অস্থিসন্ধিতে ব্যথা (Joint pain)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

শরীরের যেসব স্থানে এক বা একাধিক অস্থি মিলিত হয়, সেই সব স্থানকে অস্থিসন্ধি বলা হয়। এই সন্ধিতে সৃষ্ট ব্যথা বা অস্বস্তিভাবকে অস্থি সন্ধির ব্যথা বলে। সন্ধির ব্যথা আর্থ্রালজিয়া  (arthralgia) নামেও পরিচিত।

অস্থি সন্ধির ব্যথা সাধারণত মৃদু হয়ে থাকে।  সন্ধি নাড়ানোর সময় এই ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা তীব্র হলে অস্থিসন্ধি স্বাভাবিক ক্রিয়শীলতা হারিয়ে ফেলে। তবে এটি কোনো গুরুতর সমস্যা নয়। মৃদু মাত্রার সন্ধির ব্যথা ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমেই নিরাময় করা সম্ভব।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারেঃ যেমন-   

ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাব জনিত রোগ (Vitamin D deficiency) ভ্যালে ফিভার (Valley fever)
গাউট/গেঁটেবাত (Gout) অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis)
অস্টিওপরোসিস/অস্থি ক্ষয় (Osteoporosis) জুভেনাইল রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Juvenile rheumatoid arthritis)
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid arthritis) অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (Ankylosing spondylitis)
সিউডোহাইপোপ্যারাথাইরয়ডিজম (Pseudohypoparathyroidism) পলিসাইথেমিয়া ভেরা (Polycythemia vera)
প্রাইমারী থ্রম্বোসাইথেমিয়া (Primary thrombocythemia) সোরিয়াসিস (Psoriasis)
বোন ক্যান্সার (Bone cancer) সিকেল সেল অ্যানিমিয়া (Sickle cell anemia)
সেন্ট্রাল অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (Central atherosclerosis) সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথেম্যাটোসাস (এস-এল-ই) (Systemic lupus erythematosus (SLE))
হিমোক্রোমেটোসিস (Hemochromatosis) কন্ড্রোম্যালেসিয়া অফ দি প্যাটেলা (Chondromalacia of the patella)
ক্রন ডিজিজ (Crohn disease) ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ (Degenerative disc disease)
ক্রনিক নী পেইন (Chronic knee pain) ডিজলোকেশন অফ দি ফিঙ্গার (Dislocation of the finger)
ডিজলোকেশন অফ দি নী (Dislocation of the knee) প্রাইমারী ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি (Primary immunodeficiency)
ফোলেট ডেফিসিয়েন্সি (Folate deficiency) স্পাইনা বিফিডা (Spina bifida)
ল্যাটেরাল এপিকন্ডাইলাইটিস (টেনিস এলবো) (Lateral epicondylitis (tennis elbow)) হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া (Hemolytic anemia)
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচ-পি-ভি) ইনফেকশন (Human papilloma virus (HPV) infection) ইন্ট্রাক্রেনিয়াল হেমোরেজ (Intracranial hemorrhage)
শোগ্রেন সিন্ড্রোম (Sjogren syndrome) লাইম ডিজিজ (Lyme disease)
টেন্ডিনাইটিস (Tendinitis) হাইপারট্রোফিক অবস্ট্রাক্টিভ কার্ডিওমায়োপ্যাথি (এইচ-ও-সি-এম) (Hypertrophic obstructive cardiomyopathy (HOCM))

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

কিছু নির্দিষ্ট বিষয় অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। যেমন- ক্রীড়াবিদদের অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া নিম্নলিখিত বিষয়গুলির জন্যও অস্থিসন্ধির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

