ফুসফুসের ক্যান্সার (Lung cancer)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

ফুসফুসের কোষের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে হলে ফুসফুসের ক্যান্সার দেখা দেয়। ফুসফুসের কোষ থেকে এই ক্যান্সার হতে পারে আবার শরীরের অন্য কোনো স্থানের টিউমার অনেকদিন যাবৎ  থাকলে এবং চিকিৎসা না করা হয় তবে তা থেকেও এই ক্যান্সার হতে পারে (মেটাস্টেসিস)। এটি প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো ব্যক্তিরই হতে পারে। সাধারণত যাদের বয়স ৪০ থেকে ৭০ এর মধ্যে তাদের এটি বেশি হয়। অন্য কোনো ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির তুলনায় এই ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হার বেশি। বর্তমানে অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। এই ক্যান্সারের কারণে  ফুসফুসের টিস্যু এবং এর আশেপাশের অঙ্গগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফুসফুসের ক্যান্সার দুই প্রকার-
  • স্মল সেল লাং ক্যান্সার (Small cell lung cancer)
  • নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (Non-small cell lung cancer)

কারণ

ধূমপানের কারণে অধিকাংশ ফুসফুসের ক্যান্সার হয়। ধূমপায়ী এবং যারা ধূমপায়ীর সংস্পর্শে থাকে তাদের এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু যারা ধূমপায়ী নয় এবং ধূমপায়ীর সংস্পর্শে থাকে না তাদেরও ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। তাই এই ক্যান্সারের সঠিক কারণ কি তা বলা যায় না।

ধূমপানের কারণে যেভাবে ফুসফুসের ক্যান্সার হয়

চিকিৎসকেরা বিশ্বাস করেন যে, ধূমপান ফুসফুসের কোষ আবরণী নষ্ট করে ফেলে। যখন কার্সিনোজেন (Carcinogen)এ পূর্ণ সিগারেটের ধোঁয়া শরীরের ভিতরে যায় তখন তা ফুসফুসের টিস্যুতে খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটে।

প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার শরীর এই ক্ষতি থেকে সেরে উঠতে পারে। কিন্তু বারবার ধূমপানের কারণে ফুসফুসের সুস্থ কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়।

ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রকারভেদ:

চিকিৎসকেরা ফুসফুসের ক্যান্সারকে দুই ভাগে ভাগ করেছে-

  • স্মল সেল লাং ক্যান্সার (Small cell lung cancer): যারা অধিক ধূমপান করে, তাদের এটি বেশি হয়ে থাকে।
  • নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (Non-small cell lung cancer): এই ক্যান্সারের মধ্যে বিভিন্ন ক্যান্সার যেমন স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা, এডেনোকার্সিনোমা এবং লার্জ সেল কার্সিনোমা অন্তর্ভুক্ত।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

bevacizumab cisplatin
dexamethasone erlotinib
paclitaxel

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
বায়োপসি (Biopsy)
ব্রঙ্গোস্কপি এন্ড বায়োপসি অফ ব্রঙ্কাস (Bronchoscopy and biopsy of bronchus)
সিটি স্ক্যান চেস্ট (CT scan chest)
ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এম-আর-আই) (Magnetic resonance imaging (MRI))
প্লেইন এক্স-রে (Plain x-ray)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়ের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়:
  • মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান করা হলে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে যদি ধূমপান ছেড়ে দেওয়া হয়  তবে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
  • ধূমপায়ীর সংস্পর্শে থাকলে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, নিকেল) সংস্পর্শে থাকলে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • বাবা-মা, ভাই-বোন কারো যদি ফুসফুসের ক্যান্সার থাকে, তবে আপনারও এটি হতে পারে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ  পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতিঃ  শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।  হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২ গুণ কম। কৃষ্ণাঙ্গ এবং অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ যারা ধূমপান করে তাদের মধ্যে ৮০% ব্যক্তির ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃত্যু হয়। তবে যারা ধূমপান করে না তাদেরও ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে।

উত্তরঃ যদিও আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা খুবই কম, তারপরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায়।

উত্তরঃ যারা ধূমপান করে না বা ধূমপায়ীর সংস্পর্শে থাকে না, তাদেরও জন্মগতভাবে এটি হতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সাপ্লিমেন্টাল অক্সিজেন এবং ঔষধ যদিও এই অবস্থায় স্বস্তি দেয় তবে সবসময় তা কাজ করে না। নিম্নলিখিত পন্থাগুলি মেনে চললে শ্বাসকষ্টের সময় স্বস্তি পাওয়া যায়:

  • শরীর শিথিল রাখতে হবে।
  • একটি আরামদায়ক স্থানে বিশ্রাম নিতে হবে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এছাড়াও ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

ফুসফুসের ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করার উপায় এখনও জানা যায় নি, তবে নিম্নের নিয়মগুলো মেনে চললে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

  • ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
  • ধূমপায়ীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
  • কর্মক্ষেত্রে বিষাক্ত পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

অধ্যাপক ডাঃ এম এন হুদা

অঙ্কোলজি ( ক্যান্সার) ( Oncology)

বিএসসি(ঢাকা), এমবিবিএস,(ঢাকা), ডিএমআরটি(পাঞ্জাব), ডিএমআরটি (লন্ডন), এমএসসি, এফএফআর(লন্ডন)

অধ্যাপক ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনার

অঙ্কোলজি ( ক্যান্সার) ( Oncology)

এমবিবিএস, এমফিল(রেডিওথেরাপি), আইএইএ ফেলো(থাইল্যান্ড, জাপান)

ডাঃ মোঃ মুকিতুল হুদা

অঙ্কোলজি ( ক্যান্সার) ( Oncology)

এমবিবিএস, এমফিল, এফসিপিএস(রেডিওথেরাপী)

ডাঃ মোঃ রফিকুল আলম

পালমোনোলজি ( ফুসফুস) ( Pulmonology), মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস , এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(চেষ্ট)

ডাঃ রকিব উদ্দীন আহমেদ

অঙ্কোলজি ( ক্যান্সার) ( Oncology)

এমবিবিএস, , এমডি(রেডিওথেরাপি)

ডাঃ লুবনা মরিয়ম

অঙ্কোলজি ( ক্যান্সার) ( Oncology)

এমবিবিএস, এমফিল, এফসিপিএস(রেডিওথেরাপি)

ডাঃ মোঃ শফিকুর রহমান

পালমোনোলজি ( ফুসফুস) ( Pulmonology)

এমবিবিএস , ডিটিসিডি , এমপিএইচ (সিএম)

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আলী হোসেন

পালমোনোলজি ( ফুসফুস) ( Pulmonology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(চেষ্ট)