স্ট্রোক (Stroke)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

মানবদেহের সকল কার্যাবলি মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং এর কার্যকারিতা দ্রুত হ্রাস পায়। মস্তিষ্কের এই ত্রুটিকে স্ট্রোক বলে। মস্তিষ্কের কোনো অংশের রক্তনালী থ্রম্বোসিস ও আর্টেরিয়াল এম্বোলিজমের কারণে বন্ধ হয়ে গেলে (blockage) বা রক্তক্ষরণ (Hemorrhage) এর জন্য মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। মস্তিষ্কের যে অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় ঐ অংশের কোষগুলো প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও গ্লুকোজের অভাবে দ্রুত নষ্ট হতে শুরু করে। ফলে এই কোষগুলো শরীরের যে অংশ নিয়ন্ত্রণ করতো ঐ অংশ অচল ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির কথা বলতে বা কথা বুঝতে অসুবিধা হতে পারে অথবা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। মস্তিষ্কের এই রোগটি সেরেব্রোভাসকুলার এক্সিডেন্ট (cerebrovascular accident), সি-ভি-এ (CVA) এবং এপোপ্লেক্সি (Apoplexy) নামেও পরিচিত।

স্ট্রোক কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-

ইশকেমিক স্ট্রোক (Ischemic strokes):

মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলো সরু হয়ে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ হ্রাস পায় (Ischemia) এবং এর ফলে ইশকেমিক স্ট্রোক হয়ে থাকে। দুই ধরনের ইশকেমিক স্ট্রোক বেশি দেখা যায়। সেগুলো হলো:

  • থ্রম্বোটিক স্ট্রোক (Thrombotic Stroke): মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীর কোনো অংশে রক্ত জমাট বাধার ফলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হলে থ্রম্বোটিক স্ট্রোক হয়।
  • এম্বোলিক স্ট্রোক (Embolic Stroke): রক্ত সরাসরি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহী ধমনীতে জমাট না বেঁধে, মস্তিষ্ক থেকে দূরে সাধারণত হৃৎপিন্ডে জমাট বাঁধতে পারে। এই ব্লাড ক্লট বা জমাট বাঁধা রক্ত রক্তপ্রবাহের সাথে মিশে মস্তিষ্কের ধমনীতে আটকা পড়ে ও ধমনীকে সরু করে দেয়। যার ফলে স্বাভাবিকভাবে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ হতে পারে না এবং এই কারনে এম্বোলিক স্ট্রোক হয়। এই ধরণের ব্লাড ক্লট বা জমাট বাঁধা রক্তকে এম্বোলাস (Embolus) বলা হয়।

হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke):

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে বা কোনো কারণে রক্তনালী ছিঁড়ে গেলে হেমারেজিক স্ট্রোক হয়ে থাকে। রক্তনালীর কোনো দুর্বল অংশ ফুলে গেলে (বেলুনের ন্যায়) (Aneurysm) বা উচ্চ রক্ত চাপ ও অনান্য কারণে রক্তনালীর ক্ষতি হতে পারে ও রক্তক্ষরণ হতে পারে। হেমারেজিক স্ট্রোক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-

  • ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমারেজ (Intracerebral Hemorrhage): এ অবস্থায় রক্তনালী হঠাৎ করে ছিঁড়ে যায় এবং মস্তিষ্কের আশেপাশের টিস্যু ও কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
  • সাবঅ্যারাকনোয়েড হেমারেজ (Subarachnoid hemorrhage): Aneurysm এর ফলে সৃষ্ট ধমনীর থলের ন্যায় স্ফীত অংশটি ছিঁড়ে গেলে বা ফেটে পড়লে রক্তক্ষরণ হয়। রক্তক্ষরণের পর রক্তনালীগুলো খুব দ্রুতভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হতে থাকে। যার ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়।

ট্রানজিয়েন্ট ইশকেমিক অ্যাটাক (Transient ischemic attack) বা টি-আই-এ (TIA):

এটি মিনিস্ট্রোক নামেও পরিচিত। এ অবস্থায় সাময়িকভাবে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়ে। এটি খুব কম সময়ের জন্য (সাধারণত পাঁচ মিনিটের কম) হয় বলে স্ট্রোকের লক্ষণগুলো বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হয় না। ইশকেমিক স্ট্রোকের মত কোনো জমাট বাঁধা রক্তের জন্য মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হলে ট্রানজিয়েন্ট ইশকেমিক অ্যাটাক হয়ে থাকে।

