শীঘ্র বা বিলম্বিত মেনোপোজ (Early or late onset of menopause)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

মেনোপজ একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। এ অবস্থায় মহিলাদের মাসিক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় ও প্রজনন ক্ষমতা লোপ পায়। সাধারণত ৪০ এর শেষে বা ৫০ এর শুরুর দিকে মেনোপজ হয়ে থাকে। এই শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনটি আকস্মিকভাবে হয় না, বরং বিভিন্ন জৈবিক পরিবর্তনের ফলে এটি হয়ে থাকে। মেনোপজের সময় বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। যেমনঃ ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন, কর্মশক্তি হ্রাস পাওয়া ও অতিরিক্ত গরম লাগা। এই সকল উপসর্গ দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে।

মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী পর্যায়কে মেনোপজ বলা হয়। মেনোপজকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা যায়। ১. পেরিমেনোপজ (Perimenopause)- মাসিক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হওয়ার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়কে বোঝানো হয়। এ অবস্থায় মাসিক চলতে থাকে তবে এর সাথে সাথে মেনোপজের উপসর্গও দেখা দেয় এবং হরমোনের মাত্রা দ্রুত উঠানামা করে। ২. প্রিমেনোপজ (Premenopause)- মেনোপজ শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী সময়কে বোঝানো হয়। ৩. পোস্টমেনোপজ (Postmenopause)- শেষ মাসিক হবার ১২ মাস পর পোস্টমেনোপজ হতে দেখা যায়।

কারণ

যথাসময়ের পূর্বে (৪০ এর পূর্বে) মেনোপজ শুরু হলে তাকে প্রিম্যাচুর বা শীঘ্র  মেনোপজ বলে। বিভিন্ন কারণে একজন মহিলার মেনোপজ আগে শুরু হয়ে যেতে পারে। এটি প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে, আবার যেকোনো শারীরিক অসুস্থতার জন্য হতে পারে। তবে নির্দিষ্ট করে এর কোনো কারণ বলা যায় না।

প্রাকৃতিক কারণঃ

ডিম্বাণু উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপন্ন না হলে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় ও সময়ের পূর্বেই মেনোপজ দেখা দেয়। অপরিণত অবস্থায় ডিম্বাণু উৎপাদনের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়াকে প্রিম্যাচুর ওভারিয়ান ফেইলিয়র (Premature ovarian failure) বা সংক্ষেপে পি-ও-এফ (POF) বলে।

শারীরিক অসুস্থতা বা সমস্যাঃ

ইনফেকশন- টিউবারকুলোসিস, মাম্পস ইত্যাদি শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

হিসটেরেক্টমি - অপারেশনের সাহায্যে জরায়ু, ফেলোপিয়ান টিউবস্‌ বা ডিম্বাশয় অপসারণ করার পদ্ধতিই হলো হিসটেরেক্টমি (Hysterectomy)। এই অপারেশনের ফলে হরমোন ও ডিম্বাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যার ফলে মেনোপজ শুরু হয়ে যায়।

টিউবাল লাইগেশন- টিউবাল লাইগেশন (Tubal ligation) হলো একটি স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ডিম্বাণুকে ফেলোপিয়ান টিউবে প্রবেশ করা থেকে বিরত রেখে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করা হয়। কখনো কখনো টিউবাল লাইগেশনের পর মাসিক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

এছাড়াও, দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এটি দ্রুত মেনোপজ হওয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো ভূমিকা রাখে না। উপরে উল্লেখিত কারণ ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের প্রভাবেও শীঘ্র বা দ্রুত মেনোপজ হতে পারে। এখানে এই সমস্যার শুধুমাত্র সবচেয়ে পরিচিত কারণগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

বিলম্বিত মেনোপজের কারণঃ

থায়রয়েড দেহের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। তাই থায়রয়েড ডিজঅর্ডার বা থায়রয়েড গ্রন্থিতে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তা একজন মহিলার প্রজনন প্রক্রিয়ার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। যার ফলে মেনোপজ দ্রুত বা বিলম্বে শুরু হয়।

কোনো মহিলার দেহে যদি সবসময়ই এস্ট্রোজেনের মাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বেশি থাকে, তবে তার মেনোপজ দেরীতে শুরু হবে। এস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হলে এস্ট্রোজেন ডমিনেন্স (estrogen dominance) নামক সমস্যা দেখা দিতে পারে যা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

পরিবারের অন্য কোনো সদস্য, বিশেষ করে মা ও দাদি/নানির বিলম্বিত মেনোপজের সমস্যা থাকলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

একাধিকবার গর্ভধারণের কারণেও মেনোপজ বিলম্বে শুরু হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

অ্যান্টি-এস্ট্রোজেন ইফেক্টের কারণে ধূমপান শীঘ্র বা বিলম্বিত মেনোপজের ঝুঁকি বাড়ায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় যারা নিয়মিত ধূমপান করে তাদের ক্ষেত্রে মেনোপজ স্বাভাবিক সময়ের পূর্বেই শুরু হয়ে যায়।

আবার, এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ মহিলার প্রিম্যাচুর ওভারিয়ান ফেইলিয়র (premature ovarian failure) বা পি-ও-এফ (POF) দেখা দেয়, যার ফলে মাসিক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃমহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা পনের গুণ কম। হিস্প্যানিকদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বারো গুণ কম এবং অন্যান্য জাতির ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা চার গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা


উত্তর: যেকোনো বয়সী মহিলার দ্রুত মেনোপজ হতে পারে। এমনকি বিশ বছরে বয়সী মহিলারও এ সমস্যা হতে পারে। তবে দেখা গেছে, সাধারণত মায়ের যে বয়সে মেনোপজ শুরু হয় মেয়েরও ঠিক একি বয়সে মেনোপজ শুরু হয়ে থাকে।

উত্তর: একজন মহিলার কোনো বয়সে প্রথম মাসিক শুরু হয়েছে তার সাথে মেনোপজ কখন শুরু হবে তা সম্পর্কিত নয়। সুতরাং, দেরীতে মাসিক শুরু হওয়া আর্লি বা দ্রুত মেনোপজকে প্রভাবিত করে না।