ঔষধের অপব্যবহার (Drug abuse)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

এটি রিক্রিয়েশনাল ড্রাগ ইউজ (Recreational Drug Use) নামেও পরিচিত।

যখন কোনো ব্যক্তি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নির্দিষ্ট কোনো ঔষধ চিকিৎসক দ্বারা অনুমোদিত নয় এমন পদ্ধতি্তে ও অধিক পরিমাণে নিয়মিতভাবে ব্যবহার করে তখন এ অবস্থাকে ড্রাগ বা ঔষধের অপব্যবহার বলা হয়। ড্রাগের অপব্যবহার শুধুমাত্র সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগের (psycho-active drug) মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। একজন ব্যক্তি নিজের কর্মদক্ষতা বা শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট কোনো ঔষধ ব্যবহার করলে (যা অনুমোদিত নয়) সেটিও ড্রাগের অপব্যবহার বলে চিহ্নিত করা হয়। যেমন- কিছু ক্রীড়াবিদ নিজের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য খেলার পূর্বে স্টরয়েড ব্যবহার করে থাকে যা নিয়ম বহির্ভূত। সুতরাং ঔষধের অপব্যবহার বলতে শুধু সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগের ব্যবহারকে বোঝায় না। যেকোনো অবৈধ ঔষধ যেমন চেতনানাশক ঔষধ (narcotics), উত্তেজক পদার্থ (stimulants), ঘুমের ঔষধ (sedatives), বিভ্রম সৃষ্টি করে এমন ঔষধ (hallucinogens), মাদকদ্রব্য (cannabis) এমনকি নেশার জন্য আঠা বা রঙের ব্যবহার ও ড্রাগ বা ঔষধের অপব্যবহারের মধ্যে পড়ে। এসব ঔষধ সেবনের ফলে একজন ব্যক্তি নিজের আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

যেসকল ড্রাগ বা ঔষধ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়-

অ্যালকোহলের পর যে ঔষধ অবৈধভাবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সেটি হল মারিজুয়ানা। অন্যান্য ব্যবহৃত ড্রাগগুলো হলো- কোকেইন, হেরোইন, এল-এস-ডি (LSD), এম-ডি-এম-এ (MDMA), মেথামফেটামিন, ফেনসাইক্লিডিন, স্টেরয়েড (এনাবোলিক), ভিকোডিন, অক্সিকোটিন এবং অন্যান্য প্রেসক্রাইবড ঔষধ। এসব ঔষধের অপব্যবহারের ফলে একজন ব্যক্তির শারীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-

  • হৃদস্পন্দন ও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।
  • পেশীর নিয়ন্ত্রণক্ষমতায় ত্রুটি দেখা দেয়, যার ফলে দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজকর্ম যেমন কথা বলা ও হাঁটাচলার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়।
  • মাথা ঝিমঝিম করা, বমি হওয়া ও চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া।
  • মূর্চ্ছা যাওয়া ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়া। এমনকি মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা।

আবার মানসিক দক্ষতার উপরও এসব ঔষধ বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেমন-

  • অ্যালকোহলের ব্যবহার প্রথমে একজন ব্যক্তির বিচার-বিবেচনা করার ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে বাস্তবসম্পন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হয়।
  • মনোযোগের অভাব দেখা দেয়।
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে।
  • অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে।
  • স্মৃতিশক্তি লোপ পায়।

অ্যালকোহল ব্যবহারের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবগুলো হলোঃ

  • পুষ্টির অভাব দেখা দেয়া ও মানসিক দক্ষতা হ্রাস পাওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, পাকস্থলী ও লিভারের ক্ষতি হওয়া।
  • হাড় ও পেশী দুর্বল হয়ে পড়া।
  • স্মৃতিশক্তি লোপ পায়।
  • মনোযোগ কমে যাওয়া।
  • ভিন্ন পরিবেশ বা মানুষের সাথে খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হয়।
  • অ্যালকোহলের ব্যবহার ছেড়ে দিলে হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রমসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়া।

কারণ

বিভিন্ন কারণে ঔষধ অপব্যবহারের অভ্যাস গড়ে উঠতে পারে। অনেক মানুষই বিভিন্ন পার্টিতে গিয়ে বন্ধুবান্ধব বা আশেপাশের মানুষের প্রভাবে অ্যালকোহল বা ড্রাগ গ্রহণ করে থাকে। কিছু কিছু মানুষ দৈনন্দিন কাজের চাপ, মানসিক দুশ্চিন্তা এমনকি শারীরিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ড্রাগ ব্যবহার করে থাকে। আবার কিছু কিছু মানুষ ব্যক্তিগত চাহিদা ও আত্মতৃপ্তির জন্য ড্রাগ ব্যবহার করে থাকে। আবার অনেকের কাছে এটি নিজের ত্রুটি থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি পন্থা।

তবে ড্রাগের ব্যবহার দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের উপায়ে পরিণত হলে এটি আসক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তবে বিভিন্ন অবৈধ ঔষধের সহজলভ্যতা ও বিভিন্ন সমাজে এর গ্রহণযোগ্যতার জন্য ড্রাগের অপব্যবহার তরুণ সমাজে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

