সাধারণত বয়স বৃদ্ধি বা আঘাতের কারণে চোখের লেন্সের টিস্যুর পরিবর্তন ঘটলে ছানি পড়ে।
চোখের
কিছু কিছু ছানি জিনগত ত্রুটি/অস্বাভাবিকতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই
ত্রুটিগুলি ছানিসহ আরও কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়াও
ডায়াবেটিস, ট্রমা এবং চোখের সার্জারিসহ চোখের অন্যান্য কিছু সমস্যার
কারণেও ছানি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে ঔষধ হিসেবে স্টেরয়েড গ্রহন
করলেও ছানি হতে পারে।
ছানি যেভাবে গঠিত হয়ঃ
আইরিস
(iris) নামক চোখের রঙিন অংশের পিছনে লেন্স অবস্থিত। চোখের এই্ লেন্সেই
ছানির সৃষ্টি হয়। বাইরে থেকে চোখে প্রবেশকৃত আলোকে লেন্স ফোকাস করে রেটিনার
(retina) উপর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে। রেটিনা হল এক ধরনের আলোকসংবেদী ঝিলি,
যা অক্ষিগোলকের( eyeball) ভিতরের অংশের পিছনের দেয়াল/প্রাচীরের উপর
অবস্থিত। রেটিনা অনেকটা ক্যামেরার ফিল্মের মতো কাজ করে।
ছানি পড়া
ব্যক্তির চোখে আলো যখন লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে, তখন ছানি তা
বিক্ষিপ্ত করে দেয়। এর ফলে রেটিনায় স্বচ্ছ প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হতে পারে না,
এবং দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যায়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার চোখের নমনীয়তা ও
স্বচ্ছতা কমে যায়। এছাড়া বয়স বাড়ার কারণে চোখের পুরুত্বও বেড়ে যেতে থাকে।
বয়সজনিত এসব পরিবর্তনের কারণে লেন্সের মধ্যে অবস্থিত টিস্যুগুলি ভেঙে গিয়ে
গুচ্ছাকার রূপ ধারন করে। এজন্য লেন্সের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
অস্বচ্ছ/ঘোলাটে অংশের সৃষ্টি হয়। ছানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে অস্বচ্ছ এই
অংশগুলির ঘনত্ব বাড়ে, এবং লেন্সের বেশিরভাগ অংশকে প্রভাবিত করে।
ছানি শুধু একটি চোখে হতে পারে, যদিও রোগটি সাধারণত দুই চোখে হয়ে থাকে। তবে দুই চোখে সাধারণত একই মাত্রায় ছানি দেখা দেয় না।
ছানির প্রকারভেদঃ
নিউক্লিয়ার ক্যাটার্যাক্ট (neuclear cataract) (লেন্সের মধ্যভাগকে প্রভাবিত করে)
নিউক্লিয়ার ক্যাটার্যাক্ট প্রাথমিক অবস্থায় হ্রস্বদৃষ্টি সৃষ্টি করে।
তবে এর কারণে সাময়িকভাবে পড়ার (বই/কাগজ) সময় আপনার সুবিধা হতে পারে। তবে
সময়ের সাথে সাথে লেন্স ঘন হলুদ হতে থাকে, ফলে আপনার দৃষ্টি ঘোলা হয়ে
যায়। ছানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে লেন্স বাদামিও হয়ে যেতে পারে। যদি লেন্স
অতিরিক্ত হলুদ বা বাদামী হয়ে যায়, তাহলে রংয়ের ঘনত্বের পার্থক্য বুঝতে
আপনসার সমস্যা হতে পারে।
কর্টিক্যাল ক্যাটার্যাক্ট (cortical cataract) (লেন্সের প্রান্তকে প্রভাবিত করে)
প্রাথমিক অবস্থায় কর্টিক্যাল ক্যাটার্যাক্ট সাদাটে ও অস্বচ্ছ ত্রিভুজ বা দাগ আকারে লেন্স কর্টেক্সের বাইরের প্রান্তে দেখা দেয়। এটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে দাগগুলি লেন্সের কেন্দ্রের দিকে প্রসারিত হতে থাকে, এবং লেন্সের কেন্দ্রের মধ্যে দিয়ে যাওয়া আলোর গমনকে ব্যাহত করে। এই ধরনের ছানি হলে চোখ ঝলসানোর সমস্যা দেখা দেয়।
পোস্টেরিয়র সাবক্যাপসুলার ক্যাটার্যাক্ট (posterior subcapsular cataracts) (লেন্সের পিছনের অংশকে প্রভাবিত করে):
একটি
ছোট অস্বচ্ছ অংশ হিসেবে লেন্সের পিছনের দিকের কাছাকাছি পোস্টেরিয়র
সাবক্যাপসুলার ক্যাটার্যাক্টের সূত্রপাত ঘটে। এই স্থান থেকেই আলো রেটিনাতে
প্রবেশ করে। এই ধরনের ছানির জন্য বই পড়তে অসুবিধা হতে পারে। এছাড়া এর
কারণে তীব্র আলোতে দেখতে অসুবিধা হতে পারে, এবং রাতে আলোর সামনে চোখ ঝলসানি
হতে পারে।
জন্মগত ছানি (congenital cataracts):
জন্মগতভাবেই
কিছু ব্যক্তির চোখে ছানি থাকে, আবার অনেকের চোখে শৈশবে ছানির সৃষ্টি হয়।
সন্তান গর্ভে থাকার সময়ে যদি মহিলাদের কোনো ইনফেকশন হয়, তবে সন্তানের ছানি
হতে পারে।
মায়োটনিক ডিসট্রফি ( myotonic dystrophy), গ্যালাকটোসেমিয়া
(galactosemia), লোই’স সিনড্রম (Lowe's syndrome) অথবা রুবেলার( rubella)
মতো রোগের কারণেও এ ধরনের ছানি দেখা দিতে পারে। জন্মগত ছানি সবক্ষেত্রে
চোখের দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে না। তবে এর দ্বারা দৃষ্টি প্রভাবিত হলে,
সাধারনত শনাক্তকরণের পরই তা অপসারিত করা হয়।