মৃগী রোগ (Epilepsy)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

এপিলেপসি (Epilepsy) বা মৃগী রোগ একটি স্নায়বিক ব্যাধি (Neurological Disorder)। এর লক্ষণগুলো হল আকস্মিক খিঁচুনি বা মূর্চ্ছা যাওয়া বা হঠাৎ বারবার স্নায়ুর সমস্যা হওয়া। এটি মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোর মধ্যে অস্বাভাবিক তড়িৎ প্রবাহের ফলে দেখা দেয়। এর প্রধান লক্ষণ হল খিঁচুনি হওয়া। কখনও কখনও মৃগী রোগের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই বারবার খিঁচুনি দেখা দেয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে শুধু একবারই খিঁচুনি দেখা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ রোগের কোনো নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায় না। তবে যেসব কারণে এ রোগ হতে পারে সেগুলি হল- আঘাত, স্ট্রোক, ব্রেন ক্যান্সার ধূমপান ও মদ্যপান।

কারণ

বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই মৃগী রোগের নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায় না। তবে যেসব কারণে এ রোগ হতে পারে সেগুলি হল-

  • কিছু মৃগী রোগ জিনগত কারণে হয়ে থাকে।  নির্দিষ্ট কিছু জিন একজন ব্যক্তিকে পরিবেশের কোনো উপাদানের প্রতি সংবেদনশীল করে তুলতে পারে, যার ফলে খিঁচুনি হয়ে থাকে।
  • মাথায় কোনো কারণে আঘাত পাওয়ার ফলে এ রোগ হতে পারে।
  • ব্রেন টিউমার বা স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের কোনো ক্ষতি হলে মৃগী রোগ হতে পারে। যাদের বয়স ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে তাদের ক্ষেত্রে মৃগী রোগের প্রধান কারণ হল স্ট্রোক।
  • মেনিনজাইটিস (Meningitis), AIDS এবং ভাইরাল হেপাটাইটিসের (Viral encephalitis) মতো সংক্রামক রোগের কারণে মৃগী রোগ হতে পারে।
  • জন্মের পূর্বে শিশুদের মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। মাতৃগর্ভে বিভিন্ন কারণে যেমন অক্সিজেনের অভাব, পুষ্টির অভাব বা মায়ের ইনফেকশনের জন্য শিশুদের মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং এর ফলে ভবিষ্যতে শিশুদের মৃগী রোগ দেখা দিতে পারে।
  • অটিজম (Autism) বা নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস্ (Neurofibromatosis) শিশুর মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, ফলে এই দু'পি রোগের কারণে মৃগী রোগ দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের ঔষধগুলো দিয়ে থাকেনঃ

carbamazepine clobazam
lamotrigine levetiracetam
phenobarbital sodium phenytoin
ezogabine ethosuximide

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের টেস্টগুলো দিয়ে থাকেনঃ

লাম্বার পাংচার (এল-পি) (Lumber Puncture (LP))
সিটি স্ক্যান অফ হেড (CT scan of head)
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ই-সি-জি) (Electrocardiogram, ECG)
ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম (ই-ই-জি) (Electroencephalogram (EEG))
ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এম-আর-আই) (Magnetic resonance imaging (MRI))
টক্সিকোলজি স্ক্রিন (Toxicology screen)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নির্দিষ্ট কিছু কারণে এ রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে, যেমন-

