অবসাদ (Fatigue)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

প্রায় প্রত্যেক ব্যক্তিই অবসাদ বা ক্লান্তিতে ভুগে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাময়িকভাবে দেখা দেওয়া অবসাদের একটি নির্দিষ্ট কারণ থাকে। চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

তবে অবসাদ ক্রনিক রূপ ধারণ করলে তা দীর্ঘ সময় ধরে তীব্ররূপে দেখা দেয়। এই সমস্যার কারণে দুর্বলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে, এবং শরীরের শক্তি ও মানসিক দক্ষতা কমে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির  মানসিক সুস্থতাকেও অবসাদ প্রভাবিত করে।

অবসাদ ও তন্দ্রাচ্ছন্নতা ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা, তবে অবসাদের সাথে অনেক ক্ষেত্রে তন্দ্রাচ্ছন্নতা দেখা দেয়। এছাড়া অনেক সময় অবসাদের সাথে সাথে  কর্মবিমুখতাও সৃষ্টি হতে পারে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক কোনো সমস্যার লক্ষণ হিসেবে অবসাদ দেখা দেয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু দৈনন্দিক কাজ করার ফলে অবসাদের সৃষ্টি হয়।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন-

শ্বেতরক্ত কণিকা সম্পর্কিত রোগ (White blood cell disease) ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাব জনিত রোগ (Vitamin D deficiency)
রক্তস্বল্পতা (Anemia) ভিটামিন ‘বি১২’ এর অভাব জনিত রোগ (Vitamin B12 deficiency)
ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব জনিত রোগ (Vitamin A deficiency) সিরোসিস (Cirrhosis)
লিউকেমিয়া/ব্লাড ক্যান্সার (Leukemia) ভ্যালে ফিভার (Valley fever)
ফুসফুসের ক্যান্সার (Lung cancer) টাইফয়েড জ্বর (Typhoid fever)
থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia) বিষক্রিয়াজনিত হেপাটাইটিস (Hepatitis due to a toxin)
পাকস্থলীর ক্যান্সার (Stomach cancer) খাদ্যনালীর ক্যান্সার (Esophageal cancer)
হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism) লেইশম্যানিয়াসিস বা কালাজ্বর (Leishmaniasis)
অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার (Pancreatic cancer) ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ (Ischemic heart disease)
লৌহের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা (Iron deficiency anemia) রেবিস / জ্বলাতঙ্ক (Rabies)
অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া (Aplastic anemia) অ্যারিদমিয়া (Arrhythmia)
ব্রঙ্কিয়েক্টেসিস (Bronchiectasis) সিলিয়াক ডিজিজ (Celiac disease)
পলিসাইথেমিয়া ভেরা (Polycythemia vera) প্রাইমারী থ্রম্বোসাইথেমিয়া (Primary thrombocythemia)
ব্লাস্টোমাইকোসিস (Blastomycosis) পালমোনারী হাইপারটেনশন (Pulmonary hypertension)
বোন ক্যান্সার (Bone cancer) সেন্ট্রাল অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (Central atherosclerosis)
এন্ডোকার্ডাইটিস (Endocarditis) গলব্লাডার ক্যান্সার (Gallbladder cancer)
ফ্যাট এমবলিজম (Fat embolism) চ্যাগাস ডিজিজ (Chagas disease)
গয়টার (Goitre) ভন উইলিব্র্যান্ড ডিজিজ (Von Willebrand disease)
শ্যাংক্রয়েড (Chancroid) রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম (Restless leg syndrome)
র‍্যাবডোমায়োলাইসিস (Rhabdomyolysis) রকি মাউন্টেইন স্পটেড ফিভার (Rocky Mountain spotted fever)
কনভারশন ডিজঅর্ডার (Conversion disorder) হাইপারগামাগ্লোবিউলিনেমিয়া (Hypergammaglobulinemia)
করোনারী অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (Coronary atherosclerosis) সাইটোমেগালোভাইরাস ইনফেকশন (Cytomegalovirus infection)
ক্রনিক ইনফ্লামেটরী ডিমায়েলিনেটিং পলিনিউরোপ্যাথি (সি-আই-ডি-পি) (Chronic inflammatory demyelinating polyneuropathy (CIDP)) অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন (Orthostatic hypotension)
প্রাইমারী ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি (Primary immunodeficiency) প্রাইমারী ইনসমনিয়া (Primary insomnia)
ফোলেট ডেফিসিয়েন্সি (Folate deficiency) থ্রম্বোসাটোপেনিয়া (Thrombocytopenia)
গ্যাস গ্যাংরিন (Gas gangrene) গ্যাস্ট্রোপ্যারেসিস (Gastroparesis)
গ্রেভস ডিজিজ (Graves disease) হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া (Hemolytic anemia)
হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি (Hepatic encephalopathy) সারকোয়ডোসিস (Sarcoidosis)
মোনোনিউরাইটিস (Mononeuritis) মাল্টিপল মায়েলোমা (Multiple myeloma)
মায়েলোডিসপ্লাস্টিক সিন্ড্রোম (Myelodysplastic syndrome) নারকোলেপসি (Narcolepsy)
ফাইব্রোমায়ালজিয়া (Fibromyalgia) লিম্ফোমা (Lymphoma)
মাইট্রাল ভাল্ভ ডিজিজ (Mitral valve disease) মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple sclerosis)
মাস্কুলার ডিসট্রফি (Muscular dystrophy) মায়েস্থেনিয়া গ্রেভিস (Myasthenia gravis)
এয়ার এমবলিজম (Air embolism) সাইনাস ব্র্যাডিকার্ডিয়া (Sinus bradycardia)
লেপ্টোস্পাইরোসিস (Leptospirosis) অ্যামাইলয়ডোসিস (Amyloidosis)
লাইম ডিজিজ (Lyme disease) অপটিক নিউরাইটিস (Optic neuritis)
অ্যামাইওট্রোফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস (Amyotrophic lateral sclerosis (ALS)) সোমাটাইজেশন ডিজঅর্ডার (Somatization disorder)
কিডনির রোগজনিত রক্তসল্পতা (Anemia due to chronic kidney disease) অ্যানিমিয়া ডিউ টু ম্যালিগনেন্সি (Anemia due to malignancy)
অ্যানিমিয়া অফ ক্রনিক ডিজিজ (Anemia of chronic disease) প্যারোক্সিসমাল সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া (Paroxysmal supraventricular tachycardia)
অ্যাওর্টিক ভাল্ভ ডিজিজ (Aortic valve disease) উইলসন ডিজিজ (Wilson disease)
অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন (Atrial fibrillation) অ্যাকিউট স্ট্রেস রিঅ্যাকশন/ডিজঅর্ডার (Acute stress reaction/disorder)
মেটাট্যাস্টিক ক্যান্সার (Metastatic cancer) সাইকোসেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার (Psychosexual disorder)
থায়রয়েড ক্যান্সার (Thyroid cancer)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যে সকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

