নিউরোসিস চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমনঃ নিউরোটিক ডিজঅর্ডার (Neurotic Disorder) বা সাইকোনিউরোসিস (psychoneurosis) এবং এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে নিউরোটিক বলা হয়। নিউরোসিস এক প্রকারের মানসিক ব্যাধি। তবে এটি হ্যালুসিনেশন বা ডিলিউশনের মতো মারাত্মক নয়। এ অবস্থায় রোগী বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয় না।
ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয় এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমনঃ
বেকারত্ব
মা-বাবার ডিভোর্স
আর্থিক দুরাবস্থা
সামাজিক মর্যাদার অভাব
যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে
লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা একগুণ কম।
জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, অন্যান্য জাতির ক্ষেত্রে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা একগুণ কম।
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিউরোসিস শব্দের পরিবর্তে ডি-এস-এম ()শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ও-সি-ডি (OCD) বা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার হল এক ধরনের মানসিক ব্যাধি যে অবস্থায় ব্যক্তি একই কাজ বারবার করতে থাকে বা বারবার একই চিন্তা করতে থাকে।
ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তাজগতের সাথে যখন বাস্তবতার কোনো মিল থাকে না তখন তাকে সাইকোসিস বলা হয়। হেলুসিনেশন এক প্রকারের সাইকোটিক লক্ষণ কেননা এ অবস্থায় ব্যক্তি অবাস্তব চিন্তা ভাবনা করতে থাকে। একজন সাইকোটিক ভ্রান্ত ধারণা বা ডিলিউশনস এ বিশ্বাস করতে শুরু করে। এক্ষেত্রে নিউরোটিক ও সাইকোটিক রোগী এক নয়।
হেলথ টিপস্
একজন মানসিক রোগী সুস্থভাবে চিন্তা করা, নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা বা সঠিকভাবে আচরণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই ধরনের রোগীর সাথে বসবাস কোনো চ্যালেঞ্জ বা প্রতিদ্বন্ধিতার থেকে কম নয়। যদিও নিউরোসিস মারাত্মক কোনো মানসিক রোগ নয়, তবুও একজন নিউরোটিক রোগী নিজের আবেগ বা অনুভূতি সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। নিজের মধ্যেই চেপে রাখে। ফলে এ ধরনের ব্যক্তির সাথে যারা বসবাস করে বা এদের যত্নের কাজে যারা নিয়োজিত তাদের অত্যন্ত ধৈর্য্য ও পারদর্শিতার সাথে এ কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মনে রাখা উচিত। যেমনঃ
এ অবস্থায় রোগীকে সাহস দিতে হবে। তাদের মানসিক অবস্থা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা যাবে না।
একটানা ঘরে বসে থাকার পরিবর্তে তাকে বাইরের পরিবেশের সাথে মেলামেশা করার পরামর্শ দিন। বাইরের খোলা পরিবেশে কিছুক্ষণের জন্য হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করলে নিজের সমস্যাগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে এবং বাস্তবধর্মী চিন্তা করতে সাহায্য করবে।
মানসিক প্রশান্তির জন্য বিভিন্ন ব্রিদিং টেকনিক যেমনঃ ডায়াফ্রেগমেটিক ব্রিদিং (diaphragmatic breathing), মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম এবং প্রোগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেন (progressive muscle relaxation) করা যেতে পারে।
সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করুন ও আপনার কাছের মানুষটিকে যতটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করুন। গঠনমূলক পরামর্শ দানের মাধ্যমে তার মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।
যদি সম্ভব হয়, তবে নিজের এমন কোনো অভিজ্ঞতার কথা রোগীকে বলুন যা তার মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে।
রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এ অবস্থায় রোগীকে তার অবস্থা সম্পর্কে এমনভাবে বলতে হবে যাতে তার উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।