ধূমপানজনিত সমস্যা (Smoking problems)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

লক্ষণটি অতিরিক্ত ধূমপান করা হিসেবেও পরিচিত।

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপানের কারণে শরীরের প্রায় প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফুসফুসের সমস্যাজনিত কারণে যতো সংখ্যক মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে ৮৭%-ই ধূমপানের কারণে হয়ে থাকে। এটি আরও অনেক ধরনের ক্যানসার ও শারীরিক সমস্যার জন্য দায়ী, যেমন- ফুসফুসের রোগ, হৃৎপিণ্ডের রোগ, রক্তনালীর রোগ, স্ট্রোক ও চোখের ছানি ইত্যাদি। ধূমপায়ী মহিলাদের গর্ভধারণের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়া এ কারণে তাদের সন্তানদের সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রমের (এস-আই-ডিস) [sudden infant death syndrome (SIDS)] কারণে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা ধূমপায়ী নন তারাও ধূমপান দ্বারা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তামাক জাতীয় দ্রব্যের ধোঁয়া অধূমপায়ীদের নিঃশ্বাসের সাথে প্রবেশ করলে তাদেরও সেই সব রোগ হতে পারে যেগুলিতে ধূমপায়ীরা ভুগে থাকে।

ধূমপান ত্যাগ করলে এসব সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। আপনি যতো দ্রুত ধূমপান ত্যাগ করবেন ততো স্বাস্থ্যগতভাবে উপকৃত হবেন।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন:

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যে সকল বিষয়ের কারণে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় সেগুলো হল- 

  • বংশ: উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জিন একজন ব্যক্তির নিকোটিন নির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। ধূমপান করতে শুরু করা এবং তা চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কিছুটা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। সিগারেটের উচ্চ মাত্রার নিকোটিনের প্রতি মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের রিসেপ্টরগুলির (receptors) প্রতিক্রিয়া জিনগত কিছু কারণ দ্বারা প্রভাবিত।
  • পরিবার ও সঙ্গীদের প্রভাব: যেসব শিশুদের বাবা-মা ধূমপায়ী তাদেরও ধূমপায়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেসব শিশুদের বন্ধুরা ধূমপান করে তারাও অনেক ক্ষেত্রে ধূমপান করার চেষ্টা করে। এছাড়া সিনেমা ও ইন্টারনেটে ধূমপান করা দেখানো হলে অল্পবয়সীরা ধূমপান করতে উদ্বুদ্ধ হয় বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
  • বয়স: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শৈশব ও টিনএজে ধূমপানের সূত্রপাত হয়ে থাকে। কোনো ব্যক্তি যতো অল্প বয়সে ধূমপান করা শুরু করে, প্রাপ্তবয়স্ক হলে ততোই তার অতিরিক্ত মাত্রায় ধূমপান করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • বিষণ্নতা ও অন্যান্য মানসিক সমস্যা: বিষণ্নতা , সিজোফ্রেনিয়া, পোস্ট-ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (post-traumatic stress disorder) ও অন্যান্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ধূমপায়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • মাদকাসক্তি: সাধারণত অ্যালকোহল ও অন্যান্য মাদকদ্রব্যসেবী ব্যক্তিরা ধূমপায়ী হয়ে থাকে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। নারীদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতি: হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।  শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: এক্ষেত্রে মনে রাখা রাখা উচিত যে, সফলভাবে ধূমপান ত্যাগ করার পূর্বে ধূমপায়ীরা সাধারণত ২-৩ বার ধূমপান ত্যাগ করার চেষ্টা করে থাকেন। তাই ধূমপায়ীদের চিন্তা করে দেখতে হবে ঠিক কী কারণে ধূমপান ত্যাগে তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন। পূর্বের এই ধারণা  তাদের ভবিষ্যতে ধূমপান ত্যাগ করার পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে।

উত্তরঃ ধূমপান ত্যাগ করার পর বেশিরভাগ ব্যক্তিরই ওজন বেড়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে সাধারণত ১০ পাউন্ডের বেশি ওজন বাড়ে না। ধূমপান ত্যাগ করার পর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া ও সক্রিয় থাকা উচিৎ। ওজন বৃদ্ধির বিষয়টিকে কখনোই  ধূমপান ত্যাগ না করার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ নয়। ধূমপানরোধী কিছু ঔষধ গ্রহণ করে ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

উত্তর: ধূমপান করার ইচ্ছা হলে করো সাথে কথা বলা, হাঁটা, জল পান করা বা অন্য কোনো কাজ করা উচিত। এছাড়া মানসিক চাপ কমাতে গোসল করা, ব্যায়াম করা বা বই পড়া যেতে পারে। এছাড়া কোনো স্থাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

 

হেলথ টিপস্‌

ধূমপান ত্যাগ করতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করতে পারেন-

  • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাংসসহ বেশ কিছু খাদ্য গ্রহনের পর ধূমপায়ীদের কাছে ধূমপান আরও বেশি উপভোগ্য মনে হয়। অপরদিকে মাখন, ফল ও শাক-সবজি খেলে ধূমপান অস্বস্তিকর মনে হয়। তাই এ ধরনের খাদ্য গ্রহণ করলে ধূমপান ত্যাগ করা সহজ হয়।
  • পানীয় গ্রহণের অভ্যাস: ঝাঁজালো পানীয়, অ্যালকোহল, কোমল পানীয়, চা ও ফফি গ্রহণের পর ধূমপান বেশি উপভোগ্য মনে হয়। তাই বাইরে থাকার সময় বেশি পরিমাণে পানি ও জুস পান করুন। অনেক ধূমপায়ীর ক্ষেত্রে গ্রহণকৃত পানীয়ের পরিবর্তন ধূমপান করার ইচ্ছার উপর প্রভাব ফেলে।
  • ব্যায়াম করা: একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্যায়াম করলে(৫ মিনিটের জন্য হাঁটা বা স্ট্রেচ) ধূমপান করার আকাঙ্খা কমে যায়। ব্যায়াম মস্তিষ্ককে ধূমপানের আকাঙ্খা প্রশমণকারী রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন করতে সাহায্য করতে করে।
  • অধূমপায়ীদের সাথে থাকুন: অধূমপায়ীদের সাথে থাকার চেষ্টা করুন। ধূমপায়ীদের সঙ্গ ধূমপান করার আকাঙ্খা বৃদ্ধি করে।