দুর্বলতা (Weakness)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

দুর্বলতা  কোনো একক শারীরিক অবস্থা নয়, বরং কয়েক ধরনের অসুস্থতার সমন্বয়কে দুবর্লতা বলা হয়। যেমন- মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়া, মাথা ঝিম ঝিম করা, অবসাদ ও ক্লান্তিবোধ। পুরো শরীর জুড়ে বা শরীরের যেকোনো নির্দিষ্ট অংশে দুর্বলতা অনুভব হতে পারে। সাধারণত স্ট্রোক, স্নায়ুতে আঘাত  বা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের (multiple sclerosis) সময় শরীরের নির্দিষ্ট একটি অংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। কখনো কখনো শরীর দুর্বল মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় না। এই ধরনের দুর্বলতাকে বলা হয় সাবজেক্টিভ উইকনেস (subjective weakness), যা ইনফেকশনজনিত কারণ যেমন মনোনিউক্লিয়োসিস (mononucleosis) বা ফ্লু এর জন্য হয়ে থাকে। আবার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ার সাথে সাথে কর্মক্ষমতা হ্রাস পেলে তাকে অবজেক্টিভ উইকনেস (objective weakness) বলা হয়, যা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন: 


শ্বেতরক্ত কণিকা সম্পর্কিত রোগ (White blood cell disease) যোনিদ্বারের ক্যান্সার (Vulvar cancer)
পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ (Gastrointestinal hemorrhage) রক্তস্বল্পতা (Anemia)
ব্রেইন ক্যান্সার (Brain cancer) কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (Cardiac arrest)
লিভারের রোগ (Liver disease) ম্যালেরিয়া (Malaria)
হার্ট ব্লক (Heart block) ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস (Diabetic ketoacidosis)
হার্ট ফেইলিয়র (Heart failure) স্ট্রোক (Stroke)
পাকস্থলীর ক্যান্সার (Stomach cancer) হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia)
খাদ্যনালীর ক্যান্সার (Esophageal cancer) কিডনি ফেইলিয়র (Kidney failure)
আতঙ্কগ্রস্ততা (Panic attack) পারকিনসন্স ডিজিজ (Parkinson disease)
অন্ত্রের রোগ (Intestinal disease) লৌহের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা (Iron deficiency anemia)
অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া (Aplastic anemia) অ্যারিদমিয়া (Arrhythmia)
এন্ডোকার্ডাইটিস (Endocarditis) ইসোফ্যাজিয়াল ভ্যারিসেস (Esophageal varices)
পা্লমোনারী কঞ্জেশন (Pulmonary congestion) গলব্লাডার ক্যান্সার (Gallbladder cancer)
হাইপোথার্মিয়া (Hypothermia) গ্লুকোকরটিকোয়েড ডেফিসিয়েন্সি (Glucocorticoid deficiency)
র‍্যাবডোমায়োলাইসিস (Rhabdomyolysis) হেমিপ্লেজিয়া (Hemiplegia)
কনভারশন ডিজঅর্ডার (Conversion disorder) হাইপারওসমোটিক হাইপারকিটোটিক স্টেট (এইচ-এইচ-এস) (Hyperosmotic hyperketotic state (HHS))
ক্রনিক ইনফ্লামেটরী ডিমায়েলিনেটিং পলিনিউরোপ্যাথি (সি-আই-ডি-পি) (Chronic inflammatory demyelinating polyneuropathy (CIDP)) অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন (Orthostatic hypotension)
প্লুরাল ইফিউশন (Pleural effusion) ফ্লুইড ওভারলোড (Fluid overload)
পালমোনারী এমবলিজম (Pulmonary embolism) ফোলেট ডেফিসিয়েন্সি (Folate deficiency)
সাবঅ্যারাকনয়েড হেমারেজ (Subarachnoid hemorrhage) ল্যাবিরিন্থাইটিস (Labyrinthitis)
সিন্ড্রোম অফ ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট সিক্রেশন অফ এ-ডি-এইচ (Syndrome of inappropriate secretion of ADH (SAIDH)) গুলেন বারে সিন্ড্রোম (Guillain Barre syndrome)
ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্সি (Magnesium deficiency) হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া (Hemolytic anemia)
হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি (Hepatic encephalopathy) মেনিনজিওমা (Meningioma)
মাল্টিপল মায়েলোমা (Multiple myeloma) মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple sclerosis)
মাস্কুলার ডিসট্রফি (Muscular dystrophy) মায়েস্থেনিয়া গ্রেভিস (Myasthenia gravis)
মায়োকার্ডাইটিস (Myocarditis) হাইপারক্যালসেমিয়া (Hypercalcemia)
ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ (Intracerebral hemorrhage) ইন্ট্রাক্রেনিয়াল হেমোরেজ (Intracranial hemorrhage)
হাইপারএমেসিস গ্রেভিডেরাম (Hyperemesis gravidarum) সাইনাস ব্র্যাডিকার্ডিয়া (Sinus bradycardia)
অ্যামাইলয়ডোসিস (Amyloidosis) অ্যামাইওট্রোফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস (Amyotrophic lateral sclerosis (ALS))
সোমাটাইজেশন ডিজঅর্ডার (Somatization disorder) কিডনির রোগজনিত রক্তসল্পতা (Anemia due to chronic kidney disease)
হাইপারকেলেমিয়া (Hyperkalemia) হাইপারনেট্রেমিয়া (Hypernatremia)
হাইপোক্যালসেমিয়া (Hypocalcemia) বিনাইন প্যারোক্সিজমাল পজিশনাল ভার্টিগো (বি-পি-পি-ভি) (Benign paroxysmal positional vertigo (BPPV))
হাইপোনেট্রেমিয়া (Hyponatremia) অ্যানিমিয়া অফ ক্রনিক ডিজিজ (Anemia of chronic disease)
প্যারাথাইরয়েড অ্যাডেনোমা (Parathyroid adenoma) উইলসন ডিজিজ (Wilson disease)
নিউমোনিয়া (Pneumonia)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

