সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

সিজোফ্রেনিয়া একটি গুরুতর মানসিক ব্যাধি। এর ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বিঘ্নিত হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি বাস্তব ঘটনাকে অতিপ্রাকৃত ও অবাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা ব্যাখ্যা করে থাকে। সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের মধ্যে একটি কাল্পনিক জগত তৈরি করে নেয়, এবং তার চিন্তা-ভাবনা ও কাজকর্মের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল থাকে না। ধীরে ধীরে আক্রান্ত ব্যক্তি হ্যালুসিনেশন, বিভ্রম ও অন্যান্য মানসিক সমস্যার শিকার হয়।

সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। যেমন প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এটিকে সংজ্ঞায়িত করা হয় একাধিক ব্যক্তিত্বের সমন্বয় হিসেবে। যদিও সিজোফ্রেনিয়ার বুৎপত্তিগত অর্থ হল “Split mind” (দ্বিখন্ডিত/বিভক্ত মন), তবে সিজোফ্রেনিয়া বলতে মূলত একজন ব্যক্তির আবেগ ও চিন্তা-ধারার ভারসাম্যহীনতা বা অসামঞ্জস্যতাকে বোঝায়। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক সমস্যা এবং এ ধরনের রোগীর আজীবন চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণে থাকার প্রয়োজন হয়।

কয়েক ধরনের সিজোফ্রেনিয়া দেখা যায়। যেমন-

  • প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া (Paranoid Schizophrenia): এর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়ে, নিজেকে বিভিন্ন কারণে নির্যাতিত ভাবে এবং আশেপাশের মানুষের ব্যাপারে অহেতুক সন্দেহ প্রকাশ করে। কেউ তার ক্ষতি করতে চাচ্ছে বা তার ব্যাপারে সমালোচনা করছে- সবসময় এ রকম করে থাকে।
  • ডিসঅর্গানাইজড সিজোফ্রেনিয়া (Disorganized Schizophrenia): এর কারণে কথাবার্তা ও চিন্তাধারায় অসংলগ্নতা দেখা দেয়। তবে এতে আক্রান্ত ব্যক্তি বিভ্রমের শিকার হয় না।
  • ক্যাটাটোনিক সিজোফ্রেনিয়া (Catatonic Schizophrenia): এতে আক্রান্ত ব্যক্তির আবেগ বা আচরণগত পরিবর্তন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে তার কথা বলা ও অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি সে কোনো কিছুর প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাতেও সক্ষম হয় না।
  • রেসিডিউয়াল সিজোফ্রেনিয়া (Residual Schizophrenia): এর  কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি বেঁচে থাকার সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং হতাশ হয়ে পড়ে।
  • সিজোএফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (Schizoaffective Disorder): এর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে সিজোফ্রেনিয়ার সাথে বিষণ্নতার মতো অন্যান্য মুড ডিসঅর্ডারের লক্ষণ দেখা দেয়।

কারণ

ঠিক কি কারণে সিজোফ্রেনিয়া হয় তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায় নি। তবে গবেষকদের মতে, জেনেটিক ও পরিবেশগত বিভিন্ন কারণে সিজোফ্রেনিয়া হয়ে থাকে।

মস্তিষ্কের জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি দেখা দিলে সিজোফ্রেনিয়া হতে পারে। ডোপামিন ও গ্লুটামেটসহ মস্তিষ্কে যেসকল জৈব-রাসায়নিক উপাদান (Neurotransmitters) থাকে সেগুলি এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। এ উপাদনগুলোর ভারসাম্যে ত্রুটি দেখা দিলে সিজোফ্রেনিয়া হয়ে থাকে। নিউরো ইমেজিং (Neuroimaging) গবেষণায় দেখা গেছে, সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কের গঠন ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তবে এই পরিবর্তনগুলো সিজোফ্রেনিয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু সক্রিয় ভূমিকা রাখে সে ব্যাপারে গবেষকেরা নিশ্চিত নয়।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:  

chlorpromazine hydrochloride clozapine
fluphenazine decanoate haloperidol
olanzapine risperidone
perphenazine pimozide
sulpiride

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:  

কগনিটিভ বিহেবিয়ার থেরাপী (Cognitive Behavior Therapy, CBT)
ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (Electro Convulsive Therapy, ECT))

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যদিও সিজোফ্রেনিয়ার সঠিক কারণ এখনও অজানা, তবে কয়েকটি কারণে সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন-

