ঘাড়ের মাংসেপশীতে টান বা খিঁচুনি (Neck cramps or spasms)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

হঠাৎ করে অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘাড়ের মাংসপেশীতে টান লাগতে পারে। এই সমস্যা কিছুক্ষণ স্থায়ী হবার পর কমে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর কারণে ক্ষণস্থায়ীভাবে তীব্র ব্যথা হতে পারে।

এটি একটি সাধারণ লক্ষণ। প্রায় ১০% প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির এই সমস্যা হয়ে থাকে। এর ফলে চাপা ব্যথা থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক শক্‌ লাগার মতো নানা মাত্রার ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ঘাড়ের মাংসপেশীতে টান বা খিঁচুনির সাথে মাংসপেশী অবশ বা দুর্বল হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। এই লক্ষণগুলি ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার মূল কারণ নির্ণয় করতে সাহায্য করে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘাড়ের টান বা খিঁচুনি অল্প সময়ের (কয়েক ঘন্টা বা দিন) জন্য স্থায়ী হয়। যদি সমস্যাটি কয়েক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়, তাহলে সেটিকে ক্রনিক (chronic) হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। তবে এই সমস্যা স্থায়ী হলেও ব্যায়াম, মাংসপেশী প্রসারণ, ফিজিক্যাল থেরাপি এবং মাসাজের মাধ্যমে তা প্রশমিত করা যায়।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন:

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি ঘাড়ের মাংসপেশীতে টান লাগা বা খিঁচুনি হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • বয়স: বয়স বৃদ্ধির একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ঘাড়ের মাংসপেশীতে টান বা খিঁচুনি লাগতে পারে। কারণ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে স্পাইনাল ডিস্ক (Spinal disk) তরলশূন্য ও সঙ্কুচিত হয়ে আসে।
  • পেশা: নির্দিষ্ট কিছু পেশায় জড়িত থাকার কারণে ঘাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ঘাড় বারবার ঘুরালে, ঘাড়ের অবস্থান ঠিক না রাখলে এবং হাত দিয়ে মাথার উচ্চতার উপরে বেশি কাজ করলে ঘাড়ের মাংসপেশীতে টান লাগার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • ঘাড়ে আঘাত: পূর্বে ঘাড়ে আঘাত লাগার ফলে সারভাইকাল স্পনডিলাইটিস (cervical spondylosis) হওয়ার ঝুকিঁ থাকে।
  • জিন: কিছু কিছু পরিবার/বংশে এই সমস্যা বেশি হয়। অনুরূপভাবে কিছু পরিবার/বংশে এই সমস্যা কম হয়ে থাকে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

জাতি:  শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি। কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: গরম শেক দিলে ও ধীরে ধীরে ঘাড় প্রসারণ করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। মাসাজ করলেও এক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া  শরীরে পানিশূন্যতা যাতে না হয়, এবং ঘাড়ের অবস্থান যেনো ঠিক থাকে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। বসার সময় বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় ঘাড়ের অবস্থান অস্বাভাবিক হলে ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

হেলথ টিপস্‌

যেহেতু বয়স বৃদ্ধির স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ঘাড়ের মাংসপেশীতে টান বা খিঁচুনি হয়ে থাকে, তাই এই সমস্যা প্রতিরোধের কোনো উপায় নেই। তবে নিয়মিত ব্যায়াম করলে, এবং যে সব কাজ করলে হাত-ঘাড়-কাঁধের উপর চাপ পড়ে, সেগুলি কম করলে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কমানো যেতে পারে। সারভাইকাল স্পাইনের (cervical spine) জন্য সবচেয়ে কার্যকর ব্যায়াম হল সাঁতার কাটা, হাঁটা বা যোগব্যায়াম করা।

খেলাধূলার সময় সঠিক গতিবিধি বজায় রাখলে ঘাড়ে আঘাত লাগার ঝুঁকি কম থাকে। এর ফলে সারভাইকাল স্পনডিলাইটিস হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়্।

দাঁড়ানো, হাঁটা, কম্পিউটারে কাজ করা, ড্রাইভিং করা এবং ঘুমানোর সময় শরীরের অবস্থান (অঙ্গবিন্যাস) ঠিক রাখলে মেরুদণ্ডে আঘাত লাগা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।