বয়স বাড়ার সাথে একজন ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো দুর্বলতা বা অবসাদের ঝুঁকি বাড়ায়:

  • বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি।
  • অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার বা উদ্বেগ।
  • ক্যান্সার।
  • সিরোসিস।
  • এইচ-আই-ভি ইনফেকশন।
  • কিডনি ফেইলিয়র।
  • কনজেসটিভ হার্ট ফেইলিয়র।
  • বিষণ্নতা।
  • অপুষ্টি।
  • রক্তস্বল্পতা।
  • মাদক সেবন।
  • অ্যাজমা।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতি: কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

হেলথ টিপস্‌

বিভিন্ন কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এই লক্ষণ সাময়িক বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তাই শরীরকে সতেজ ও কর্মক্ষম রাখতে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, যেমন-

  • অসুস্থ অবস্থায় কাজের অতিরিক্ত চাপ না নিয়ে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিন।
  • সুস্থ হয়ে ওঠার পর ধীরে ধীরে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে শুরু করুন। এ অবস্থায় কোনোভাবেই অতিরিক্ত কাজের চাপ নেয়া যাবে না। এতে দীর্ঘদিনের জন্য পুনরায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অনুশীলনের সময় নিজের শারীরিক অবস্থা ও কর্মক্ষমতা অনুযায়ী ব্যায়াম  করুন। শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এমন ব্যায়াম করা যাবে না।
  •  ঘুমের ঔষধ, অ্যালার্জির ঔষধ বা সর্দি-কাশি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ সেবন করা হলে দুর্বলতা বোধ হতে পারে। তাই এসকল ঔষধের ব্যবহার সীমিত রাখুন। যতটা সম্ভব এই ঔষধগুলো গ্রহণ না করার চেষ্টা করুন।
  • দৈনিন্দিন খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনুন। প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন। দিনের প্রতিটি সময়ের খাবার সময়মত খাওয়া জরুরি। তাই খেয়াল রাখবেন আপনি সময়মত খাবার খাচ্ছেন কি না, বিশেষ করে সকালের নাস্তা।
  • ধূমপান, অ্যালকোহল, মাদক ও ক্যাফেইন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের জন্য সময় ভাগ করে নিন। দীর্ঘক্ষণ ধরে কোনো কাজ করবেন না, এবং কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। এতে একঘেয়েমি ও অবসাদবোধ হবে না, এবং কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
  •  নিয়মিত ৮-১০ ঘন্টা ঘুমান। পরিমিত পরিমাণ ঘুমের অভ্যাস দুর্বলতা বা অবসাদ প্রতিরোধের প্রথম ও প্রধান শর্ত।