যে বৈদ্যুতিক ক্রিয়া হৃদস্পন্দকে নিয়ন্ত্রণ করে, তা সঠিকভাকে কাজ না করলে
হার্ট অ্যারিদমিয়া (heart arrhythmia) বা হৃদস্পন্দনে সমস্যা দেখা দেয় এবং
নাড়ির গতি অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এর ফলে হৃৎপিণ্ড অতি দ্রুত গতিতে, অতি ধীর
গতিতে বা অনিয়মিতভাবে স্পন্দিত হতে থাকে। অ্যারিদমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির
হৃৎপিণ্ড দ্রুত স্পন্দিত হওয়ার অনুভূতি হয়। এই লক্ষণটির কারণে সাধারণত
কোনো ক্ষতি হয় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি জীবনের জন্য হুমকিস্পরূপ হয়ে
উঠতে পারে। দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল করার
মাধ্যমে সাধারণত এর চিকিৎসা করা হয়। অ্যারিদমিয়ায় আক্রান্ত হৃৎপিণ্ড অন্য
কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বা দুর্বল হলে অ্যারিদমিয়া আরও তীব্র হতে পারে। তাই
হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষার জন্য অনুকূল জীবনযাপন এই সমস্যার সম্ভাবনা কমাতে
পারে।
কারণ
বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে: যেমন-
হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়া।
হার্ট অ্যাটাকের কারণে হার্টের টিস্যুতে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া।
কার্ডিওমায়োপ্যাথি বা অন্য কোন কারণে হার্টের গঠনে পরিবর্তন দেখা দেয়া।
নির্দিষ্ট কিছু ডায়াটারি সাপ্লিমেন্টস এবং ঔষধ গ্রহণ
ইলেক্ট্রিক শক
বায়ু দূষণ
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়
নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নাড়ির অস্বাভাবিক গতির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে-
করোনারি
আর্টারি ডিজিজ, হৃৎপিণ্ডের অন্যান্য সমস্যা এবং পূর্বের হার্ট সার্জারি:
সঙ্কুচিত ধমনী, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ভালভের অস্বাভাবিকতা, পূর্বের হার্ট
সার্জারি, হার্ট ফেইলিয়র, কার্ডিওমাইওপ্যাথি (cardiomyopathy) এবং
হৃৎপিণ্ডের অন্যান্য ক্ষতি অ্যারিদমিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
উচ্চ
রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ করোনারী আর্টারি ডিজিজের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। এছাড়া
এর কারণে হৃৎপিণ্ডের নিলয়ের গাত্র শক্ত ও পুরু হয়ে যায়, যার ফলে
হৃৎপিণ্ডের তড়িৎক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটে।
জন্মগত হৃদরোগ: জন্মগত হৃৎপিণ্ডের সমস্যা হৃদস্পন্দনের উপর প্রভাব ফেলে।
খাইরয়েডের সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত ক্রিয়াশীলতা বা নিষ্ক্রিয়তার কারণে অ্যারিদমিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়্।
ঔষধ ও সাপলিমেন্ট: সর্দি-কাশির সাধারণ ঔষধ বা অন্যান্য কিছু ঔষধ গ্রহণের কারণেও অ্যারিদমিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
ডায়বেটিস: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে করোনারি আর্টারি ডিজিজ এবং উচ্চরক্তচাপ হওয়া সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
ইলেকট্রোলাইটের
ভারসাম্যহীনতা: রক্তে বিদ্যমান ইলেকট্রোলাইট (যেমন পটাশিয়াম, সোডিয়াম,
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম) হৃৎপিণ্ডের তড়িৎক্রিয়ায় সহযোগিতা করে।
ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ খুব কম বা বেশি হলে তা এই তড়িৎক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাতে
পারে, এবং এর ফলস্বরূপ অ্যারিদমিয়া হতে পারে।
অতিরিক্ত অ্যালকোহেল
পান: অতিরিক্ত অ্যালেকোহল পান করলে হৃৎপিণ্ডের তড়িৎক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে,
এবং এজন্য অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
উত্তর: হ্যাঁ, স্বাভাবিক। বিশেষ করে ব্যায়াম করার মুহূর্তে বা পরে।
উত্তর: হ্যাঁ। তবে হৃদস্পন্দন গণনার মুহূর্ত বাদে অন্য কোনো সময়ে যদি তা অনুভূত না হয় তবে বিষয়টি গুরুতর নাও হতে পারে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হেলথ টিপস্
আপনার হৃৎপিণ্ডের অবস্থা স্বাভাবিক রাখতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি অনুসরণ করতে পারেন:
স্বাস্থ্যকর
খাদ্য গ্রহণ: কম লবণ এবং চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন। এছাড়া পর্যাপ্ত
পরিমাণে ফল, শাকসবজি এবং শস্যজাতীয় খাদ্য গ্রহণও হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী।
নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়ান।
ধূমপান ত্যাগ করা: নিজে থেকে ধূমপান ত্যাগ না করতে পারলে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতিরিক্ত ওজন হৃৎপিণ্ডের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
রক্তচাপ
ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন: জীবনযাপনে পরিবর্তন আনুন, এবং
ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
নিয়মিত
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া: হৃদরোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের নির্দেশ
অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করা উচিৎ। আপনার রোগের লক্ষণগুলি তীব্র রূপ ধারণ করলে
চিকিৎসককে জানান।