ছানি (Cataract)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

রোগটি লেন্স অপাসিটি ( Lens Opacity) ও লেনটিকুলার অপাসিটি (Lenticular Opacity) নামেও পরিচিত।

চোখের স্বচ্ছ লেন্স ঘোলাটে হয়ে যাওয়াকে ছানি পড়া বলা হয়। কুয়াশায় ঢাকা কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকানো হলে বাইরের পরিবেশ যেমন ঘোলাটে দেখায়, চোখে ছানি পড়া ব্যক্তিদের দৃষ্টি তেমন ঘোলাটে হয়ে থাকে।

চোখে ছানি পড়ার কারণে বই পড়তে, গাড়ি চালাতে এবং অন্যের মুখভঙ্গি বুঝতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়।

সাধারণত ছানি ধীরে ধীরে বাড়ে, এবং প্রাথমিক অবস্থায় এর দ্বারা দৃষ্টিতে কোন সমস্যা দেখা দেয় না। তবে পরবর্তীতে এই রোগ স্বাভাবিক দৃষ্টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

প্রাথমিক পর্যায়ে চশমা ব্যবহার করলে আপনি উপকার পেতে পারেন। ঘরে আলোর পরিমাণ বাড়িয়েও আপনি এই সমস্যাটি দূর করতে পারেন। তবে স্বাভাবিক দৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে  আপনার দৈনন্দিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হলে, ছানি সার্জারি করার প্রয়োজন হতে পারে। ছানির সার্জারি নিরাপদ এবং কার্যকারীভাবে করা সম্ভব।

কারণ

সাধারণত বয়স বৃদ্ধি বা আঘাতের কারণে চোখের লেন্সের টিস্যুর পরিবর্তন ঘটলে ছানি পড়ে।

চোখের কিছু কিছু ছানি জিনগত ত্রুটি/অস্বাভাবিকতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই ত্রুটিগুলি ছানিসহ আরও কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়াও ডায়াবেটিস, ট্রমা এবং চোখের সার্জারিসহ চোখের অন্যান্য কিছু সমস্যার কারণেও ছানি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে ঔষধ হিসেবে স্টেরয়েড গ্রহন করলেও ছানি হতে পারে।

ছানি যেভাবে গঠিত হয়ঃ

আইরিস (iris) নামক চোখের রঙিন অংশের পিছনে লেন্স অবস্থিত। চোখের এই্ লেন্সেই ছানির সৃষ্টি হয়। বাইরে থেকে চোখে প্রবেশকৃত আলোকে লেন্স ফোকাস করে রেটিনার (retina) উপর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে। রেটিনা হল এক ধরনের আলোকসংবেদী ঝিলি, যা অক্ষিগোলকের( eyeball) ভিতরের অংশের পিছনের দেয়াল/প্রাচীরের উপর অবস্থিত। রেটিনা অনেকটা ক্যামেরার ফিল্মের মতো কাজ করে।

ছানি পড়া ব্যক্তির চোখে আলো যখন লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে, তখন ছানি তা বিক্ষিপ্ত করে দেয়। এর ফলে রেটিনায় স্বচ্ছ প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হতে পারে না, এবং দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যায়।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার চোখের নমনীয়তা ও স্বচ্ছতা কমে যায়। এছাড়া বয়স বাড়ার কারণে চোখের পুরুত্বও বেড়ে যেতে থাকে। বয়সজনিত এসব পরিবর্তনের কারণে লেন্সের মধ্যে অবস্থিত টিস্যুগুলি ভেঙে গিয়ে গুচ্ছাকার রূপ ধারন করে। এজন্য লেন্সের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্বচ্ছ/ঘোলাটে অংশের সৃষ্টি হয়। ছানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে অস্বচ্ছ এই অংশগুলির ঘনত্ব বাড়ে, এবং লেন্সের বেশিরভাগ অংশকে প্রভাবিত করে।

ছানি শুধু একটি চোখে হতে পারে, যদিও রোগটি সাধারণত দুই চোখে হয়ে থাকে। তবে দুই চোখে সাধারণত একই মাত্রায় ছানি দেখা দেয় না।

ছানির প্রকারভেদঃ

নিউক্লিয়ার ক্যাটার‌্যাক্ট (neuclear cataract) (লেন্সের মধ্যভাগকে প্রভাবিত করে)