লক্ষণ

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখতে পানঃ

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের ঔষধগুলো দিয়ে থাকেনঃ

bromazepam clonazepam
clonidine folic acid
multvitamin + multimineral ondansetron hydrochloride
promethazine thiamine hydrochloride

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের টেস্টগুলো দিয়ে থাকেনঃ

ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন, বি-ইউ-এন (Blood Urea Nitrogen, BUN)
ক্রিয়েটিনিন, সেরাম (Creatinine, Serum)
ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
লিভার ফাংশন টেস্ট (Liver function tests)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
সিটি স্ক্যান অফ হেড (CT scan of head)
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ই-সি-জি) (Electrocardiogram, ECG)
ইউরিন ড্রাগ স্ক্রিনিং (Urine drug screen)
সাইকোথেরাপী (Psychotherapy)
মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলিং (Mental health counseling)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যেকোনো বয়স বা লিঙ্গের ব্যক্তির মিধ্যে ঔষধের অপব্যবহারের অভ্যাস গড়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

  • একই পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য ঔষধের অপব্যবহারের সাথে যুক্ত থাকলে এ সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • পুরুষদের মধ্যে ড্রাগের অপব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
  • অন্য কোনো মানসিক অসুস্থতা থাকলে এ সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • বন্ধুবান্ধব বা সহপাঠীদের প্রভাবে তরুণদের মধ্যে ড্রাগ অপব্যবহারের প্রবণতা গড়ে ওঠে যা এ সমস্যার অন্যতম প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।
  • পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকলে এ সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার প্রভাবে ড্রাগ অপব্যবহারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। আবার একাকিত্ব থেকেও ড্রাগ অপব্যবহারের প্রবণতা গড়ে উঠতে পারে।
  • উচ্চমাত্রায় নেশাসৃষ্টিকারী কিছু ঔষধ যেমন ব্যথা উপশমকারী ঔষধ বা উত্তেজক পদার্থ ব্যবহারের ফলে এসব ঔষধের প্রতি একজন ব্যক্তি আসক্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে তার মাঝে এগুলো নিয়মিত ব্যবহারের প্রবণতা গড়ে ওঠে।
  • তরুণ বয়সে যারা ড্রাগ ব্যবহার করতে শুরু করে পরবর্তী জীবনে তারা এসবের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতিঃ কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা  ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ সাধারণত মারিজুয়ানা ব্যবহারের ফলে অন্যান্য ড্রাগের প্রতি আসক্তি জন্মায় না। তবে যারা মারিজুয়ানা ব্যবহার করে তারা অন্যান্য ড্রাগ ব্যবহারকারী ও বিক্রেতাদের সাথে মেলামেশা করে থাকে। যার ফলে তাদের অন্যান্য ড্রাগ ব্যবহারের প্রবণতা গড়ে ওঠে।

উত্তরঃ মাদকাসক্তি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। অধিকাংশ মানুষই কৌতুহলের বশে প্রথমদিনে শুধুমাত্র একবারের জন্য ড্রাগ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু নেশাসৃষ্টিকারী এসব ড্রাগ বা ঔষধ মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। যার ফলে একবার ব্যবহারের পরই বারবার ব্যবহারের প্রবণতা গড়ে ওঠে। তাই ড্রাগের প্রতি আসক্ত না হওয়ার লক্ষ্যে এর ব্যবহার থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকতে হবে।

হেলথ টিপস্‌

নিম্নলিখিত উপায়ে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ড্রাগের অপব্যবহার প্রতিরোধ করা সম্ভব-

  • কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মাঝে ড্রাগের অপব্যবহার সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে।
  • সন্তানের বিভিন্ন সমস্যাগুলো ভালোভাবে শুনতে হবে ও এ ব্যাপারে সহায়তা করতে হবে।
  • মা-বাবার মাদক সেবন করা উচিৎ নয়। কারণ এ থেকে সন্তানের মধ্যে মাদক সেবনের প্রবণতা গড়ে উঠতে পারে।
  • সন্তান ও মা-বাবার মধ্যে সুস্থ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ ফখরুজ্জামান শহীদ

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এমডি(সাইকিয়াট্রি), ডিএইচপিই (অস্ট্রলিয়া), ডিসিএম(ঢাকা)

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান (অবঃ)

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(সাইকিয়াট্রি)

ডাঃ মোহাম্মদ শামসুল আহসান মাকসুদ

মেডিসিন ( Medicine), সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এম বি বি এস, এম ফিল, এফ সি পি এস

ডাঃ এম এস কবীর জুয়েল

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, বিসিএস, এমফিল, এমডি (সাইক)

অধ্যাপক ডাঃ সাহিদা চৌধুরী

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, ডিপিএম

ডাঃ মোঃ নিজাম উদ্দিন

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এমসিপিএস, এমডি(সাইক)

ডাঃ মোঃ মহসিন আলী শাহ

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এম বি বি এস, এম ডি, এম ফিল (সাইকিয়াট্রি)

লেঃ কর্নেল ডাঃ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম

সাইকিয়াট্রি ( মানসিক) ( Psychiatry)

এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমআরএসএইচ(লন্ডন)