স্মৃতিশক্তির সমস্যা (Disturbance of Memory)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

 লক্ষণটি অ্যামনেশিয়া (amnesia), বিস্মরণ, স্মৃতি হ্রাস, সাময়িক স্মৃতি হ্রাস ও স্মৃতিশক্তির ত্রুটি নামেও পরিচিত।

মস্তিষ্কের ক্ষতি, মানসিক ট্রমা বা অন্য কোনো রোগের কারণে স্মৃতিশক্তি বিঘ্নিত হওয়াকেই  স্মৃতিশক্তির সমস্যা বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের সিডেটিভ ও হিপনোটিক (সন্মোহক) ড্রাগ গ্রহণের ফলেও সাময়িকভাবে অ্যামনেশিয়া হতে পারে। মূলত স্মৃতি বিলোপ পাওয়াকেই অ্যামনেশিয়া বলে। অ্যামনেশিয়ার ফলে একজন ব্যক্তির স্মৃতি আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে লোপ পেতে পারে। স্মৃতিলোপের পরিমাণ অ্যামনেশিয়া সৃষ্টিকারী ক্ষতির মাত্রার উপর নির্ভরশীল।

অ্যামনেশিয়া মূলত দুই প্রকার- রেট্রোগ্রেড অ্যামনেশিয়া (retrograde amnesia) ও অ্যানটেরোগ্রেড অ্যামনেশিয়া (anterograde amnesia)। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে (সাধারণত কোনো দুর্ঘটনা বা অপারেশনের মুহূর্ত) গৃহীত/সংরক্ষিত তথ্য স্মরণ করতে অসমর্থ্য হওয়াকে রেট্রোগ্রেড অ্যামনেশিয়া বলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রেট্রোগ্রেড অ্যামনেশিয়ার জন্য কয়েক দশকের স্মৃতিও লোপ পেতে পারে। তবে কিছু রেট্রোগ্রেড অ্যামনেশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কয়েক মাসের স্মৃতি লোপ পায়। অ্যানটেরোগ্রেড অ্যামনেশিয়া বলতে স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি থেকে দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে নতুন তথ্য প্রেরণে অসামর্থ্য হওয়াকে বোঝায়। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘ সময়ের ধরে স্মৃতি সংরক্ষণ করতে পারে না্।

এই দুই ধরনের স্মৃতির সমস্যা প্রকৃতিগতভাবে সম্পূর্ণরূপে পৃথক নয়। একজন ব্যক্তি একই সময়ে এই দুই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মস্তিষ্কের মিডিয়াল টেম্পোরাল লোবের (medial temporal lobe) ক্ষতির সাথে অ্যামনেশিয়া সম্পর্কযুক্ত। এছাড়া মস্তিষ্কের হিপোক্যামপাসের কিছু নির্দিষ্ট স্থানের সাথে স্মৃতির সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় আরো  দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ডায়েনসেফালনের ( diencephalon) কিছু স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হলে অ্যামনেশিয়া দেখা দেয়।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারেঃ যেমন-           

অ্যালঝেইমার ডিজিজ (Alzheimer's disease) ভিটামিন ‘বি১২’ এর অভাব জনিত রোগ (Vitamin B12 deficiency)
ব্রেইন ক্যান্সার (Brain cancer) বিষণ্নতা (Depression)
মাইগ্রেইন (Migraine) সিফিলিস (Syphilis)
স্ট্রোক (Stroke) মৃগী রোগ (Epilepsy)
অস্টিওপরোসিস/অস্থি ক্ষয় (Osteoporosis) পারকিনসন্স ডিজিজ (Parkinson disease)
পেরিফেরাল নার্ভ ডিজঅর্ডার (Peripheral nerve disorder) হিমোক্রোমেটোসিস (Hemochromatosis)
কনকাশন (Concussion) ডিসোশিয়েটিভ ডিজঅর্ডার (Dissociative disorder)
ডিজথাইমিক ডিজঅর্ডার (Dysthymic disorder) এসেনশিয়াল ট্রেমর (Essential tremor)
স্পাইনা বিফিডা (Spina bifida) ফ্যাক্টিশাস ডিজঅর্ডার (Factitious disorder)
সাবঅ্যারাকনয়েড হেমারেজ (Subarachnoid hemorrhage) মেনিনজিওমা (Meningioma)
মাল্টিপল মায়েলোমা (Multiple myeloma) নারকোলেপসি (Narcolepsy)
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple sclerosis) হাইড্রোসেফালাস (Hydrocephalus)
ইন্ট্রাক্রেনিয়াল হেমোরেজ (Intracranial hemorrhage) স্পাইনোসেরিবেলার অ্যাটাক্সিয়া (Spinocerebellar ataxia)
প্যারাথাইরয়েড অ্যাডেনোমা (Parathyroid adenoma) সাবডুরাল হেমারেজ (Subdural hemorrhage)
পিটুইটারী অ্যাডেনোমা (Pituitary adenoma) ভারনিকে করসেকফ সিন্ড্রোম (Wernicke Korsakoff syndrome)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

  • মস্তিষ্কে সার্জারি, মাথায় আঘাত অথবা ট্রমা।
  • স্ট্রোক।
  • মাদকাসক্তি।
  • মৃগী রোগ।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

জাত: কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ স্মৃতিলোপ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। ডিমেনশিয়ার (dementia) কারণে স্মৃতিলোপ হলে স্মৃতি পর্যায়ক্রমে লোপ পেতে থাকে। ডিমেনশিয়ার লক্ষণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়।

হেলথ টিপস্‌

যেহেতু মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া স্মৃতিশক্তির সমস্যা হওয়ার মূল কারণ, তাই মস্তিষ্কের সুরক্ষার জন্য কিছু বিষয় অনুসরণ করা উচিৎ।

  • মদ্যপান ত্যাগ করা।
  • সাইকেল চালানোর সময় হেলমেট ও গাড়ি চালানোর সময় সিট বেল্ট ব্যবহার করা।
  • যে কোনো ধরনের ইনফেকশন হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া যাতে তা মস্তিষ্কে বিস্তার লাভ না করতে পারে।
  • তীব্র মাথাব্যথা, শরীরের এক পাশ অবশ হওয়া, প্যারালাইসিসের মতো স্ট্রোক বা ব্রেন অ্যানুরিজমের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া।