অন্ত্রের সমস্যা (Gastrointestinal symptoms)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

পরিপাকতন্ত্রে যেকোনো ত্রুটি বা সমস্যার কারণে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিজঅর্ডার (Gastrointestinal Disorders) দেখা দেয়, যা অন্ত্রের কার্যকারিতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিজঅর্ডার দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা- ফাংশানাল (functional) ও স্ট্রাকচারাল (structural)।

ফাংশানাল ডিজঅর্ডার (Functional disorders): 

এই অবস্থায় আপাতদৃষ্টিতে অন্ত্র স্বাভাবিক মনে হলেও অন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এর ফলে কোলন, মলাশয় এবং রেক্টামের ক্ষতি হয়। এছাড়া এ কারণে  কোষ্ঠকাঠিন্য (constipation) এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (irritable bowel syndrome) বা আই-বি-এস (IBS) দেখা দেয়।

  • কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation):

সাধারণত দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবারের পরিমান কম থাকলে ও দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির অভাব দেখা দিলে মলের শক্ত ও শুষ্ক হয়ে যায় ও মলত্যাগে অসুবিধা হয়। এই অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।

  • ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (irritable bowel syndrome) বা আই-বি-এস (IBS)

ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম  বা আই-বি-এস (IBS) হল বৃহদান্ত্র বা কোলনের একটি সাধারণ ব্যাধি। এর ফলে তলপেটে মোচড়ায়, ব্যথা হয়, তলপেট ফেঁপে যায়, পেটে গ্যাস, ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। আই-বি-এস (IBS) একটি ক্রনিক অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এই রোগের চিকিৎসা করতে হয়।

স্ট্রাকচারাল ডিজঅর্ডার (Structural disorder)ঃ

এ অবস্থায় অন্ত্রে গঠনগত বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দেয় ও অন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। আবার কখনও কখনও অপারেশনের সাহায্যে অন্ত্রের ত্রুটিপূর্ণ অংশটি অপসারণ করতে হয়। সাধারণত মলদ্বারে স্ট্রাকচারাল ডিজঅর্ডার বেশি দেখা দেয়। একই সাথে ডাইভারটিকুলার ডিজিজ ও ক্যান্সার দেখা দেয়।

  • মলদ্বারের বিভিন্ন সমস্যা (Anal disorders):
  • হেমোরয়েডস (Hemorrhoids)

মলত্যাগ, ঘনঘন ডায়রিয়া বা গর্ভাবস্থায় মলদ্বারের গাত্রে অবস্থিত রক্তনালী ফুলে গেলে তাকে হেমোরয়েডস বলে। হেমোরয়েডস দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল হেমোরয়েডস।

  • অ্যানাল ফিশার (Anal fissures):

পায়ুপথের চামড়া ছিঁড়ে গেলে বা ফেটে গেলে তাকে অ্যানাল ফিশার/গেজ বলে, তখন এ পথ দিয়ে রক্তপাত হয়ে থাকে। এটি অ্যাকিউট হলে, মলত্যাগের পর তীব্র ব্যথা হয় কিন্তু ক্রনিক হলে  ব্যথা কিছুটা কম হয়। মলের শক্ত হয়ে গেলে বা পানির মত পাতলা পায়খানা হলে এ সমস্যা দেখা দেয়।

  • পেরিঅ্যানাল অ্যাবসেস (Perianal abscesses)ঃ

মলদ্বারের অভ্যন্তরে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রন্থি রয়েছে, তা বন্ধ হয়ে গেলে ব্যক্টেরিয়ার কারণে ইনফেকশন দেখা দেয়। এজন্য পুঁজ জমতে শুরু করে ও ফোঁড়ার সৃষ্টি হয়।

  • ডাইভারটিকুলার ডিজিজ (diverticular disease)ঃ

বৃহদান্ত্রের পেশিময় গাত্রে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থলে বা পিন্ড দেখা দিলে তাকে ডাইভারটিকুলোসিস (Diverticulosis) বলে। এই ক্ষুদ্র থলে বা পিন্ডকে ডাইভারটিকুলা (diverticula) বলা হয়। বৃদান্ত্রের নিম্নাংশ, কোলনে এটি হয়ে থাকে।

কলিটিস (Colitis): 

যেসকল অবস্থায় অন্ত্রে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহের সৃষ্টি হয় তাকে কোলাইটিস বলে। কোলাইটিস বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমনঃ

  • ইনফেকশাস কোলাইটিস (Infectious colitis)
  • আলসারেটিভ কোলাইটিস (Ulcerative colitis)
  • ক্রোন্স ডিজিজ (Crohn's disease)
  • ইশকেমিক কোলাইটিস (Ischemic colitis)
  • রেডিয়েশন কোলাইটিস (Radiation colitis)

কোলাইটিসের কারণে ডায়রিয়া, রেক্টাল ব্লিডিং, তলপেটে খিঁচুনি ও বারবার মলে চাপ দেখা দেয়। কোলনোস্কপি ও বায়োপসি দ্বারা এ রোগ নির্ণয় করা হয়।

কারণ

যেসব কারণে ফাংশানাল ডিজঅর্ডার দেখা দেয় সেগুলো হলোঃ

  • আঁশযুক্ত খাবার কম খেলে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিশ্রম না করলে।
  • দুগ্ধজাতীয় খাবার বেশি খেলে।
  • দুশ্চিন্তার কারণে।
  • ব্যথা বা অন্য কোনো কারণে মলের বেগ চেপে রাখলে।
  • অম্লনাশক বা অ্যান্টাসিড জাতীয় ঔষধ বেশি গ্রহণ করা গর্ভাবস্থা।