অবসাদ কোনো রোগ নয়। কিছু শারীরিক সমস্যা, চিকিৎসা ও ব্যক্তিগত অভ্যাসের জন্য অবসাদ হতে পারে। যেমন-

  • অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট (antidepressant), অ্যান্টিহিস্টামিন (antihistamine), ব্যথানাশক ও বমি বমি ভাব রোধ করে এমন ঔষধ গ্রহণ।
  • কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের মতো চিকিৎসা গ্রহণ।
  • বড় ধরনের কোনো সার্জারি থেকে সেরে ওঠা।
  • উদ্বিগ্নতা, চাপ (শারীরিক ও মানসিক) ও বিষণ্নতা।
  • রাতে দীর্ঘ সময় জেগে থাকা।
  • মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনপূর্ণ পানীয় পান।
  • অন্তঃসত্ত্বা হওয়া।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: নারীদের মধ্যে এই লক্ষণ দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাত: শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।   কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্প্যানিক এবং অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: দুর্বলতা ও অবসাদ গভীরভাবে জড়িত। কোনো ব্যক্তির শরীরের শক্তি ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে দুর্বলতা সৃষ্টি হতে পারে। বিভিন্নরূপে এই সমস্যা দেখা দেয়, যেমন- কাজ করার সময় ব্যথা অনুভব করা, মনোযোগে বিঘ্ন ঘটা ও মানসিক অবস্থার ব্যাঘাত ঘটা ইত্যাদি। দুর্বলতার কারণে সমগ্র শরীর প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া দুর্বলতা একজন ব্যক্তির কাজের দক্ষতা ও সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে।

উত্তর: হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে মহিলারা মেনোপজের সময়ের কাছাকাছি আসলে অবসাদে ভুগতে পারে। এস্ট্রোজেন( estrogen) এবং প্রোজেস্টাজেন (progestagen) কম উৎপন্ন হওয়ার জন্য শরীরে  এমন অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া হতে পারে, যার কারণে ঘুম কমে যায় ও হঠাৎ করে শক্তি হ্রাস হয়।

হেলথ টিপস্‌

জীবনযাত্রার কোনো ত্রুটির ফলে যদি অবসাদের সৃষ্টি হয়, তাহলে কিছু বিষয় অনুসরণ করে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব-

  • স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  • পর্যাপ্ত সময় ধরে ঘুমান।
  • যোগব্যায়াম চর্চা করুন।
  • শারীরিক চাপ বৃদ্ধি করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন।
  • ধূমপান ত্যাগ করুন।
  • মাদকদ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।