নিউক্লিয়ার ক্যাটার‌্যাক্ট প্রাথমিক অবস্থায় হ্রস্বদৃষ্টি সৃষ্টি করে। তবে এর কারণে সাময়িকভাবে পড়ার (বই/কাগজ) সময় আপনার সুবিধা হতে পারে। তবে সময়ের সাথে সাথে লেন্স ঘন হলুদ হতে থাকে, ফলে আপনার দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যায়। ছানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে লেন্স বাদামিও হয়ে যেতে পারে। যদি লেন্স অতিরিক্ত হলুদ বা বাদামী হয়ে যায়, তাহলে রংয়ের ঘনত্বের পার্থক্য বুঝতে আপনসার সমস্যা হতে পারে।

কর্টিক্যাল ক্যাটার‌্যাক্ট (cortical cataract) (লেন্সের প্রান্তকে প্রভাবিত করে)

প্রাথমিক অবস্থায় কর্টিক্যাল ক্যাটার‌্যাক্ট সাদাটে ও অস্বচ্ছ ত্রিভুজ বা দাগ আকারে লেন্স কর্টেক্সের বাইরের প্রান্তে দেখা দেয়। এটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে দাগগুলি লেন্সের কেন্দ্রের দিকে প্রসারিত হতে থাকে, এবং লেন্সের কেন্দ্রের মধ্যে দিয়ে যাওয়া আলোর গমনকে ব্যাহত করে। এই ধরনের ছানি হলে চোখ ঝলসানোর সমস্যা দেখা দেয়।

পোস্টেরিয়র সাবক্যাপসুলার ক্যাটার‌্যাক্ট (posterior subcapsular cataracts) (লেন্সের পিছনের অংশকে প্রভাবিত করে):

একটি ছোট অস্বচ্ছ অংশ হিসেবে লেন্সের পিছনের দিকের কাছাকাছি পোস্টেরিয়র সাবক্যাপসুলার ক্যাটার‌্যাক্টের সূত্রপাত ঘটে। এই স্থান থেকেই আলো রেটিনাতে প্রবেশ করে। এই ধরনের ছানির জন্য বই পড়তে অসুবিধা হতে পারে। এছাড়া এর কারণে তীব্র আলোতে দেখতে অসুবিধা হতে পারে, এবং রাতে আলোর সামনে চোখ ঝলসানি হতে পারে।

জন্মগত ছানি (congenital cataracts):

জন্মগতভাবেই কিছু ব্যক্তির  চোখে ছানি থাকে, আবার অনেকের চোখে শৈশবে ছানির সৃষ্টি হয়। সন্তান গর্ভে থাকার সময়ে যদি মহিলাদের কোনো ইনফেকশন হয়, তবে সন্তানের ছানি হতে পারে।

মায়োটনিক ডিসট্রফি ( myotonic dystrophy), গ্যালাকটোসেমিয়া (galactosemia), লোই’স সিনড্রম (Lowe's syndrome) অথবা রুবেলার( rubella) মতো রোগের কারণেও এ ধরনের  ছানি দেখা দিতে পারে। জন্মগত ছানি সবক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে না। তবে এর দ্বারা দৃষ্টি প্রভাবিত হলে, সাধারনত শনাক্তকরণের পরই তা অপসারিত করা হয়।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

ciprofloxacin, opthalmic dexamethasone, opthalmic
moxifloxacin moxifloxacin hydrochloride, opthalmic
phenylephrine prednisolone

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

লেন্স এন্ড ক্যাটারেক্ট প্রসিডিউরস (Lens and cataract procedures)
বি-স্ক্যান (B-scan)
আই এক্সাম (Eye exam)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

সাধারণত নিম্নে লিখিত বিয়ষগুলি ছানির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • বয়স বৃদ্ধি।
  • ডায়াবেটিস
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান।
  • তীব্র সূর্যালোকের সংস্পর্শে যাওয়া।
  • তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব (এক্স-রে ও ক্যানসার রেডিয়েশন থেরাপি)।
  • পরিবার/বংশে ছানিতে আক্রান্ত ব্যক্তি থাকা।
  • উচ্চ রক্তচাপ।
    • শরীরের অতিরিক্ত ওজন/ স্থূলতা।
    • পূর্বে চোখে আঘাত লাগা বা ইনফ্লামেশন হওয়া।
    • পূর্বে চোখে সার্জারি হওয়া।
    • দীর্ঘ দিন কর্টিকোস্টেরয়েড (corticosteroid) ঔষধ গ্রহণ।
    • ধূমপান

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে।

 জাতি: কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপ্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ ছানির অপসারণ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করছে। যদি ছানির কারণে দৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তবে সার্জারি পরবর্তীতে করা যেতে পারে। চশমা ব্যবহার করলেও যদি আপনার দৃষ্টির উন্নতি না হয়, তাহলে চিকিৎসক আপনাকে সার্জারি করার পরামর্শ দিতে পারেন। এর কারণে দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হলে সার্জারির প্রয়োজন হয়। তবে এই সিদ্ধান্ত আপনার চিকিৎসক ও আপনার উপর নির্ভর করছে।

