চোখের ঠিক মধ্যখানে অবস্থিত কালো বৃত্তাকার অংশটিকে পিউপিল বা চোখের মণি বলা হয়। পিউপিলের মধ্যে দিয়ে চোখে আলো প্রবেশ করে। স্বল্প আলোতে চোখের মণি বড় হয়, যা ডায়ালেট নামে পরিচিত; এবং উজ্জ্বল আলোতে চোখের মণি ছোট হয়, যা কন্সট্রিক্ট নামে পরিচিত। সাধারণত দুই চোখের মণি সমান আকারের হয়ে থাকে এবং আলোর তীব্রতা অনুযায়ী সে দু'টি সমানভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। চোখের মণির আকারে অসমতা দেখা দিলে তাকে অ্যানাইসোকোরিয়া (anisocoria) বলা হয়।
দুই চোখের মণির মধ্যে অসমতা বেশি হলে তা খুব সহজেই বোঝা যায়। সাধারণত চিকিৎসকের কাছে চোখ পরীক্ষার সময় এই সমস্যা ধরা পড়ে। সাধারণত এই সমস্যার কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না, তবে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছের কোনো জিনিস ভালোভাবে দেখতে অসুবিধা হয়। তবে অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতার জন্য এই সমস্যা দেখা দিলে চোখ ব্যথা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, মাথাব্যথা, চোখের পাতা ঝুলে থাকা, চোখ লাল হয়ে যাওয়াসহ অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
কারণ
বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারেঃ যেমন-
ফিজিওলজিক্যাল অ্যানাইসোকোরিয়া (physiologic anisocoria): প্রায়
২০% স্বাভাবিক মানুষের দুই চোখের মণিতে হালকা অসমতা থাকে যাকে
ফিজিওলজিক্যাল অ্যানাইসোকোরিয়া (physiologic anisocoria) বলা হয়। তবে এই
অসমতা ১ মি.মি. এর কম হয়ে থাকে।
মেকানিক্যাল অ্যানাইসোকোরিয়া
(Mechanical anisocoria): ইনফ্লামেশন/প্রদাহ, যেকোন ধরনের আঘাত বা চোখে
অপারেশন করা হলে মেকানিক্যাল অ্যানাইসোকোরিয়া দেখা দেয়।
অ্যাডিজ
টনিক পিউপিল (Adie's tonic pupil): এটি একটি নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার, যার
ফলে চোখের মণি আলোর উপস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে প্রসারিত হতে পারে না।
সাধারণত মহিলাদের এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে যেসব মহিলার হাঁটুর
সমস্যা আছে বা অস্বাভাবিক ঘাম হয় তারা এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়।
অকুলোমোটর নার্ভ পালসি (Oculomotor nerve palsy)
: ইশকেমিয়া (দেহের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া),
ইন্ট্রাক্র্যানিয়াল অ্যানিউরিজম (intracranial aneurysm), ব্রেন টিউমার বা
মাথায় আঘাত পাওয়ার ফলে অকুলোমোটর নার্ভে সমস্যা দেখা দেয়। এই কারণে চোখের
মণির কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং চোখ নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়।
স্ট্রোক, টিউমার ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি থাকলে এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে
লিঙ্গঃ মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ৪ গুণ কম।
জাতিঃ শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি। হিস্প্যানিক ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।
উত্তরঃ দুই চোখের মণি অসম হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
হেলথ টিপস্
চোখের এই অস্বাভাবিকতা প্রতিরোধ করতে মাদক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার পরিহার করতে হবে। মাদক জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের ফলে চোখের মণি ও অকুলোমোটর নার্ভের কার্যকারিতা হ্রাস পায়।