অন্ত্রের কার্যকারিতার পরিবর্তন (Changes in bowel function)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

মলত্যাগের অভ্যাস বলতে একজন ব্যক্তির প্রতিদিনকার মলত্যাগের সময় ও পরিমাণকে বোঝায়, যা মূলত অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে। ফলে অন্ত্রের ক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন আসলে মলত্যাগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন দেখা দেয়। সাধারণত প্রতিদিন প্রায় একই সময়ে একজন ব্যক্তি মলত্যাগের চাপ অনুভব করে। মলের আকার এমন হতে হবে যেন মলত্যাগের সময় কোনো রকম কষ্ট অনুভব না হয়। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার কারণে এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন দেখা দেয়। মলত্যাগের অভ্যাস একজন ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাস, পানি পান করার পরিমাণ, পরীশ্রমের ধরন, পরিমাণ এবং বয়সের উপর নির্ভর করে। অন্ত্রের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে  যেসব অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় সেগুলো হল- মেলেনা (Melena), কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সময় মলের সাথে রক্ত যাওয়া, ডায়রিয়া, মলের সাথে তরল জাতীয় পদার্থ (মিউকাস ও স্রাব) নির্গত হওয়া, মলের আকারে পরিবর্তন দেখা দেওয়া ও মলের চাপ ধরে রাখতে অসামর্থ্য হওয়া।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন-

  • ফুড অ্যালার্জির কারণে অন্ত্রের কার্যকারিতায় পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। তবে ঠিক কি কারণে এমন হয়ে থাকে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। যে ধরনের খাবার অন্ত্রের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করা সেগুলো হলো- চকোলেট, মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার, বিভিন্ন রকম ফল, ব্রকলি, মটরশুটি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, দুধ এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার, কার্বোনেটেড পানীয় ও অ্যালকোহল।
  • মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার জন্যও অন্ত্রের কার্যকারিতায় পরিবর্তন আসতে পারে।
  • হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে মহিলাদের ক্ষেত্রে এ লক্ষণ বেশি দেখা দেয়। মাসিক চলাকালীন এ লক্ষণ বেশি দেখা দেয়।
  • আবার ইনফেকশাস ডায়রিয়া ও অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ অধিক হারে বেড়ে গেলেও এ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যেসকল কারণে অন্ত্রের কার্যকারিতা পরিবর্তনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় সেগুলো হলোঃ

  • সাধারণত যাদের বয়স ৪৫ বছরের নীচে তাদের ক্ষেত্রে এ লক্ষণ বেশি দেখা দেয়।
  • মহিলাদের ক্ষেত্রে এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  • পরিবারের অন্য কারো একই সমস্যা থাকলে এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • বিভিন্ন মানসিক সমস্যা যেমনঃ উদ্বেগ, বিষন্নতা বা শৈশবে যৌন হয়রানির শিকার হলে এ লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আবার যেসব মহিলা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন তাদের এ লক্ষণ বেশি দেখা দেয়।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। এক্ষেত্রে কলোন্সকপি ও এন্ডোস্কপির সাহায্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঠিক কারণ নির্ণয় করা হয়। 

উত্তরঃ মলের আকারগত পরিবর্তন অন্ত্রের ক্যান্সারের লক্ষণ নির্দেশ করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে রোগ নির্ণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট করাতে হবে।  

হেলথ টিপস্‌

দৈনন্দিন জীবন ও খাদ্যাভাসে বিভিন্ন পরিবর্তনের সাহায্যে খুব সহজে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমনঃ

  • আঁশযুক্ত খাবার কোষ্ঠ্যকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। তবে আঁশযুক্ত খাবারের প্রভাবে পেটে গ্যাস ও খিঁচুনি হতে পারে। তাই দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ একটু একটু করে বাড়াতে হবে। বিভিন্ন ধরণের আঁশযুক্ত খাবার হলঃ শস্যজাতীয় খাবার, মটেশুটি, বিভিন্ন রকম শাকসবজি ও ফলমূল।
  • ফুড এ্যালার্জি হতে পারে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমনঃ চকোলেট, মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার, বিভিন্ন রকম ফল, ব্রকলি, মটরশুটি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, দুধ  দুগ্ধজাতীয় খাবার, ক্যাফাইন জাতীয় পানীয় যেমনঃ কফি বা সোডা ও এলকোহল।
  • নিয়মিত সিঠিক সময়ে খাবার খেতে হবে। ডায়রিয়া হলে কিছুক্ষণ পর পর অল্প পরিমানে খেতে হবে। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। তবে অ্যাকোহল ও কোমল পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম ও অনুশীলন করতে হবে। নিয়মিত অনুশীলনের সাহায্যে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমানো যায়।