  • জেনেটিক বা বংশগত কারণ।
  • গর্ভাবস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মাতৃগর্ভে শিশু কোনো ভাইরাস বা বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসলে বা অপুষ্টির শিকার হলে।
  • ইনফ্লামেশন বা অটোইমিউন ডিজিজের জন্য দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো অধিক সক্রিয় হয়ে পড়লে।
  • নবজাতকের বাবার বয়স বেশি হলে।
  • বয়ঃসন্ধিকালে ও প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় সাইকোঅ্যাক্টিভ বা সাইকোট্রপিক ঔষধ ব্যবহার করলে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতি: কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ বেশি। শ্বেতাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা একগুণ কম। অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ সিজোফ্রেনিয়ার পূর্বলক্ষণগুলো হলো:

  • অলীক বা অবাস্তব কোনো কিছু দেখা বা শোনা।
  • সার্বক্ষণিকভাবে কেউ নজর রাখছে এমন অনুভূতি হওয়া।
  • অদ্ভুত বা অসংলগ্নভাবে লেখা বা কথা বলা।
  • অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি।
  • কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া।
  • ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আসা।
  • স্বাস্থ্যসুরক্ষার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে যাওয়া ও চেহারায় পরিবর্তন আসা।
  • সামাজিক কাজকর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়া।
  • কাছের মানুষের প্রতি বিরক্তিভাব ও রাগ পোষণ করা।
  • ঘুমাতে অসুবিধা হওয়া এবং কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা।
  • অসংলগ্ন আচরণ।
  • ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ভাবে মগ্ন হয়ে পড়া।

উত্তরঃ সিজোফ্রেনিয়া একজন ব্যক্তির জীবনে অন্যান্য যেসকল সমস্যা সৃষ্টি করা থাকে সেগুলো হলোঃ

  • আত্মহত্যা
  • নিজেই নিজের ক্ষতি করা।
  • উদ্বেগ ও ভীতি সৃষ্টি করা।
  • অ্যালকোহল, মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার।
  • দারিদ্রতা।
  • গৃহহীন হয়ে পড়া।
  • পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও কলহ।
  • কাজ করতে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া।
  • নিজেকে সবকিছু থেকে আলাদা করে রাখা।
  • উগ্র বা আক্রমণাত্মক আচরণ।

উত্তরঃ যথাযথ চিকিৎসা ও রিহেবিলিটেশন থেরাপির সাহায্যে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। তবে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য চিকিৎসার সাথে সাথে প্রয়োজন ভালোবাসা ও একটি বন্ধুত্বপূর্ণ অনুকূল পরিবেশ।

হেলথ টিপস্‌

সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনে যতোটা সমস্যা তৈরি করে, তার পরিবার ও আশেপাশের মানুষের জন্যও ঠিক ততোটাই জটিলতার সৃষ্টি করে। এটি একটি জটিল ব্যাধি হলেও সঠিক চিকিৎসা, পরিবারের সাহায্য ও আন্তরিকতার সাহায্যে আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

তবে সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে আমাদের সমাজে বিভিন্ন ভুল ধারণা ও কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। এই ধরনের রোগীদের পাগল বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা, অপমান করাসহ চিকিৎসাবঞ্চিত রাখা হয়। সামাজিক বৈষম্য ও লোকলজ্জার ভয়ে এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লাঞ্ছিত জীবন যাপন করতে হয়। তাঁরা সম্মানহীন, বন্ধুহীন ও আত্মীয়স্বজনহীন জীবন যাপন করে। সামাজিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়, সর্বোপরি ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত থাকে না।  বিজ্ঞানের এই যুগেও এ ধরনের ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন কবিরাজি পন্থা ও ঝাঁড়ফুকের প্রচলন আছে এবং অধিকাংশ মানুষের এ ব্যাপারে অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। কিন্তু এই কুসংস্কার রোগীকে কোনোভাবেই ভালো করে না বরং তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। সিজোফ্রেনিয়ার কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকলেও এ রোগের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে দ্রুত চিকিৎসা করালে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ জিল্লুর রহমান খাঁন(রতন)

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস,, এমপিএইচ(ইপিড),, এফসিপিএস(সাইকিয়াট্রি)

ডাঃ সুরজিত কুমার তালুকদার

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সাইক্রিয়াট্রি)

প্রফেসর কর্ণেল এম. কামরুল হাসান

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এমসিপিএস, এমফিল

লে. কর্ণেল ডাঃ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সাইকিয়াট্রি), এমআরএসএইচ(লন্ডন)

ডাঃ মোঃ ফখরুজ্জামান শহীদ

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এমডি(সাইকিয়াট্রি), ডিএইচপিই (অস্ট্রলিয়া), ডিসিএম(ঢাকা)

ডাঃ মোঃ জুবায়ের মিয়া

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এমফিল(সাইকিয়াট্রি)

অধ্যাপক ডাঃ সাহিদা চৌধুরী

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, ডিপিএম

ডাঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, , এমসিপিএস, , এফসিপিএস(সাইকিয়াট্রি)