ভয় এবং আতংক (Fears and phobias)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

লক্ষণটি অ্যাগরোফোবিয়া (Agoraphobia) বা ফোবিয়া নামেও পরিচিত।অযৌক্তিকভাবে কোনো বিষয়ের কারণে সৃষ্ট তীব্র ভয়কে ফোবিয়া বলে।

কোনো বিষয়ের কারণে বিপদের তেমন সম্ভাবনা না থাকলেও ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সেটির জন্য উদ্বিগ্ন বোধ করেন এবং সেটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।

বক্তৃতা বা পরীক্ষা দেওয়ার সময় অনেক ব্যক্তি ক্ষণস্থায়ী ভাবে যেমন ভয় অনুভব করে থাকে ফোবিয়ার কারণে সৃষ্ট ভয় তেমন নয়। ফোবিয়া দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয় এবং তীব্র মানসিক ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এছাড়া এটি কর্মক্ষেত্র ও সামাজিক ক্ষেত্রেও একজন ব্যক্তির ক্রিয়াশীলতার উপর প্রভাব ফেলে।

ফোবিয়া বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিছু কিছু ব্যক্তি উন্মুক্ত ও বৃহৎ স্থান ভয় পেতে পারে। অনেকের সামাজিক কিছু পরিস্থিতি অসহ্য বোধ হতে পারে। এছাড়া সাপ, এলিভেটর ও বিমানে চড়ার মতো নির্দিষ্ট কিছু বিষয়েও অনেকের ভয় থাকতে পারে।

সব ধরনের ফোবিয়ার চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে ফোবিয়ার কারণে যদি কোনো ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, তাহলে তা দূর করার জন্য থেরাপি নেওয়া যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে থেরাপির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ফোবিয়া নিরাময় করা সম্ভব।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন-

  • স্কিজোফ্রেনিয়া থাকলে।
  • হতাশা, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের কারণে হতে পারে।
  • মানসিক সমস্যা থাকলে।
  • বাইপোলার ডিজঅর্ডার দেখা দিলে।
  • সামাজিকতার ভয় থাকলে।
  • পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার থাকলে।
  • পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার।

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নোক্ত বিষয়গুলি ফোবিয়া হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে-

বয়স

সোশাল ফোবিয়ার (Social phobia) সূত্রপাত মূলত অল্প বয়সেই (সাধারণত ১৩ বছরের আশেপাশে) ঘটে। তবে কিছু কিছু ফোবিয়া ১০ বছর বয়স নাগাদ প্রথম দেখা দেয়। অ্যাগরোফোবিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া তরুণ ও তাদের চেয়ে কিছুটা কম বয়সীদের।

পরিবার/বংশ

আপনার পরিবারের কোনো ব্যক্তির নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে ফোবিয়া থাকলে আপনারও তা হতে পারে। এটি জন্মগতভাবেই সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া পরিবারের কোনো সদস্যের ফোবিয়াজনিত প্রতিক্রিয়া দেখে শিশুদের মধ্যেও ফোবিয়া সৃষ্টি হতে পারে।

মানসিক অবস্থা

কোনো ব্যক্তি মানসিকভাবে সংবেদনশীল, সংযত এবং নেতিবাচক হলে তার ফোবিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ট্রমাসৃষ্টিকারী ঘটনা

এলিভেটরে আটকে পড়া বা কোনো পশুর দ্বারা আক্রমণ হওয়ার মতো ট্রমাসৃষ্টিকারী ঘটনা ফোবিয়া হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: ভয় মানুষের অন্যতম মৌলিক একটি অনুভূতি/আবেগ। ভয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য এবং এটি আমাদের মাঝে একটি প্রবৃত্তির মতো কাজ করে। কোনো বিপদ বা অনিরাপদ অবস্থার কারণে ভয়ের সৃষ্টি হলে, তা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য আমাদের মাঝে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শৈশবেই এই প্রবৃত্তিটির সূত্রপাত ঘটে।

সাধারণভাবে ফোবিয়া অতি তুচ্ছ মনে হলেও ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে এটি অত্যন্ত গুরুতর। ফোবিয়া একজন ব্যক্তির জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন-

  • সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা।
  • বিষণ্নতা।
  • মাদকাসক্তি।
  • আত্মহত্যা।

হেলথ টিপস্‌

আপনার যদি অকারণে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে, তাহলে আপনার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। বিশেষত আপনার যদি সন্তান থাকে তাহলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আপনার জন্য বেশি প্রয়োজনীয়। আপনার ফোবিয়া নিরাময় করলে আপনার সন্তানদের ফোবিয়া দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। ফোবিয়া নিরাময়ের জন্য নিজে থেকে এই বিষয়গুলি মেনে চলুন-

আপনি যে বিষয়গুলিতে ভয় পান সেগুলি এড়িয়ে না চলা।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করা।

ঠিকমতো বিশ্রাম নেওয়া, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ করা এবং প্রতিদিন শরীর সক্রিয় রাখা।

আপনার ভয় সম্পর্কে মুক্তভাবে কথা বলা।

ফোবিয়ার ব্যাপারে নিজের উপর চাপ সৃষ্টি না করা।

সতর্কতা

শিশুরা সাধারণত অন্ধকার, দৈত্য (কাল্পনিক) ও একা থাকার মতো বিষয়ে ভয় পায়। বয়স বাড়লে এই ভয় স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। তবে আপনার শিশুর ভয় যদি দীর্ঘ সময় ধরে তীব্ররূপে দেখা দেয় এবং এজন্য যদি তার স্বাভাবিক ক্রিয়াশীলতা ব্যাহত হয়, তাহলে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।