অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (Fainting)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

লক্ষণটি সিনকোপ (Syncope), মূর্চ্ছা যাওয়া, জ্ঞান হারানো ও অচেতন হওয়া নামেও পরিচিত।

মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে সাময়িকভাবে অচেতন হয়ে যাওয়াকে অজ্ঞান হওয়া বলা হয়। এই অচেতন অবস্থা  ২ মিনিটের চেয়ে কম স্থায়ী হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুতই সুস্থ হয়ে ওঠে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই সমস্যাকে সিনকোপ বলা হয়। এই সমস্যার ফলে একজন ব্যক্তি জ্ঞান হারানোর পাশাপাশি পেশীর শক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং তার মুখের রঙ অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এছাড়া জ্ঞান হারানোর পূর্বে একজন ব্যক্তি দুর্বল ও বমি বমি ভাব বোধ করতে পারেন। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির দৃষ্টি সংকুচিত [টানেল ভিশন (tunnel vision)] হওয়া এবং শব্দ ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন-

পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ (Gastrointestinal hemorrhage) ম্যালেরিয়া (Malaria)
হার্ট ব্লক (Heart block) হার্ট এ্যাটাক (Heart attack)
হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia) অন্ত্রের রোগ (Intestinal disease)
পেরিকার্ডাইটিস (Pericarditis) অ্যারিদমিয়া (Arrhythmia)
কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং (Carbon monoxide poisoning) পালমোনারী ফাইব্রোসিস (Pulmonary fibrosis)
হিট স্ট্রোক (Heat stroke) হাইপোথার্মিয়া (Hypothermia)
হার্ট কনটিউশন (Heart contusion) কনভারশন ডিজঅর্ডার (Conversion disorder)
ক্রিপ্টোকোক্কোসিস (Cryptococcosis) হাইপারওসমোটিক হাইপারকিটোটিক স্টেট (এইচ-এইচ-এস) (Hyperosmotic hyperketotic state (HHS))
অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন (Orthostatic hypotension) কনডাক্ট ডিজঅর্ডার (Conduct disorder)
সাবঅ্যারাকনয়েড হেমারেজ (Subarachnoid hemorrhage) হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি (Hepatic encephalopathy)
অ্যালকোহল ইনটক্সিকেশন (Alcohol intoxication) সাইনাস ব্র্যাডিকার্ডিয়া (Sinus bradycardia)
সোমাটাইজেশন ডিজঅর্ডার (Somatization disorder) স্পাইনোসেরিবেলার অ্যাটাক্সিয়া (Spinocerebellar ataxia)
হাইপারনেট্রেমিয়া (Hypernatremia) বিনাইন প্যারোক্সিজমাল পজিশনাল ভার্টিগো (বি-পি-পি-ভি) (Benign paroxysmal positional vertigo (BPPV))
হাইপোনেট্রেমিয়া (Hyponatremia) প্যারোক্সিসমাল সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া (Paroxysmal supraventricular tachycardia)
অ্যাওর্টিক ভাল্ভ ডিজিজ (Aortic valve disease) সেরিঙ্গোমায়েলিয়া (Syringomyelia)
অ্যাস্পারজারস সিন্ড্রোম (Asperger's syndrome) ভারনিকে করসেকফ সিন্ড্রোম (Wernicke Korsakoff syndrome)
উইলসন ডিজিজ (Wilson disease) ফ্র্যাকচার অফ দি স্কাল (Fracture of the skull)
পেলভিক ফিস্টুলা (Pelvic fistula)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যে সকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • শারীরিক ও মানসিক চাপ।
  • ব্যথা।
  • দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা।
  • কাশি, হাঁচি ও হাসির মতো শারীরিক ক্রিয়া।
  • মানসিক পীড়া।
  • ভয়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে এই লক্ষণ দেওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে।

জাত: কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্প্যনিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: শরীরের উপর বেশি মাত্রায় চাপ পড়ে এমন কোনো ব্যায়াম করার পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় পান করা উচিৎ।

ব্যায়াম করা হলে শরীরের শিরা ও ধমনী প্রসারিত হয়, ফলে রক্তচাপ কমে যায়। এ জন্য ব্যায়াম করার সময় দুর্বল ও মাথা হালকা বোধ হওয়ার অনুভূতি হয়ে থাকে। সকালে ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকলে রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিৎ। এছাড়া ক্যাফেইন ও উচ্চ মাত্রার চিনিযুক্ত এনার্জি ড্রিঙ্ক গ্রহণ না করা ভালো। এগুলি গ্রহণ করার পর সাময়িকভাব ভালো বোধ হলেও পরবর্তীত পানিশূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে।

উত্তর: রক্তচাপ কমে গেলে এমন সমস্যা হতে পারে। এ সময় শরীর স্বয়ংক্রিয়ভা্বে হৃদস্পন্দনের গতি বাড়িয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধির চেষ্টা চালায়।

হেলথ টিপস্‌

আপনার যদি পূর্বে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে এই সমস্যা রোধ করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। এছাড়া যেসব পরিস্থিতিতে আপনার অজ্ঞান হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলি এড়িয়ে চলুন।

শোয়া বা বসা অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে দাঁড়ানোর অভ্যাস করুন। যদি শরীর থেকে রক্ত নেওয়ার মুহূর্তে আপনার অজ্ঞান  হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ব্লাড টেস্টের  আগে রক্ত গ্রহণকারীকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করুন, এবং রক্ত দেওয়ার মুহূর্তে শুয়ে থাকুন।

আপনার আশেপাশে কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি অনুসরণ করুন-

  • আক্রান্ত ব্যক্তির গলার চারপাশ থেকে পোশাক ঢিলা করে দিন।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির পা হৃৎপিণ্ডের সমতলের উপরে রাখুন।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে কমপক্ষে ১০-১৫ মিনিটের জন্য ঠান্ডা ও শান্ত কোনা স্থানে শুইয়ে রাখুন। এটি করা সম্ভব না হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে তার মাথা হাঁটুর মাঝে রেখে বসিয়ে দিন।

প্রয়োজনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।