  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শৈশবের প্রথমদিকে এবং ৬০ বছরের পরে মৃগী রোগ দেখা দেয়। তবে এটি যেকোনো বয়সে হয়ে থাকে।
  • পরিবারের কোনো সদস্য মৃগী রোগে আক্রান্ত হলে অন্যান্য সদস্যের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • মাথায় কোনো কারণে আঘাত পাওয়ার ফলে এ রোগ হতে পারে।
  • যেসব রোগ মস্তিষ্কের ক্ষতি করে থাকে (স্ট্রোক ও অন্যান্য রক্তনালীর সমস্যা) সেগুলি মৃগী রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ সমস্যা এড়াতে অবশ্যই ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
  • বয়স্কদের মধ্যে ডিমেনশিয়া (Dementia) বা স্মৃতিভ্রংশ মৃগী রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • Meningitis এর মত যেসব ইনফেকশন মস্তিষ্কে বা স্পাইনাল কর্ডে (Spinal cord) প্রদাহ/জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে সেগুলি এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • মাঝে মাঝে অতিরিক্ত জ্বরের কারণে শিশুদের  খিঁচুনি হয়ে থাকে। যদিও এই খিঁচুনির ফলে সাধারণত শিশুদের মৃগী রোগ হয় না, তবে কারও দীর্ঘ সময়ের জন্য খিঁচুনি হলে,  স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য সমস্যা থাকলে বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের মৃগী রোগ থাকলে শিশুদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতিঃ কৃঞ্চাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।  শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ আমাদের মস্তিষ্কে নানান ধরণের স্নায়ু রয়েছে। এ স্নায়ুগুলোর মধ্যে আকস্মিকভাবে তড়িৎ প্রবাহের ফলে মৃগী রোগ দেখা দেয়। এই অবস্থায় রোগী হঠাৎ ঝাঁকুনি অনুভব করে, জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ও স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। তবে এ রোগ কোন ধরণের পূর্বাভাস ছাড়াও দেখা দিতে পারে।

উত্তরঃ ৬০ শতাংশ মৃগী রোগ একটিমাত্র ঔষধ দ্বারা নিয়ন্ত্রন করা যায়। এ রোগের ২০ শতাংশ একাধিক ঔষধ দ্বারা নিয়ন্ত্রন করা হয়ে থাকে এবং ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রন করা হয় অপারেশনের মাধ্যমে। কিন্তু এর এক অংশ কোনো ধরণের ঔষধ বা অপারেশনের সাহায্যে নিয়ন্ত্রন করা যায় না যাকে ইন্ট্রাক্টেবল এপিলেপ্সি বলা হয় এবং এর পরিমাণ ১০ শতাংশেরও কম। তবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন অগ্রগতির ফলে ইন্ট্রাক্টেবল এপিলেপ্সির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে।

উত্তরঃ মৃগী রোগ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। কোনো ব্যক্তির বংশধরদের মধ্যে এ রোগ দেখা না গেলেও তার এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

হেলথ টিপস্‌

রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানা থাকলে এ রোগ খুব সহজে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। এ জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করতে হবে-

  • নির্দেশানুযায়ী নিয়মিত ঔষধ খেতে হবে এবং ঔষধে কোনো ধরনের পরিবর্তনের জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
  • সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ও মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ মাহমুদুল ইসলাম

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস,(ডিএমসি), এমডি(নিউরোমেডিসিন), বিসিএস (স্বাস্থ্য)

প্রফেসর ডাঃ ফেরদৌস আরা জে জানান

মেডিসিন ( Medicine), ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস, এমডি(ইউএসএ), এফআইবিএ(ইংল্যান্ড), এফসিপিএস(মেডিসিন), এফআরসিপি (এডিন), এফএসিপি(ইউএসএ)

ডাঃ মোঃ তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এমডি(নিউরোলজী), ডিটিসিডি

অধ্যাপক ডাঃ মেজর জেনারেল কে এম ওমর হাসান(অবঃ)

মেডিসিন ( Medicine), নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এফআরসিপি(গ্লাসগো)

ডাঃ আনিস আহমেদ

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এমডি(নিউরোলজী), এফ এন আই আর

ডাঃ মোঃ মাসুদ রানা (রানা)

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমডি(নিউরোলজি), এফসিপিএস(নিউরোমেডিসিন থিসিস)

ডাঃ হাসান ইমাম

ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine), ডায়াবেটোলজিষ্ট ( Diabetologist)

এমবিবিএস, সিসিডি(বারডেম), এমডি(ইন্টারনাল মেডিসিন)

ডাঃ এ কে এম ফজলুল হক

ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস, এমপিএইচ , এমডি(ইন্টারনাল মেডিসিন)