হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে উৎপাদিত থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনের স্বল্পতার কারণে হাইপোথাইরয়েডিজম হয়ে থাকে। ষাটোর্ধ্ব মহিলাদের এই রোগ বেশি হয়। এই কারণে শরীরের জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর চিকিৎসা করা না হলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন স্থূলতা (অধিক মোটা হওয়া), অস্থিসন্ধি বা গিঁটে ব্যথা, বন্ধ্যাত্ব ও হৃদরোগ দেখা দেয়।

হাইপোথাইরয়েডিজম নির্ণয়ের জন্য থাইরয়েড  ফাংশন  টেস্ট (Thyroid function tests)  রয়েছে এবং এর চিকিৎসার জন্য সিনথেটিক থাইরয়েড হরমোন (synthetic thyroid hormone) ব্যবহার নিরাপদ ও কার্যকর।

কারণ

কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণের জন্য হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে:

  • হাশিমোতো ডিজিজ (Hashimoto's disease): হাইপোথাইরয়েডিজম হওয়ার সাধারণ কারণ হণ হাশিমোতো ডিজিজ। এটি ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক থাইরয়েডাইটিস (Chronic lymphocytic thyroiditis) বা অটোইমিউন থাইরয়েডাইটিস (Autoimmune thyroiditis) নামেও পরিচিত। এটি একটি অটোইমিউন ডিজিজ। যখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখন ইমিউন সিস্টেম দেহের সুস্থ কোষ ও অঙ্গকে আক্রমণ করে। হাশিমোতো ডিজিজের কারণে ইমিউন সিস্টেম থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিকে ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করে আক্রমণ করে প্রদাহের সৃষ্টি করে, এবং এর কারণে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনের ক্ষমতা কমে যায়।
  • থাইরয়েডাইটিস (Thyroiditis): থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের প্রদাহজনিত রোগ হলো থাইরয়েডাইটিস। এর কারণে রক্তে থাইরয়েড হরমোন মিশে যায় ও এর পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, এবং এক পর্যায়ে তা থেকে হাইপারথাইরয়েডিজম দেখা দেয়। এর ১-২ মাসের পর ধীরে ধীরে এটি হাইপোথাইরয়েডাইটিসে পরিণত হয়।
  • কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম (Congenital hypothyroidism):  শিশুরা ত্রুটিপূর্ণ থাইরয়েড গ্রন্থি নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। এর কারণে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় এর চিকিৎসা করানো হলে এই ধরনের জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
  • থাইরয়েড সার্জারি এন্ড ট্রিটমেন্ট (Thyroid surgery and treatment):  অপারেশনের মাধ্যমে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের অপসারণ করা হলে হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে। থাইরয়েডের রেডিয়েশন ট্রিটমেন্টের কারণেও এই রোগ হতে পারে। হাইপারথাইরইয়েডিজমের একটি সাধারণ চিকিৎসা হলো রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন। এর কারণে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়, এবং এর ফলে হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিতলক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শদিয়ে থাকেন:  

levothyroxine sodium thyroxine sodium

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শদিয়ে থাকেন:  

ব্লাড গ্লুকোজ, ফাস্টিং (Blood Glucose, Fasting)
ফ্রি টি ৪ (Free T4)
টি-৩ (T3)
টি-৪ (T4)
টি-এস-এইচ (TSH)
ইউ-এস-জি থাইরয়েড (USG Thyroid)
এফ-এন-এ-সি (Fine needle aspiration cytology - FNAC)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্ললিখিত বিষয়ের কারনে হাইপোথাইরয়ডিজম হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়ঃ

  • একই পরিবারের কোনো সদস্যের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে অন্যান্য সদস্যদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • টাইপ ১ ডায়াবেটিস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অটোইমিউন ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাইপোথাইরয়েডিজম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির অপারেশনের মাধ্যমে থাইরয়েড অপসারন করা হলে সে ব্যক্তির হাইপোথাইরয়েডিজম হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  • হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসার জন্য যে ঔষধ খাওয়া হয় বা থাইরয়েড ক্যান্সারের জন্য যে রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন ব্যবহার করা হয় তার কারণেও হাইপোথাইরয়ডিজম হতে পারে।
  • ঘাড়ে বা বুকের উপরের অংশ বারবার রেডিয়েশনের সংস্পর্শে এলে হাইপোথাইরয়েডিজম হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ  পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২ গুণ কম। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিঃ  শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিক ও অন্যান্য জাতিদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত রোগী যে অবস্থায় কোনো ধরনের লক্ষণ দেখায় না সে অবস্থাকে সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়ডিজম বলে। এ অবস্থায় রোগীর দেহে স্বাভাবিক পরিমাণেই হরমোন সঞ্চালিত হয়। তবে এক্ষেত্রে যে অস্বাভাবিকতা দেখা যায় তা হলো রক্তে থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (Thyroid stimulating hormone) বা টি-এইচ-এস (TSH) এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এর কারনে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য পিটুইটারী গ্রন্থিকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়।

উত্তরঃ  কারো যদি মনে হয় সে হাইপোথাইরয়ডিজমে আক্রান্ত তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়। হাইপোথাইরয়ডিজম খুব সহজেই নির্ণয় করা যায় এবং এর থেকে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে  পরামর্শ করতে হবে।

হেলথ টিপস্‌

হাইপোথাইরয়ডিজমের কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছেঃ

  • নারিকেল তেলে ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা থাইরয়েডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ কারনে রান্নার জন্য নারিকেল তেল ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও প্রতিদিন সকালে দুধের সাথে দুই চামচ নারিকেল তেল মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
  • ভিটামিন- ডি এর অভাবে থাইরয়েড ডিজিজ হতে পারে। সূর্যালোক দেহে ভিটামিন- ডি উৎপাদন করে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকতে হবে।
  • মাছের তেল থাইরয়েড হরমোন বৃদ্ধির জন্য খুবই উপকারী এবং এটি থাইরয়েডের কার্যকলাপ সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রন করে। মাছের তেলে ওমেগা- ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ইনফ্লামেশনকে প্রতিরোধ করে। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিন ৩ গ্রামের বেশি ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করা যাবে না।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ সালেহ আহাম্মেদ(শাওন)

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস(ডি ইউ), এমপিএইচ, ডিপ্লোমা ইন এজমা(লন্ডন), সিসিডি(বারডেম), আরএম ও (ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিন)

ডাঃ মোঃ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ

মেডিসিন ( Medicine), ডায়াবেটোলজিষ্ট ( Diabetologist)

এমবিবিএস, সিসিডি (বারডেম), এফসিপিএস (মেডিসিন)

ডাঃ মোঃ নুরুল আমীন মিঞা

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস(ডিএমসি),, এমডি(মেডিসিন),, বিসিএস(স্বাস্থ্য)

ডাঃ মোঃ জাহিদুল ইসলাম

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস(স্বাস্থ্য), এমডি(কার্ডিওলজী), এফসিপিএস(মেডিসিন)

ডাঃ মোঃ কাজিম উদ্দিন

মেডিসিন ( Medicine), হেমাটোলজি ( ব্লাড) ( Hematology)

এমবিবিএস, ডিসিপি, এমসিপিএস, এফসিপিএস

ডাঃ মহিউদ্দিন আহমেদ

মেডিসিন ( Medicine), নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস(স্বাস্থ্য), এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(নিউরোমেডিসিন)

ডাঃ মোঃ হারুন-অর-রশিদ

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন)

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ বিল্লাল আলম

মেডিসিন ( Medicine), ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(ইন্টারনাল মেডিসিন), এমএসিপি, এফসিপিএস(আমেরিকা)