কারণ

মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে স্ট্রোক হয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী ধমনী কোনো কারনে ছিঁড়ে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও গ্লুকোজের অভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

বিভিন্ন কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-

দৈনিন্দিন জীবনের ক্ষেত্রে:

  • অতিরিক্ত মেদবৃদ্ধি।
  • কর্মবিমুখতা।
  • অতিরিক্ত মদ্যপান।
  • ধূমপান।
  • অবৈধ মাদক গ্রহণ, যেমন- কোকেন ও মেথামফেটামিন্সের।

শারীরিক অসুস্থতা:

  • উচ্চ রক্তচাপ।
  • ডায়াবেটিস।
  • কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।
  • রাতে ঘুমানোর সময় শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া (Obstructive sleep apnea)।
  • হার্ট ফেইলিয়র ও হার্ট ইনফেকশনসহ অন্যান্য হৃদরোগ থাকা।

অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়:

যেসকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি তারা হলো:

  • ৫৫ বা ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স।
  • পূর্বে কখনো স্ট্রোক হলে বা পরিবারের কারো হার্ট অ্যাটাক বা ট্রান্সজিয়েন্ট ইশকেমিক অ্যাটাক হয়ে থাকলে।
  • আফ্রিকান-আমেরিকানদের ক্ষেত্রে এই রোগের সম্ভাবনা বেশি।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতি: হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ স্ট্রোকের কারণে অন্যান্য যেসকল সমস্যা হতে পারে সেগুলো হলো:

পক্ষাঘাত, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া, কোনো কিছু মনে রাখা বা চিন্তা করতে অসুবিধা হওয়া, মানসিক ও আবেগ সংক্রান্ত সমস্যা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা হওয়া ও আচরণগত বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেওয়া।

উত্তর: স্ট্রোকের পর বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তবে যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের পর আক্রান্ত ব্যক্তি পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে।

উত্তর: রিহ্যাবিলিটেশন বা পুনর্বাসনের উদ্দেশ্য হলো স্ট্রোকের পর আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। তবে রিহ্যাবিলিটেশনের সফলতা রোগীর শারীরিক অবস্থা ও স্ট্রোকের ধরনের উপর নির্ভর করে। কয়েকজন ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ প্যাথলজিস্ট, রিহ্যাবিলিটেশন স্পেশালিস্ট ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক একসাথে রোগীর রিহ্যাবিলিটেশনের জন্য কাজ করে থাকেন। এই প্রক্রিয়ায় একজন রোগীর সুস্থ হতে প্রায় কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

যেসব কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে সেগুলি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। দৈনন্দিন অভ্যাসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবর্তন এন খুব সহজে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন-

  • স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন করতে হবে।
  • অ্যালকোহলের ব্যবহার কমাতে হবে।
  • রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ বিল্লাল আলম

মেডিসিন ( Medicine), ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(ইন্টারনাল মেডিসিন), এমএসিপি, এফসিপিএস(আমেরিকা)

ডাঃ রুমান হাবীব

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এফসিপিএস(মেডিসিন)

অধ্যাপক ডাঃ মেজর জেনাঃ কে এম ওমর হাসান(অবঃ)

মেডিসিন ( Medicine), নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এফআরসিপি(গ্লাসগো)

ডাঃ হাসান ইমাম

ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine), ডায়াবেটোলজিষ্ট ( Diabetologist)

এমবিবিএস, সিসিডি(বারডেম), এমডি(ইন্টারনাল মেডিসিন)

ডাঃ মোস্তফা কামরুজ্জামান

মেডিসিন ( Medicine), নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, বিসিএস, এমডি(নিউরোলজী)

প্রফেসর ডাঃ দিলিপ কুমার দার

ইন্টারনাল মেডিসিন ( Internal Medicine)

এমবিবিএস, এফসিপিএ (ইউকে)

ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ(সবুজ)

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(নিউরোলজী)

ডাঃ মোঃ মোমেনুজ্জামান খাঁন

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমডি(নিউরোলজি), সি সি ডি(বারডেম)