অস্টিওপরোসিস/অস্থি ক্ষয় (Osteoporosis)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

অস্টিওপরোসিস বা অস্থি ক্ষয়ের ফলে আমাদের দেহের হাড় বা অস্থি দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সামান্য চাপে ( যেমনঃ কাশি বা শরীর কোনো দিকে বাঁকা করা) অস্থি ফ্র্যাকচার (Fracture) বা ভেঙ্গে যেতে পারে। অস্টিওপরোসিসের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোমর, নিতম্ব বা স্পাইনের অস্থিতে Fracture হয়ে থাকে।

অস্থি একটি সজীব টিস্যু যা প্রতিনিয়ত ক্ষয় হয় ও নতুন অস্থির সাহায্যে তা পুনরায় প্রতিস্থাপিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি দেখা দিলে, অর্থাৎ অস্থি ক্ষয় হতে থাকলে ও একই সাথে নতুন অস্থির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে অস্টিওপরোসিস দেখা দেয়।

যে কোনো ব্যক্তিরই অস্টিওপরোসিস হতে পারে। তবে শ্বেতাঙ্গ ও এশিয়ান মহিলাদের, বিশেষ করে মেনোপজের পরে বয়স্ক মহিলাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যথাযথ ঔষধ সেবন, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়ামের সাহায্যে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে অস্থি দৃঢ় ও মজবুত হয়, এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।

কারণ

আমাদের শরীরে পুরাতন অস্থিগুলো প্রতিনিয়ত নতুন অস্থি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, তরুণ বা কম বয়স্কদের মধ্যে প্রতিস্থাপনের এই প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত হয়ে থাকে, এবং তাদের অস্থির পরিমাণ বা পরিধি বাড়তে থাকে। অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিশ বছরের শুরুতেই অস্থির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটি কমতে থাকে। এই সময়ে আমাদের শরীরে অস্থির পরিমাণ যত বেশি হবে, বার্ধক্যজনিত কারণে অস্টিওপরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা ততোটা হ্রাস পাবে।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

alendronate sodium calcium carbonate
conjugated oestrogens ethinylestradiol
ibandronic acid levonorgestrel
medroxyprogesterone acetate oestradiol
raloxifene hydrochloride risedronate sodium
vitamin d

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

অ্যালকালাইন ফসফেট (Alkaline Phosphate)
ক্যালসিয়াম, সেরাম (Calcium, Ca serum)
ম্যাগনেসিয়াম, সেরাম (Serum Magnesium (Mg))
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
পি-টি-এইচ (PTH)
টি-এস-এইচ (TSH)
বোন ডেনসিটি স্ক্যান (Bone density scan)
ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এম-আর-আই) (Magnetic resonance imaging (MRI))
প্লেইন এক্স-রে (Plain x-ray)
ইউরিন ফর ক্যলসিয়াম (Urine for Calcium)
ইউরিন ফর ফসফেট (Urine for Total Phosphate)
ফসফেট, সেরাম (Phosphate (PO4), serum)
Vitamin D

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

বিভিন্ন কারণে অস্টিওপরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। অস্টিওপরোসিসের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

অপরিবর্তনশীল ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ঃ

কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

  • লিঙ্গঃ পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • বয়সঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে অস্টিওপরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে।
  • জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ ও এশিয়ানদের মধ্যে এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • পারিবারিক সূত্রেঃ পরিবারের কোনো সদস্য, বিশেষ করে মা-বাবা বা ভাইবোনের অস্টিওপরোসিস থাকলে অন্য সদস্যদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • হাড়ের গঠনঃ হাড়ের গঠনের উপর এই রোগের ঝুঁকি নির্ভর করে। যাদের হাড়ের গঠন অপেক্ষাকৃত সরু, তাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেহে অস্থির পরিমাণ হ্রাস পায় ও অস্টিওপরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

হরমোনের মাত্রার প্রভাব (Hormone levels):

যাদের শরীরে নির্দিষ্ট কোনো হরমোন পরিমাণে খুব কম বা বেশি থাকে তাদের অস্টিওপরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেমনঃ

  • সেক্স হরমোন (Sex hormones): সেক্স হরমোনের পরিমাণ হ্রাস পেলে অস্থি দুর্বল হয়ে পড়ে। মেনোপজের পরে শরীরে এস্ট্রোজেন উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায় ফলে অস্টিওপরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। মেনোপজ ছাড়াও ক্যান্সার চিকিৎসার জন্যও মহিলাদের মধ্যে এস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে একজন পুরুষের শরীরে টেসটোসটেরন উৎপাদনের মাত্রা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। একই সাথে প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্যও টেসটোসটেরন উৎপাদনের মাত্রা কমতে পারে।
  • থাইরয়েডের সমস্যা (Thyroid problems): থাইরয়েড হরমোনের পরিমান অধিক হারে বেড়ে গেলে অস্থি ক্ষয় হতে শুরু করে। থাইরয়েড গ্রন্থি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সক্রিয় হলে বা থাইরয়েডের চিকিৎসার জন্য থাইরোয়ড হরমনজনিত ঔষধ বেশি ব্যবহারের ফলে থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়।

খাদ্যাভাসের প্রভাবে (Dietary factor):

সাধারণত নিম্নলিখিত খাদ্যাভাসের কারণে এ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়ঃ

