ব্যক্তিত্বের ব্যাধি (Personality disorder)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

কয়েক প্রকারের মানসিক অসুস্থতা/সমস্যাকে একত্রে ব্যক্তিত্বের ব্যাধি বা পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার বলা হয়। ব্যক্তিত্বের ব্যাধি বলতে মূলত সেই সব অস্বাভাবিক চিন্তা ও আচরণকে বোঝায়, দীর্ঘ সময় ধরে যেগুলির কোনো পরিবর্তন ঘটে না। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণ অন্য ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক এবং বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে। এ কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অন্যদের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে।

এই রোগের লক্ষণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। লক্ষণগুলি কম বা বেশি মাত্রার হতে পারে। রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় তাদের সমস্যাগুলি উপলব্ধি করতে পারেন না । তাদের কাছে নিজেদের চিন্তা ও আচরণ স্বাভাবিক মনে হয়, এবং তাদের কারণে সৃষ্ট সমস্যার জন্য তারা অন্যদের দায়ী করে থাকে। সাধারণত টক থেরাপির (talk therapy ) বা কাউন্সেলিং [আক্রান্ত ব্যক্তিকে রোগটি সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া] এর মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের ব্যাধির চিকিৎসা করা হয়্। তবে কিছু ক্ষেত্রে ঔষধের মাধ্যমেও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

কারণ

ব্যক্তিত্ব হল একজন ব্যক্তির চিন্তা, আবেগ এবং আচরণের সমষ্টি, যা তাকে অন্যদের চেয়ে পৃথক করে তোলে। একজন ব্যক্তি কীভাবে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে ব্যাখা করছে, এবং নিজের সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করছে, তা তার ব্যক্তিত্বের উপর  নির্ভর করে। ব্যক্তিত্ব শৈশবে গঠিত হয়, এবং দুটি বিষয়ের উপর নির্ভব করে:

  • জিন: জিনগত কারণে  পিতা-মাতার ব্যক্তিত্বের কিছু বৈশিষ্ট্য সন্তানের মাঝে দেখা দেয়। এই  বৈশিষ্ট্যগুলি একজন ব্যক্তির স্বভাব গঠনে ভূমিকা রাখে।
  • পরিপার্শ্ব: একজন ব্যক্তি কোন পরিবেশে বেড়ে উঠেছে, তার জীবনে কী কী ঘটনা ঘটেছে এবং তার সাথে  পরিবারের সদস্য ও অন্যদের সম্পর্ক কেমন ইত্যাদি বিষয়ের উপর ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে।

ধারণা করা হয় যে, জিনগত ও পারিপার্শ্বিক প্রভাবের কারণে ব্যক্তিত্বের ব্যাধি দেখা দেয়। আপনার জিন  ব্যক্তিত্বের ব্যধি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, এবং জীবনের কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতি বাস্তবে এই ব্যাধির সৃষ্টি হওয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

লক্ষণ

আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

]চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:    

escitalopram oxalate fluoxetine hydrochloride
olanzapine paroxetine hydrochloride
quetiapine sertraline hydrochloride
sodium valproate

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:    

সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
সিটি স্ক্যান অফ হেড (CT scan of head)
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ই-সি-জি) (Electrocardiogram, ECG)
এক্স-রে, চেস্ট পি-এ ভিউ (X-ray, Chest P/A view)
ইউরিন এনালাইসিস (Urinalysis)
টক্সিকোলজি স্ক্রিন (Toxicology screen)
ডিপ্রেশন স্ক্রিনিং (Depression screen)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি ব্যক্তিত্বের ব্যাধি হওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে:

  • পরিবার/বংশে কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের ব্যাধি বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যা থাকা।
  • শিক্ষার অভাব, সামাজিক মর্যাদার অভাব এবং অর্থনৈতিক দুরাবস্থা
  • শৈশবে মৌখিক, শারীরিক ও যৌন নিপীড়ন।
  • শৈশবে পারিবারিক অশান্তির মাঝে থাকা বা বঞ্চনার শিকার হওয়া।
  • মস্তিষ্কের গঠন ও রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তন হওয়া।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: নারীদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে। পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাত: হিস্প্যানিক মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে। কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নেশাগ্রস্ত ও অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া এ ধরনের ব্যক্তিদের বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা এবং বাইপোলার ডিজঅর্ডারের  (bipolar disorder) মতো মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যক্তিরা আত্মহত্যা করতে পারে বা দুর্ঘটনায় মারা যেতে পারে।

উত্তর: অসামাজিক আচরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিত্বের ব্যাধি তীব্র আকার ধারণ করলে তাকে সাইকোপ্যাথি বলে। একজন ব্যক্তি অসামাজিক আচরণ করলে, এবং  নিজের ক্রিয়াকলাপের জন্য তার কোনো অনুশোচনাবোধ না থাকলে তাকে  সাইকোপ্যাথ (psychopath) বলা হয়।

হেলথ টিপস্‌

ব্যক্তিত্বের ব্যাধি মোকাবেলা করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করুন:

  • কারো প্রশ্ন বা মন্তব্য আপনার খারাপ লাগলে উত্তর দেওয়ার আগে ৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন, এবং নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।
  • উত্তেজিত হয়ে পড়লে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে, সেই মুহূর্তে উত্তেজনাবশত কিছু করলে ফলাফল খারাপ হতে পারে।
  • গুরূত্বপূর্ণ কোনো কিছু করার পূর্বে থেরাপিস্টের সাথে সে ব্যাপারে আলোচনা করুন।
  • নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ জুবায়ের মিয়া

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এমফিল(সাইকিয়াট্রি)

অধ্যাপক ডাঃ এম এ হামিদ

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এফসিপিএস

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান (অবঃ)

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সাইকিয়াট্রি)

ডাঃ সুরজিত কুমার তালুকদার

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সাইক্রিয়াট্রি)

ক্যাপ্টেন ডাঃ এ এস এম আনিসুজ্জামান

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস (ঢাকা), ডি-সাইক, এফ-সাইক (ভিয়েনা)

ডাঃ অনুপম দাশ

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এমফিল, এমডি

ডাঃ মোহাম্মদ শামসুল আহসান মাকসুদ

মেডিসিন ( Medicine), সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এম বি বি এস, এম ফিল, এফ সি পি এস

ডাঃ মোঃ জোবায়ের মিয়া

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, , এমফিল(সাইকিয়াট্রি)