ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (Deep vein thrombosis)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

এটি DVT (Deep Vein Thrombosis) বা ডিপ থ্রম্বোফ্লেবাইটিস (Deep Thrombophlebitis) নামেও পরিচিত।

ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা DVT এমন এক সমস্যা যার কারনে আমাদের শরীরের গভীরে অবস্থিত শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের উরু বা পায়ের নিম্নাংশের শিরায় এই ধরনের জমাট বাঁধা রক্ত দেখতে পাওয়া যায়। এই অবস্থায় শিরাগুলো যদি ফুলে যায় বা স্ফীত হয়ে ওঠে তবে এটিকে থ্রম্বোফ্লেবাইটিস (Thrombophlebitis) বলা হয়। এই জমে থাকা রক্ত ফুসফুসে (Lungs) ছড়িয়ে পড়তে পারে, এবং ফুসফুসে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।  এটি পালমোনারি এম্বোলিজম (Pulmonary Embolism) নামে পরিচিত।

এক বা একাধিক শিরার গভীরে (Deep Vein), সাধারণত পায়ে  রক্ত জমাট বাঁধলে (Thrombus) ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা DVT-এর সৃষ্টি হয়। এর ফলে পা ফুলে যেতে পারে এবং পায়ে ব্যথা হতে পারে। তবে এটি কোনো উপসর্গ ছাড়াও দেখা দিতে পারে।

যেসব রোগ বা অসুস্থতা আমাদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে সেসব রোগের জন্যও ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস দেখা দিতে পারে। কোনো দুর্ঘটনা বা অপারেশনের পর শারীরিক অসুস্থতা বা চিকিৎসার জন্য আমাদের হাসপাতালে বা নিজ বাসস্থানে চলফেরার পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায়। এ অবস্থায়ও ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের সৃষ্টি হতে পারে।

ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে কেননা শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার ফলে শিরা ফেটে যেতে পারে বা রক্ত জমাট বাঁধা অবস্থায় আমাদের ফুসফুসে পৌঁছে জমা হতে পারে এবং রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা পালমোনারি এম্বোলিসম (pulmonary embolism) নামে পরিচিত।


কারণ

আমাদের শিরার গভীরে সাধারণত পায়ে  রক্ত জমাট বাঁধলে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা DVT এর সৃষ্টি হয়। যে কোনো কিছু যা সঠিকভাবে রক্ত জমাট বাঁধতে বা স্বাভাবিক রক্ত চলাচল প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায় তার দ্বারা ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা DVT এর সৃষ্টি হতে পারে।

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

dalteparin sodium enoxaperin sodium
heparin warfarin sodium

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
কিডনী ফাংশন টেস্ট (Kidney function test)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
পি-টি (প্রোথ্রম্বিন টাইম) (PT (Prothrombin time))
ডি-ডাইমার (D-Dimer)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

বিভিন্ন কারণে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা DVT-এর ঝুঁকি বাড়তে পারে। DVT এর ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো হল:

  • কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে বংশগত কারণে খুব সহজেই DVT এর সৃষ্টি হয়। পরিবারের কোনো সদস্য DVT-তে আক্রান্ত হলে অন্যান্য সদস্যের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তবে যদি শুধুমাত্র বংশগত কারণে এ রোগ হয়ে থাকে এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় উপস্থিত না থাকে তবে তা খুব বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে না।
  • পক্ষাঘাত (Paralysis) বা দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার জন্য বা কোনো কারণে দীর্ঘদিন বিশ্রাম নেওয়ার ফলে আমাদের চলাফেরার পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায়। হাঁটাচলা কমে যাওয়ায় পায়ের পেছনের দিকের পেশী বা কাফ মাসল (Calf muscle) স্বাভাবিক ভাবে সংকুচিত-প্রসারিত হতে পারে না, এর ফলে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্থ হয়। এর কারল এই রোগের ঝুকি বৃদ্ধি পায়।
  • শিরায় যেকোনো ধরনের আঘাত বা অপারেশন রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শ্রোণীচক্র (Pelvis) এবং পায়ের শিরার উপর অধিক চাপ পড়ে, যা এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। যেসব মেয়েদের বংশগত কারণে এ সংক্রান্ত সমস্যা থাকে তাদের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি বেশি। বাচ্চা হওয়ার আরও ছয় মাস পর্যন্ত মেয়েদের এ রোগের ঝুঁকি থাকে।
  • হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (Hormone Replacement Therapy) এবং জন্ম বিরতিকরণ পিল ব্যবহারের ফলে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • অতিরিক্ত ওজন ও মেদবৃদ্ধি এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ধূমপান আমাদের শরীরে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে যার ফলে ধূমপানের কারণে এ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • ক্যান্সারের কারণে রক্তের কিছু কিছু উপাদানের পরিমাণ বেড়ে যায় যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। আবার ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসাও রোগের ঝূঁকি বাড়ায়।
  • হার্ট ফেইলর (Heart Failure) DVT এবং পালমোনারি এম্বোলিসম (pulmonary embolism) এর ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
  • অন্ত্রে জ্বালাপোড়া/প্রদাহ থাকলে বা অন্ত্রের অন্যান্য অসুখ যেমন ক্রন্স ডিজিজ (Crohn's disease) বা আলসারেটিভ কো্লাইটিস (Ulcerative Colitis) থাকলে তা DVT এর ঝুঁকি বাড়ায়।
  • যাদের বয়স ৬০ এর ঊর্ধ্বে তাদের ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • গাড়ি চালানো বা কোথাও ভ্রমনের সময় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার জন্য পায়ের কাফ মাসল শক্ত হয়ে (calf muscle) রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা সৃষ্টি কর, যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ DVT একটি গুরুতর সমস্যা। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির পা ফুলে যায় ও ব্যথা হয়। আল্ট্রাসাউন্ড (Ultrasound)-এর সাহায্যে এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।

উত্তরঃ নিয়মিত ভ্রমণের ফলে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হতে পারে। কেননা ভ্রমণের সময় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার জন্য পায়ের কাফ মাসলে (calf muscle) রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

উত্তরঃ কখনও কখনও শিশুদেরও ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হতে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি পূর্ণবয়স্কদের হয়ে থাকে। বংশগত কারণে বা কোনো শিশু যদি দীর্ঘদিন কোনো কারণে চলাফেরা না করে তাহলে এ রোগ দেখা দিতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস প্রতিরোধের জন্য নিম্নের টিপসগুলো কাজে লাগতে পারেঃ

  • নির্দেশানুযায়ী নিয়মিত ঔষধ খেতে হবে। অপারেশনের পর এ সমস্যা প্রতিরোধের জন্য যেসব ঔষধ দেওয়া হয় সেগুলি নিয়মিত খেতে হবে।
  • দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকা বা বসে থাকা এড়িয়ে চলতে হবে। দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকলে পা আড়াআড়ি অবস্থায় রাখা যাবে না, কারণ এতে রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়। ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিরতি নিতে হবে।
  • ওজন কমাতে হবে এবং ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ মুখলেছুর রহমান খান

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস(ঢাকা), ডি-আই এইচ (ব্যাংকক)

অধ্যাপক ডাঃ মেজর জেনারেল কে এম ওমর হাসান(অবঃ)

মেডিসিন ( Medicine), নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এফআরসিপি(গ্লাসগো)

ডাঃ মোহাম্মদ আলী

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস(ডিএমসি),, এমসিপিএস(মেডিসিন) , ডি-কার্ড(বিএসএমএমইউ), , এফসিপিএস(মেডিসিন), , সার্টিফাইড ডায়াবেটলজিষ্ট(বারডেম)

ডাঃ শরিফ উদ্দীন খান

মেডিসিন ( Medicine), নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এমডি(নিউরোলজী ), এমডি(নিউরোলজী )

ডাঃ মোঃ কাজিম উদ্দিন

মেডিসিন ( Medicine), হেমাটোলজি ( ব্লাড) ( Hematology)

এমবিবিএস, ডিসিপি, এমসিপিএস, এফসিপিএস

অধ্যাপক ডাঃ ব্রিগ্রেঃ জেনারেল(অবঃ) মোঃ মোখলেসুর রহমান

মেডিসিন ( Medicine), হেপাটোলজি ( লিভার) ( Hepatology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এফসিপিএস(মেডিসিন)

ডাঃ মোহাম্মদ শামসুল আহসান মাকসুদ

মেডিসিন ( Medicine), সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এম বি বি এস, এম ফিল, এফ সি পি এস

ডা. মো. নূরুল হাসান

মেডিসিন ( Medicine)

এম বি বি এস, এম পি এইচ, এম ডি (মেডিসিন)