  • ক্যালসিয়ামের অভাবে অস্টিওপরোসিস হতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পায়, হাড় ক্ষয় হতে থাকে এবং Fracture এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • অস্বাভাবিক খাদ্যাভাসের ফলে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে যাদের ক্ষুধাহীনতা বা ক্ষুধামন্দার সমস্যা রয়েছে তাদের এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণ কমে গেলে শরীরে ক্যালরি, প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। মহিলাদের মধ্যে ক্ষুধামন্দার কারণে মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে ক্ষুধামন্দার কারণে টেসটোসটেরন উৎপাদনের মাত্রা কমে যায় এবং অস্থি দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • অন্ত্র বা পাকস্থলির অপারেশন (Gastrointestinal surgery): অপারেশনের জন্য পাকস্থলি বা অন্ত্রের গঠনে পরিবর্তন আসলে, বা বাইপাসের জন্য শরীরে ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়, ফলে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

স্টেরয়েড ও অন্যান্য ঔষধের ব্যবহারঃ

দীর্ঘদিন কর্টিকোস্টেরয়েড (corticosteroid) ঔষধ (যেমনঃprednisone ও cortisone) ব্যবহারের ফলে শরীরের অস্থি গঠন ও প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দেয়। নিম্নলিখিত রোগের জন্য যে সকল ঔষধ দেওয়া হয় তা অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

  • খিঁচুনি (Seizures)
  • ক্যান্সার
  • ট্রান্সপ্ল্যান্ট রিজেকশন (Transplant rejection)
  • গ্যাস্ট্রিক রিফ্লাক্স (Gastric reflux)

অভ্যাসগত বিষয়ঃ

কিছু বদভ্যাসের কারণে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যেমনঃ

  • অলসতা ও কর্মবিমুখতা।
  • অত্যাধিক মদ্যপান।
  • তামাকের ব্যবহ।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ৪ গুণ কম।

জাতিঃ কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে।

উত্তরঃ বিশ বছর বয়সের পরই হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। লিঙ্গগত, বংশগত ও জাতিগত কারণে এবং নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ব্যবহারের ফলে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যায়াম করার ফলেও অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।

উত্তরঃ কাঁচা লবণ ও লবণযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। শস্যজাতীয় খাবার, ফলমূল ও শাকসবজি অধিক পরিমাণে খেতে হবে।  অর্থাৎ ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা প্রয়োজন। ক্যাফেইন, কোমল পানীয় ও মদ্যপানের পরিমাণও কমানো উচিৎ। একই সাথে কম ফ্যাটযুক্ত খাবার, বিভিন্ন রকমের মাছ (যেমনঃ মলা, ঢেলা, পুঁটি, কাচকি), সবুজ শাকসবজি, ডিম ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার অধিক পরিমাণে খেতে হবে।

হেলথ টিপস্‌

অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধের জন্য নিম্নের টিপসগুলো কাজে লাগতে পারে-

  • ধূমপান পরিহার করতে হবে। কারণ ধূমপানের জন্য অস্থির ক্ষয়ের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং Fracture হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  • অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে। মদ্যপানের ফলে হাড়ের গঠনে ত্রুটি দেখা দেয়।
  • হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে, এজন্য হাঁটাচলার ক্ষেত্রে সাবধনতা অবলম্বন করতে হবে।

হাড় দৃঢ় ও মজবুত রাখার জন্য নিম্নলিখিত তিনটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাদ্যগ্রহণ।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি যুক্ত খাদ্যগ্রহণ।
  • নিয়মিত ব্যায়াম।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ এ এইচ এম আওলাদ হোসাইন

অর্থোপেডিক সার্জারী ( হাড়) ( Orthopedic Surgery)

এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য), এমএস(অর্থো)

অধ্যাপক ডাঃ মেজর জেনারেল (অবঃ) কে এম ওমর হাসান

মেডিসিন ( Medicine), নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এফআরসিপি(গ্লাসগো), নিউরোলজী

ডাঃ মোহাম্মদ মোরতজা খায়ের

মেডিসিন ( Medicine), পালমোনোলজি ( ফুসফুস) ( Pulmonology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(চেস্ট)

অধ্যাপক ডাঃ মতিয়ার রহমান

পালমোনোলজি ( ফুসফুস) ( Pulmonology), ডায়াবেটোলজিষ্ট ( Diabetologist), মেডিসিন ( Medicine)

এম বি বি এস (ডি এম সি), ডি টি সি ডি (ডি ইউ), সি সি ডি (বারডেম)

ডাঃ মোঃ আরিফুর রহমান

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(কার্ডিওলজী )

ডাঃ সুভাষ চন্দ্র ভাদুড়ী

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, , এফসিপিএস(মেডিসিন), বিসিএস(স্বাস্থ্য)

ডাঃ মোহাম্মদ সোহেল খাঁন

মেডিসিন ( Medicine), নেফ্রোলজি ( কিডনি) ( Nephrology)

এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য), এফসিপিএস(মেডিসিন)II, এমডি-II

প্রফেসর ডাঃ ফেরদৌস আরা জে জানান

মেডিসিন ( Medicine), ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস, এমডি(ইউএসএ), এফআইবিএ(ইংল্যান্ড), এফসিপিএস(মেডিসিন), এফআরসিপি (এডিন), এফএসিপি(ইউএসএ)