রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি ক্রনিক ইনফ্লামেটোরি (জ্বালাপোড়া) ব্যাধি যা
হাত ও পায়ের ক্ষুদ্রাকারের অস্থিসন্ধির (জয়েন্ট) ক্ষতি করে থাকে।
অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে অস্থিসন্ধির তরুণাস্থি ক্ষয় হতে থাকে এবং
নষ্ট হয়ে যায়। অপরদিকে, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে হাড়ের
সংযোগস্থলের আস্তরণের ক্ষতি হয় ও ব্যথা হওয়ার সাথেসাথে হাড় ফুলে যায়। যার ফলে হাড় ক্ষয়
হতে শুরু করে ও হাড়ের গঠনে বিকৃতি দেখা দেয়। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি
অটোইমিউন ডিসঅর্ডার (Autoimmune Disorder), কারণ এই রোগের ফলে
প্রতিরোধকারী কোষগুলো ভুলক্রমে শরীরের টিস্যুগুলোকে আক্রমণ করে থাকে। হাড়ের
সংযোগস্থল ছাড়াও এ রোগ দেহের অন্যান্য অঙ্গ যেমন ত্বক, চোখ, ফুসফুস ও
রক্তনালীরও ক্ষতি করে থাকে। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস যেকোনো বয়সেই হতে
পারে। তবে এটি ৪০ বছর বয়সের পর বেশি হয়। মহিলারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। চিকিৎসার সাহায্যে এ রোগের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়
এবং হাড়ের সংযোগস্থল নষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করা যায় ।
কারণ
সাইনোভিয়াম হল হাড়ের সংযোগস্থলের বা অস্থিসন্ধির চারপাশের আস্তরণ। শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে এই সাইনোভিয়ামকে আক্রমণ করলে রিউম্যাটয়েড
আর্থ্রাইটিস দেখা দেয়। এর ফলে সাইনোভিয়াম পুরু বা মোটা হয়ে যায় এবং হাড়ের
সংযোগস্থলসহ হাড় ও তরুণাস্থির ক্ষতিসাধন করে। যেকোন
অস্থিসন্ধিই লিগামেন্ট ও টেন্ডনের সাহায্যে দৃঢ় ভাবে আটকে থাকে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ফলে
এই লিগামেন্ট ও টেন্ডনগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে হাড়ের সংযোগস্থলে
ত্রুটি দেখা দিতে শুরু করে। সরাসরি জিনগত
সমস্যার জন্য রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস না হলেও জিনগত সমস্যা এ রোগ হওয়ার
ক্ষেত্রে অন্যান্য পরিবেশগত উপাদানকে (নির্দিষ্ট ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া)
সক্রিয় করে তোলে।
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়
নিম্নলিখিত কারণে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে:
লিঙ্গঃ মহিলাদের রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বেশি হয়ে থাকে।
বয়সঃ ৪০-৬০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে।
পারিবারিক সূত্র: কোনো ব্যক্তির পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকলে তার এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে
লিঙ্গ: মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি।
জাতি: কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের
সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ, হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের
গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।