৩ শতাংশ পাকস্থলির ক্যান্সার এই টিউমারের জন্য হয়ে থাকে।
  • অন্যান্য ক্যান্সারঃ অন্যান্য ক্যান্সার যেমনঃ স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা, স্মল সেল কার্সিনোমা পাকস্থলিতে হতে পারে। তবে এই ধরণের ক্যান্সার খুব কম হয়ে থাকে।

কারণ

সাধারণত কোষের DNA তে কোনো ত্রুটি বা পরিবর্তন দেখা দিলে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। এই পরিবর্তনের ফলে দেহে কোষের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো টিউমার গঠন করে যা পরবর্তীতে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

ঠিক কি কারণে পাকস্থলিতে ক্যান্সার হয় এ সম্পর্কে চিকিৎসকেরা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত নয়। তবে প্রচুর পরিমাণে লবণ, ভাজাপোড়া ও আচার জাতীয় খাবার খেলে পাকস্থলিতে ক্যান্সার হতে পারে। তবে বর্তমানে হিমাগার বা রেফ্রিজারেটরে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয় বলে এ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যেসকল কারণে পাকস্থলিতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় সেগুলো হলোঃ

  • লিঙ্গঃ এই ক্যান্সার মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি হয়ে থাকে।
  • বয়সঃ পঞ্চাশ বছর বয়সের পর সাধারণত পাকস্থলির ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৬০ বছরের শেষের দিকে এই ক্যান্সার ধরা পরে।
  • পরিবেশগত কারণঃ পাকস্থলির ক্যান্সার জাপান, চীন, দক্ষিণ ও পশ্চিম ইউরোপ এবং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকাতে বেশি হতে দেখা যায়। অপরদিকে, উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকা, মালোয়েশিয়া, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকাতে এই ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি। আবার, কাজের পরিবেশের উপরও এ রোগের ঝুঁকি নির্ভর করে। যেমনঃ কয়লা খনি ও রাবার কারখানায় কাজ করলে এ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • খাদ্যাভাসঃ অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ ও ভাজাপোড়া খেলে পাকস্থলিতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। একই সাথে দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় ফলমূল ও শাকসবজির পরিমাণ কম হলে পাকস্থলিতে ক্যান্সার হতে পারে।
  • পারিবারিক সূত্রেঃ একই পরিবারের কোনো সদস্য পাকস্থলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে অন্যান্য সদস্যের ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • দীর্ঘদিন পাকস্থলিতে প্রদাহজনিত সমস্যা থাকলে (stomach inflammation)
  • ধূমপান ও স্থূলতার কারণে।
  • গুরুতর পর্যায়ের রক্তাল্পতা (Pernicious anemia) ও স্টোমাক পলিপের কারণে।
  • আগে কখনও পাকস্থলিতে সার্জারি বা অপারেশন করে থাকলে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা একগুণ কম।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে এ এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। আবার অন্যান্য জাতির মধ্যে এ রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা দ্বিগুণ। অপরদিকে, কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা একগুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে ক্যান্সার দেহে কতটুকু ছড়িয়ে পড়েছে বা বর্তমানে এটি কোন পর্যায়ে আছে তা নির্ণয় করা হয় তাকে স্টেজিং (Staging) বলে। ক্যান্সারের চিকিৎসা ও রোগীর আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা ক্যান্সার কোন পর্যায়ে আছে তার উপর নির্ভর করে। ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়কে Stage 0 বলা হয়। এই পর্যায়ে ক্যান্সার পাকস্থলির প্রাচীরের কোষের অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে। Stage 0 এর পর থেকে ক্যান্সারের পরবর্তী প্রত্যেকটি পর্যায়কে রোমান সংখ্যার সাহায্যে চিহ্নিত করা হয়। যেমন Stage I, Stage II, Stage III বা Stage IV। অর্থাৎ Stage IV ক্যান্সারের গুরুতর পর্যায় নির্দেশ করে, এই অবস্থায় ক্যান্সার শরীরের অধিকাংশ স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

হেলথ টিপস্‌

এই ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনও অজানা তাই এটি প্রতিরোধ করা সহজ নয়। তবে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিভিন্ন পরিবর্তনের সাহায্যে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেমনঃ

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • খাবারে লবণের পরিমাণ কমাতে হবে ও ভাজাপোড়া কম খেতে হবে।
  • ধূমপান পরিহার করতে হবে।

ক্যান্সার শব্দটি রোগীর মধ্যে আতংক ও ভীতি সৃষ্টি করে। তাই ক্যান্সার ধরা পড়ার পর ও চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে রোগীকে সাহস ও অনুপ্রেরণা দিতে হবে। ক্যান্সার মানেই জীবনের শেষ নয়। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পরও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব, এক্ষেত্রে প্রয়োজন মনোবল ও দৃঢ় প্রত্যয়।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

অধ্যাপক ডাঃ এ.এস.এম বজলুল করিম

পেডিয়াট্রিকস ( Pediatrics), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস(ঢাকা), , এফসিপিএস,, ফেলো শিশু পুষ্টি পরিপাকতন্ত্র ও লিভার ডিজিজেস( অস্ট্রোলিয়া)

ডাঃ মোঃ সাইফ উদ্দৌলা

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস (ডিএমসি) , এমসিপিএস (মেডিসিন) , এমডি (গ্যাস্ট্রো)

লেঃ কর্ণেল ডাঃ মোঃ মোস্তাফিল করিম

হেমাটোলজি ( ব্লাড) ( Hematology), অঙ্কোলজি ( ক্যান্সার) ( Oncology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমসিপিএস, ডিসিপি, এফসিপিএস(হেমাটোলজি)

ডাঃ মোহাম্মদ মাসুদুল হাসান অরূপ

অঙ্কোলজি ( ক্যান্সার) ( Oncology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(রেডিওথেরাপী), এমডি(রেডিয়েশন অনকোলজি)

ডাঃ রঞ্জিত কুমার বনিক

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস,, এমডি(গ্যাষ্ট্রোএন্টারোলজী)

অধ্যাপক ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনার

অঙ্কোলজি ( ক্যান্সার) ( Oncology)

এমবিবিএস, এমফিল(রেডিওথেরাপি), আইএইএ ফেলো(থাইল্যান্ড, জাপান)

ডাঃ আতিয়া সাঈদ

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(গ্যাস্ট্রো)

ডাঃ মোহাম্মদ রবিউল আলম

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, পিএইচডি(এম),জাপান