  • বয়স: ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অস্থিসন্ধির ক্ষতি সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ৪০ বছরের কম বয়স্ক ব্যক্তিদের খুব কম ক্ষেত্রে আর্থ্রাইটিসের সাথে সম্পর্কযুক্ত রোগ হয়ে থাকে।
  • বংশ/পরিবার: কোনো ব্যক্তির পরিবার/বংশের কারো অস্টিওআর্থ্রাইটস থাকলে তারও এই রোগ হতে পারে।
  • আঘাত: খেলাধূলা বা দুর্ঘটনার কারণে আঘাত পেলে অস্থিসন্ধির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্বৃদ্ধি পায়।
  • রোগ: জন্মগতভাবে অস্থিসন্ধি বিকৃতভাবে গঠিত হলে, বা তরুণাস্থিতে ত্রুটি থাকলে অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। প্যাজেটস্‌ ডিজিজ ( Paget's disease) এবং সেপটিক আর্থ্রাইটিসের মতো হাড় ও সন্ধির রোগের কারণেও এই ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • অতিরিক্ত ওজন: কোনো ব্যক্তির শরীরের ওজন বেশি হলে তার শরীরের ভার বহনকারী অস্থিসন্ধির উপর বেশি চাপ পড়ে, যেমন- হাঁটু। একই রকমভাবে অতিরিক্ত ওজনের কারণে শরীরের ভারবহনকারী নয় এমন সন্ধিতেও আর্থ্রাইটিস হতে পারে, যেমন- হাত।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: নারীদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাত:  কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ  শরীরের অস্থিসন্ধির ইনফ্লামেশনকে আর্থ্রাইটিস বলে। আর্থ্রাইটিস বলতে ১০০ এর চেয়ে বেশি রোগ বোঝানো হয়। এই রোগগুলি সাধারণত অস্থিসন্ধির মধ্যে বা এর আশেপাশের অংশকে প্রভাবিত করে, যেমন- মাংসপেশী ও টেন্ডন। এই ধরনের কিছু কিছু রোগ ত্বক ও শরীরের ভিতরকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গসহ বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করতে পারে। আর্থ্রাইটিস বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। বেশিরভাগ আর্থ্রাইটিস ক্রনিক, অর্থাৎ সেগুলি জীবনব্যাপী স্থায়ী হয়।

উত্তরঃ আর্থ্রাইটিসের কারণে সাধারণত  শক্তভাব, ব্যথা ও ক্লান্তি দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলির মাত্রা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া সব সময় এগুলির মাত্রা সমান থাকে না। কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে অল্প কিছু সন্ধি কম মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মূলত সন্ধিগুলি আর্থ্রাইটিস দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়ে থাকে। কিছু কিছু আর্থ্ররাইটিসের কারণে অস্থিসন্ধির ইনফ্লামেশনের লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন- ফুলে ওঠা, শক্তভাব সৃষ্টি হওয়া, নাজুক হয়ে যাওয়া ও লাল ভাব সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি। সন্ধির এই লক্ষণগুলির সাথে ওজন হ্রাস, জ্বর ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

উত্তরঃ অস্টিওআর্থ্রাইটিস আর্থ্রাইটিসের সবচেয়ে পরিচিত ধরন। অস্টিওআর্থ্রাইটিস শরীরের অস্থিসন্ধির এক ধরনের রোগ, যা মূলত তরুণাস্থিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। অস্থিসন্ধির হাড়ের প্রান্ত ভাগকে আচ্ছাদনকারী এক ধরনের পিচ্ছিল টিস্যুকে তরুণাস্থি বলে। অস্টিওআর্থ্রাইটসে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধিতে ব্যথা হয়, এবং তার শরীরের স্বাভাবিক নড়াচড়া কমে যায়। এই রোগ শরীরের ভিতরকার কোনো অংশকে প্রভাবিত করে না।

হেলথ টিপস্‌

অস্থি সন্ধির ব্যথার কারণ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

আর্থ্রাইটিসের কারণে সৃষ্ট নয় এমন অস্থিসন্ধির ব্যথার ক্ষেত্রে বিশ্রাম নেওয়া ও ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ। গরম পানিতে স্নান করাসহ মাসাজ ও পেশী প্রসারণ করে এমন ব্যায়াম মাঝে মাঝে করা উচিৎ।

অ্যাসেটোমিনোফেন (Aceteminophen) ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া ইবুপ্রোফেন (ibuprofen) অথবা ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ঔষধও ব্যথা ও ফোলা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে শিশুদের অ্যাসপিরিন ও ইবুপ্রোফেন দেওয়ার আগে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিন।