অতিরিক্ত রাগ (Excessive anger)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

আমরা যখন রেগে যাই, তখন এড্রেনালিন ও অন্যান্য হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে, যার ফলে রক্তচাপ বাড়তে থাকে। শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি দ্রুত হয়ে পড়ে ও হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। ফলে ব্যক্তি রাগের বশে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় রাগান্বিত ব্যক্তি নিজেকে বিদ্বেষপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিবেশের শিকার বলে বিবেচনা করতে থাকে।

অনেকেই রাগ বা ক্রোধকে একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। হাসি-কান্নার মত রাগ মানুষের একটি স্বাভাবিক আবেগ বা অনুভূতি। ব্যক্তি যখন কোনো হুমকি বা ভীতির সম্মুখীন হয় তখন সে এই পরিস্থিতিতে রাগ প্রদর্শন করে থাকে যা খুবই স্বাভাবিক একটি প্রতিক্রিয়া। এমনকি আমাদের বিভিন্ন কাজের পেছনে রাগ বা ক্রোধ একটি ইতিবাচক প্রভাবক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ব্যক্তির নিজের উপর। রাগের পরিমান মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে ও তা ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এটি অন্যকোনো মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারেঃ যেমন-

অতিরিক্ত মদ্যপান (Alcohol abuse) ডেঙ্গু জ্বর (Dengue fever)
টাইফয়েড জ্বর (Typhoid fever) বিষণ্নতা (Depression)
ডায়াবেটিস জনিত কিডনির রোগ (Diabetic kidney disease) ঔষধের অপব্যবহার (Drug abuse)
অস্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস (Eating disorder) সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia)
লেইশম্যানিয়াসিস বা কালাজ্বর (Leishmaniasis) রেবিস / জ্বলাতঙ্ক (Rabies)
ব্যক্তিত্বের ব্যাধি (Personality disorder) পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (Post-traumatic stress disorder)
বাইপোলার ডিজঅর্ডার (Bipolar disorder) ব্লাস্টোমাইকোসিস (Blastomycosis)
ফ্যাট এমবলিজম (Fat embolism) চ্যাগাস ডিজিজ (Chagas disease)
শ্যাংক্রয়েড (Chancroid) রকি মাউন্টেইন স্পটেড ফিভার (Rocky Mountain spotted fever)
সাইটোমেগালোভাইরাস ইনফেকশন (Cytomegalovirus infection) মারিজুয়ানা অ্যাবিউজ (Marijuana abuse)
নিউরোসিস (Neurosis) কনডাক্ট ডিজঅর্ডার (Conduct disorder)
ডেভলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি (Developmental disability) ডিসোশিয়েটিভ ডিজঅর্ডার (Dissociative disorder)
ডিজথাইমিক ডিজঅর্ডার (Dysthymic disorder) গ্যাস গ্যাংরিন (Gas gangrene)
এয়ার এমবলিজম (Air embolism) লেপ্টোস্পাইরোসিস (Leptospirosis)
স্পোরোট্রাইকোসিস (Sporotrichosis) অ্যাস্পারজারস সিন্ড্রোম (Asperger's syndrome)
টরেট সিন্ড্রোম (Tourette syndrome) অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার (এ-ডি-এইচ-ডি) (Attention deficit hyperactivity disorder (ADHD))

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যেসকল কারণে এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় সেগুলো হলোঃ

  • শৈশবে যৌন হয়রানি বা একাধিকবার নির্যাতনের শিকার হলে।
  • অ্যালকোহল বা নেশাজাতীয় দ্রব্যের অপব্যবহার।
  • বিশ বছর বয়সের দিকে ও বয়সন্ধিকালে ।
  • পুরুষদের ক্ষেত্রে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা একগুণ কম।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ দের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, হিস্পানিক ও অন্যান্যদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা একগুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ ক্রোধ বা রাগের মাত্রা বেড়ে গেলে, কোনো ধরনের ঔষধ ছাড়াই এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। অনেকেই ভারী পরীশ্রম বা অনুশীলনের মাধ্যমে রাগ প্রশমিত করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আগে বুঝতে হবে রাগের কারণ কি, যাতে এই সমস্যার যথাযথ চিকিৎসা বা সমাধান বের করা যায়। তবে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সাইকোথেরাপিস্টের সাহায্য নিতে হবে। 

উত্তরঃ এক্ষেত্রে রাগের মূল কারণ বা কি বিষয়ে একজন ব্যক্তি রাগান্বিত হয়ে পড়ে সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। 

উত্তরঃ রাগ বা ক্রোধ এ-ডি-এইচ-ডি (ADHD) এর একটি লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশু তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না ও খুব দ্রুত রাগান্বিত হয়ে পড়ে। 

হেলথ টিপস্‌

মাত্রাতিরিক্ত রাগ ও আক্রামণাত্মক আচরণ এড়িয়ে চলতে করণীয়ঃ

  • রাগ প্রকাশের আগে কিছুক্ষণের জন্য সময় নিয়ে শান্ত হতে হবে। এক্ষেত্রে ১-১০ পর্যন্ত গণনা করুন ও ধীরে ধীরে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করুন।
  • যেসকল কারণে ব্যক্তি রাগান্বিত হয়ে পরে তা এড়িয়ে চলতে হবে। দৈনন্দিন যেকোনো সমস্যা যেমনঃ চাকরির ক্ষেত্রে বা ব্যক্তিগত সম্পর্কে সমস্যা দেখা দিলে ব্যক্তি বিষন্ন ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে যার ফলে রাগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
  • রাগান্বিত হওয়ার যেকোনো একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তির আচরনের কারণে রাগ হয় তবে এ ক্ষেত্রে নিজেকে সংযত রাখতে হবে।
  • যেসকল পরিস্থিতিতে ব্যক্তি রাগান্বিত হয়ে পড়ে তা এড়িয়ে চলতে হবে।
  • রাগ নিয়ন্ত্রণ বা প্রকাশের জন্য অন্যকোনো উপায় বের করতে হবে। যেমনঃ ছবি আঁকা, গান শোনা, জগিং ইত্যাদি।
  • রাগান্বিত অবস্থায় নিজেকে মূল্যায়নের জন্য অন্যের দোষত্রুটি না দেখে নিজের দোষত্রুটির উপর জোড় দিতে হবে।

এছাড়াও যেসকল বিষয়ের প্রতি যত্নশীল হতে হবে সেগুলো হলোঃ

  • নিয়মিত ব্যায়াম বা অনুশীলন করতে হবে।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
  • প্রতিদিন ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
  • মদ্যপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।
  • মানসিক প্রশান্তির জন্য মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করতে হবে।