ভ্যালে ফিভার (Valley fever)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

রোগটি কক্সিডিওআইডোমাইকোসিস (Coccidioidomycosis) ও পোসাডা ওয়ারনিক ডিজিজ (Posada Wernicke) নামেও পরিচিত।

 

কক্সিডিওআইডিস (coccidioides) নামক ফাঙ্গাসের (বা ছত্রাকের) সংক্রমণের  কারণে ভ্যালে ফিভার হয়ে থাকে। শুষ্ক অঞ্চলের মাটিতে এই ধরনের ফাঙ্গাস দেখা যায়। নিঃশ্বাসের মাধ্যমে এই ফাঙ্গাসের স্পোর (spore) নাকে প্রবেশ করে। ভ্যালে ফিভারজনিত ইনফেকশন এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয় না।

যে কোনো ব্যক্তিই ভ্যালে ফিভারে আক্রান্ত হতে পারে। তবে ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি  থাকে। ভ্যালে ফিভার হতে পারে এমন এলাকায় অবস্থান করলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ভ্যালে ফিভারে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, বুকে ব্যথা ও কাশির মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

দুই প্রজাতির কক্সিডিওআইডিসের সংক্রমণের কারণে ভ্যালে ফিভার হয়ে থাকে। কিছু নির্দিষ্ট এলাকার মাটিতে অবস্থিত এই ফাঙ্গাস কৃষিকাজ, স্থাপনা নির্মাণ ও বাতাসের কারণে মাটির স্তর ভেঙে বা চূর্ণ হয়ে গেলে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর নিঃশ্বাসের মাধ্যম এই ফাঙ্গাস কোনো ব্যক্তির ফুসফুসে প্রবেশ করলে তিনি ভ্যালে ফিভারে আক্রান্ত হন। রোগটি অ্যাকিউট কক্সিডিওআইডোমাইকোসিস (acute coccidioidomycosis) নামেও পরিচিত।

ভ্যালে ফিভারের মাত্রা কম হলে তা সাধারণত এমনিতেই সেরে যায়। তবে রোগটি তীব্র আকার ধারণ করলে চিকিৎসকেরা ফাঙ্গাসরোধী ঔষধ দিয়ে সুপ্ত/অন্তর্নিহিত ইনফেকশনের চিকিৎসা করে থাকেন।

কারণ

শুষ্ক অঞ্চলের মাটিতে অবস্থিত কক্সিডিও-আইডেস-ইমিটিস ( Coccidioidesimmitis) বা কক্সিডিও-আইডেস-পোসাডেসি (Coccidioidesposadasii) নামক ফাঙ্গাসের কারণে ভ্যালে ফিভার হয়ে থাকে।

বেশিরভাগ ফাঙ্গাসের মতো কক্সিডিওআইডিসের জীবনচক্র জটিল প্রকৃতির। মাটির অভ্যন্তরে এই ফাঙ্গাস মোল্ডের মতো লম্বা ফিলামেন্টসহ বৃদ্ধি পায়, যা মাটির স্তর ভেঙে বা চূর্ণ হয়ে গেলে বাতাসের স্পোরে প্রবেশ করে। স্ংক্রামক এই স্পোরগুলি অত্যন্ত ক্ষুদ্র, এবং এগুলি বাতাসের মাধ্যমে শত শত মাইল দূরে স্থানান্তরিত হতে পারে। ফুসফুসে প্রবেশের পর এগুলি বংশবিস্তার করলে ভ্যালে ফিভার স্থায়ীরূপে দেখা দেয়।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলির জন্য ভ্যালে ফিভার হওয়ার ঝুকিঁ বৃদ্ধি পায়-

  • পরিবেশগত কারণ: নিশ্বাসের মাধ্যমে ভ্যালে ফিভার সৃষ্টিকারী স্পোর গ্রহণ করলে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব স্থানে ভ্যালে ফিভারের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, সেসব স্থানের অর্ধেক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়্। নির্মাণশ্রমিক, কৃষক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও সৈনিকদের মতো যাদের ধূলাবালিপূর্ণ স্থানে পেশাগত কারণে থাকতে হয়, তাদের ভ্যালে ফিভার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • জাতি: ফিলিপিনো, হিস্প্যানিক, কৃষ্ণাঙ্গ, নেটিভ আমেরিকান ও এশিয়দের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  • গর্ভধারণ: গর্ভধারণের ২৮ সপ্তাহ পর থেকে সন্তান প্রসবের সময় অব্দি গর্ভবতী মহিলারা ভ্যালে ফিভারে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হতে পারে। সন্তান জন্মদানের পরও মহিলারা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।
  • দুর্বল ইমিউন সিস্টেম: কোনো ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেলে তার ভ্যালে ফিভার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেসব ব্যক্তিরা এইডস (AIDS) আক্রান্ত বা যেসব ব্যক্তিদের কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা চলছে তাদেরও ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারির (transplant surgery) পর যারা অ্যান্টি-রিজেকশন ড্রাগ গ্রহণ করেন তাদেরও ভ্যালে ফিভার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ক্যান্সার ও হজকিন লিম্ফোমা (Hodgkin lymphoma) আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
  • বয়স্ক ব্যক্তি: বয়স্ক ব্যক্তিদের ভ্যালে ফিভার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ বয়স্ক ব্যক্তিদের ইমিউন সিস্টেমের ক্রিয়াশীলতা কমে যায়। তাছাড়া বিভিন্ন ঔষধ গ্রহণ করলে সেগুলি তাদের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে। নারীদের মধ্যে  এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ কম।

জাতি: শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ২৩ গুণ কম। অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ৮ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ভ্যালে ফিভারের পূর্বের  ও সম্প্রতি হওয়া সংক্রমণের পার্থক্য বোঝা যেতে পারে। তবে সব ক্ষেত্রে এ বিষয়টি নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

উত্তরঃ না। স্বাভাবিকভাবে ভ্যালে ফিভারের কারণে সৃষ্ট ইনফেকশন সেরে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ভ্যালে ফিভার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা জন্মায়। আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেম প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হলে রোগটি আবার আপনাকে আক্রান্ত করতে পারে। কিন্তু রোগটি নিরাময়ের পর এর সংক্রমণ বারবার ঘটে না।

উত্তরঃ দুর্বলতা কাটতে কিছুটা সময় লাগে। সাধারণত সম্পূর্ণরূপে  সুস্থ হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।  তবে সুস্থ হওয়ার সময় ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

হেলথ টিপস্‌

যে সব স্থানে ভ্যালে ফিভারের প্রাদুর্ভাব আছে, সেসব স্থানে ভ্রমণের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। বিশেষত গ্রীষ্মকালে বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, কারণ এ সময় এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মাস্ক ব্যবহার করুন, ধূলা ঝড়ের সময় ঘরের ভিতরে অবস্থান করুন, মাটি কাটার পূর্বে তা ভিজিয়ে নিন এবং ঘরের দরজা-জানালা ভালোভাবে বন্ধ করে রাখুন।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ বদরুল আলম

ইনফেকশাস ডিজিজ এন্ড ট্রপিকাল মেডিসিন ( সংক্রামক রোগ) ( Infectious Disease & Tropical Medicine)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমপিএইচটিএম(অস্ট্রেলিয়া), এমএসিটিএম(অস্ট্রেলিয়া)