অনিদ্রা (Insomnia)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

ব্যক্তিভেদে ঘুমের মাত্রা ভিন্ন হতে পারে। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা বলতে বুঝায় দীর্ঘদিন ধরে ঘুম না হওয়া, বারবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, দৈনিক আট ঘন্টা ঘুমানোর পরও ক্লান্তিভাব দূর না হওয়া বা অল্প ঘুম হওয়া। এর ফলে সারাদিন খিটখিটে ভাব থাকে। ব্যক্তির কর্মক্ষমতা, মনোযোগ ও বুদ্ধিমত্তাও এ জন্য হ্রাস পেতে পারে। প্রায় প্রত্যেক ব্যক্তির কখনো না কখনো অনিদ্রাজনিত সমস্যায় ভুগে থাকে। তবে কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করে। অনিদ্রা যেকোনো অসুস্থতার কারণে বা নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ব্যবহারের কারণে হতে পারে।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারেঃ যেমন-   

যোনিদ্বারের ক্যান্সার (Vulvar cancer) দুশ্চিন্তা/উদ্বেগ (Anxiety)
বিষণ্নতা (Depression) থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia)
ঔষধের অপব্যবহার (Drug abuse) অস্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস (Eating disorder)
সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia) ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (Irritable bowel syndrome)
ব্যক্তিত্বের ব্যাধি (Personality disorder) বাইপোলার ডিজঅর্ডার (Bipolar disorder)
রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম (Restless leg syndrome) হারপেনজিনা (Herpangina)
নিউরোসিস (Neurosis) ডিজথাইমিক ডিজঅর্ডার (Dysthymic disorder)
প্রাইমারী ইনসমনিয়া (Primary insomnia) ম্যালিগন্যান্ট হাইপারটেনশন (Malignant hypertension)
নারকোলেপসি (Narcolepsy) অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপ্নিয়া (Obstructive sleep apnea (OSA))
সোমাটাইজেশন ডিজঅর্ডার (Somatization disorder) নিউমোকোনিওসিস (Pneumoconiosis)
উইলসন ডিজিজ (Wilson disease) অ্যাকিউট স্ট্রেস রিঅ্যাকশন/ডিজঅর্ডার (Acute stress reaction/disorder)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

মহিলা ও যাদের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে তাদের অনিদ্রার ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার মানসিক অসুস্থতা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত মাত্রায় ভ্রমণের ফলে এ লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বারবার ঘুমানোর সময় পরিবর্তনের ফলেও অনিদ্রা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। হিস্প্যানিক ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ অনিদ্রা খুব অল্প সময়, এমনকি এক রাতের জন্যও দেখা দিতে পারে। এই ধরনের সমস্যাকে বলা হয় ট্রাঞ্জিয়েন্ট ইনসোমনিয়া (transient insomnia)। আবার এটি ক্রনিক অর্থাৎ দীর্ঘ সময়ের জন্যও হতে পারে। অনেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে কয়েক বছর পর্যন্ত ইনসোমনিয়া স্থায়ী হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। তবে বয়স ও ব্যক্তিভেদে এই সময়ে পার্থক্য থাকতে পারে। তবে প্রতিদিন ৩ ঘন্টা বা এর কম ঘুম হওয়া অস্বাভাবিক।

উত্তরঃ শুধু ইনসোমনিয়া খুব ক্ষতিকর কোনো সমস্যা নয়। অর্থাৎ প্রাইমারি ইনসোমনিয়ার জন্য বড়ো কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সেকেন্ডারি ইনসোমনিয়া অর্থাৎ সমস্যাটি যদি সেন্ট্রাল এবং কমপ্লেক্স স্লিপ এপ্নিয়ার লক্ষণ তবে অনিদ্রার কারণে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। ইনসোমিনিয়া নয়, বরং ইনসোমনিয়ার মূল কারণই রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

যে বয়সেই অনিদ্রা হোক না কেনো, এর চিকিৎসা করা সম্ভব। শুধু দৈনন্দিন ঘুমের অভ্যাসের উপর এর চিকিৎসা অনেকাংশে নির্ভর করে। সঠিক সময়ে ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুললে অনিদ্রার সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। যেকোনো ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। দিনের যেকোনো সময়, বিশেষ করে দুপুরে ৩০ মিনিটের বেশি ঘুমানো উচিৎ নয়। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিৎ। ছুটির দিনসহ প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে এবং ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী খাবার খাওয়া যাবে না। শোয়ার ঘর কেবল ঘুমের জন্য ব্যবহার করা উচিৎ। সেখানে যেন অতিরিক্ত শব্দ বা আলো না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।  অতিরিক্ত আলো ও শব্দ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, তাই ঘুমের জন্য আরামদায়ক, ঠাণ্ডা এবং আলো ও শব্দহীন ঘর নির্বাচন করতে হবে। জোর করে ঘুমের চেষ্টা করা উচিৎ নয়। ২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না এলে উঠে পড়তে হবে।