উত্তরঃ ছানি কতোটা অপসারণ করার মতো অবস্থায় আছে, তার উপর ভিত্তি করে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ম্যাচিওর ক্যাটার‌্যাক্টের কারণে ঘোলা দৃষ্টি, চোখ ঝলসানোর মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এর কারণে আপনার দৈনন্দিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। নন ম্যাচিওর ক্যাটার‌্যাক্টের ক্ষেত্রে কম লক্ষণ দেখা দেয়।

উত্তরঃ চোখের ছানি প্রতিরোধ করার কোনো উপায় এখনো পাওয়া যায়নি। তবে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণ, ইউ-ভি প্রোটেকশন (uv protection), ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপান ত্যাগের মাধ্যমে ছানির বৃদ্ধি রোধ করা যেতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

ছানি প্রতিরোধের  কোনো নির্দিষ্ট উপায় নেই। তবে নিম্নে লিখিত বিষয়গুলি অণুসরণ করে রোগটির ঝুঁকি কমানো যেতে পারে:

নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা: নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা হলে ছানি বা চোখের অন্যান্য রোগ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কতো দিন পর পর আপনার চোখ পরীক্ষা করানো উচিৎ, সে ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ধূমপান ত্যাগ করুন: ঠিক কি উপায়ে ধূমপান ত্যাগ করা যায় সে ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ঔষধ গ্রহণ, কাউন্সিলিং ও আরও কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে ধূমপান ত্যাগ করা সম্ভব।

অ্যালকোহল পরিত্যাগ: অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ চোখের ছানির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।

সানগ্লাস: সূর্য থেকে নির্গত অতি বেগুনী রশ্মি ছানি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই বাইরে চলাফেরার সময় সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

অন্যান্য শারীরিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা: ডায়াবেটিস বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা ছানি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। তাই আপনার এসব রোগ থাকলে চিকিৎসা করান।

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: আপনার শরীরের ওজন স্বাভাবিক থাকলে, তা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন। শরীরের ওজন অতিরিক্ত হলে, কম পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ এবং ব্যায়াম করার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রনে রাখুন।

বেশি পরিমাণে ফল ও শাকসবজি গ্রহণ:  বেশি  পরিমাণে ফল ও শাকসবজি গ্রহণ করলে শরীরের ভিটামিন ও নিউট্রিয়েন্টের অভাব দেখা দেয় না। এছাড়া ফল  ও  সবজিতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে,  যেগুলি চোখের জন্য উপকারী।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঔষধ আকারে সেবন করলে তা চোখের ছানি প্রতিরোধ করে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে ছানি হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

লেঃ কর্ণেল ডাঃ এস এম মকবুল আহমদ (অবঃ)

অফথ্যালমোলজি ( চক্ষু) ( Ophthalmology)

এমবিবিএস(ডিইউ),, ডিও(ডিইউ), , এমসিপিএস(ঢাকা)

ডাঃ মোঃ গোলাম মোর্শেদ

অফথ্যালমোলজি ( চক্ষু) ( Ophthalmology)

এমবিবিএস(আরএমসি) , ডিও(এন আই ও)

ডাঃ মোঃ হারুন-উর রশীদ

অফথ্যালমোলজি ( চক্ষু) ( Ophthalmology)

এমবিবিএস, ডিও, এমএস(চক্ষু), এফজিও(ভারত)

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শাহাব উদ্দীন

অফথ্যালমোলজি ( চক্ষু) ( Ophthalmology)

এমবিবিএস, , ডিও(চক্ষু), , এমএস(চক্ষু)

ডাঃ লেঃ কর্ণেল নাতাশা কাজমিনা

অফথ্যালমোলজি ( চক্ষু) ( Ophthalmology)

এমবিবিএস, ডিও

ডাঃ শরিফা জাহান মিতু

অফথ্যালমোলজি ( চক্ষু) ( Ophthalmology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস, এমএস(অর্থো)

অধ্যাপক ডাঃ সারওয়ার আলম

অফথ্যালমোলজি ( চক্ষু) ( Ophthalmology)

ডিও, এফসিপিএস, ফেলো কর্নিয়া (জন হপকিন্স হসপিটাল)

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শফিকুল আলম

অফথ্যালমোলজি ( চক্ষু) ( Ophthalmology)

এফসিপিএস, এমএস(চক্ষু), ডিও, এমবিবিএস,(ডিইউ)