অন্ত্রের রোগ (Intestinal disease)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

এটি বৃহদান্ত্রের  রোগ বা  অন্ত্রের  রোগ (Bowel Disease) এবং অন্ত্রের ব্যাধি (Intestinal Disorder) নামেও পরিচিত। মানবদেহে অন্ত্র হলো পরিপাক নালীর একটি অংশ যা পাকস্থলির পাইলোরিক স্ফিংটার (Pyloric sphincter) হতে মলদ্বার (Anus) পর্যন্ত বিস্তৃত। সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীর অন্ত্র দুইভাগে বিভক্ত থাকে, একটিকে বলা হয় ক্ষুদ্রান্ত্র (Small intestine) এবং অপরটিকে বলা হয় বৃহদান্ত্র (Large intestine)। মানবদেহে ক্ষুদ্রান্ত্র ডিওডেনাম (Duodenum), জেজুনাম (Jejunum) ও ইলিয়ামে (Ileum) বিভক্ত থাকে এবং বৃহদান্ত্র সিকাম (Cecum) ও কোলনে (Colon) বিভক্ত থাকে। এই ব্যাধি মূলত ক্ষুদ্রান্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। অন্ত্রের ব্যাধি অনেক ধরনের হতে পারে। এর কারণে দেহে খাদ্য পরিপাক ও খাদ্য শোষণ পদ্ধতি ব্যাহত হয়। অন্ত্রের সমস্যার চিকিৎসা করা না হলে অস্বস্তিবোধের সাথে সাথে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। যেসকল অন্ত্রের ব্যাধি মূলত ক্ষুদ্রান্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে সেগুলো হলোঃ

  • ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম বা আই-বি-এস [Irritable bowel syndrome (IBS)]: এটি ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র উভয়ের ক্ষতি করে। এর কারণে ঘন ঘন গ্যাস্ট্রোয়েইস্টেস্টিনাল সমস্যা হয় যা দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে।
  • ক্রন’স ডিজিজ (Crohn’s disease): এটি অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ। এটি একটি অটোইমিউন ডিজঅর্ডার যার কারণে দেহের অন্ত্র থেকে শুরু করে মলদ্বার পর্যন্ত এমনকি মুখের সুস্থ কোষও নষ্ট হয়ে যায়।
  • সিলিয়াক ডিজিজ (Celiac disease): এক্ষেত্রে গ্লুটেন নামক এক ধরনের খাদ্য উপাদান এর প্রতি দেহ অসহিষ্ণুতা দেখায়। এই অবস্থায় গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার খেলে তা ক্ষুদ্রান্ত্রের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
  • ইন্টেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশন (Intestinal obstruction): এর কারণে অন্ত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় এর ফলে পরিপাক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

এছাড়া আলসার, ইনফেকশন ও ইস্টেস্টিনাল ক্যান্সারের কারণেও অন্ত্রের ব্যাধি হতে পারে।

কারণ

অন্ত্রের ব্যাধিগুলোর মধ্যে IBS বা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (Irritable bowel syndrome) সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, এই সমস্যা নির্দিষ্ট কি কারণে হয়ে থাকে তা এখনো জানা যায়নি।

ক্রন’স ডিজিজের (Crohn’s disease) কারণ এখনো অজানা, তবে কিছু বিষয়ের কারণে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়ঃ

  • ধূমপান
  • খাদ্যাভ্যাস ও পরিবেশগত কারণ।
  • মাইক্রোবায়াল এবং ইমিউনোলজিক ফ্যাক্টর।
  • একই পরিবারের কোনো সদস্য ক্রন’স ডিজিজ আক্রান্ত হলে অন্যান্য সদস্যদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

সিলিয়াক ডিজিজ একটি জেনেটিক ডিজঅর্ডার বা জিনগত ব্যাধি। যখন ইমিউন সিস্টেম ক্ষুদ্রান্ত্রের অভ্যন্তরীণ স্তরকে আক্রমণ করে তখন সিলিয়াক ডিজিজ হয়। গ্লুটেনযুক্ত খাবার খেলে এই রোগ হয়। বার্লি, রাই ও গমে প্রচুর পরিমাণে গ্লুটেন পাওয়া যায়। 

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিতলক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শদিয়ে থাকেন:  

mebeverine hydrochloride metronidazole
ciprofloxacin sulfasalazine
azathioprine cyclosporin
esomeprazole hyoscine butylbromide
lansoprazole loperamide hydrochlor
omeprazole prednisolone
ranitidine methotrexate
rifaximin

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শদিয়ে থাকেন:  

ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
লিভার ফাংশন টেস্ট (Liver function tests)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
সিটি স্ক্যান অ্যাবডোমেন (CT scan abdomen)
ইউরিন এনালাইসিস (Urinalysis)
এক্স-রে, এবডোমেন (X-ray, Abdomen)
ফোলেট (Folate)
ভিটামিন বি-১২ (Vit. B12)
ই-এস-আর (এরাইথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশন রেট) (ESR, Erythrocyte Sedimentation Rate)
এন্ডোস্কপিক রেট্রোগ্রেড কোলানজিও-প্যানক্রিয়াটোগ্রাফি (ই-আর-সি-পি) (Endoscopic retrograde cholangio-pancreatography (ERCP))
এন্ডোস্কপি ওফ আপার জি-আই (Endoscopy of Upper GI)
সিগময়ডোস্কপি অর কোলনস্কপি (Sigmoidoscopy or colonoscopy)
সি-আর-পি কোয়ালিটেটিভ/কোয়ান্টিটেটিভ (CRP qualitative/quantitative)
ইউ-এস-জি ডব্লিউ/এ (USG W/A)
স্টুল কালচার (Stool Culture)
পি-এ-এন-সি-এ (P-ANCA)
টি-আই-বি-সি (Total Iron Binding Capacity, TIBC)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্লিখিত বিষয়ের কারনে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়ঃ

  • সাধারণত ৩০ বছরের পূর্বেই ব্যক্তির এই রোগ হয়ে থাকে।
  • শ্বেতাঙ্গদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • একই পরিবারের কোনো সদস্য ক্রন’স ডিজিজ আক্রান্ত হলে অন্যান্য সদস্যদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • যারা ধূমপান করে তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • আইসোট্রেটিনোইন নামক এক ধরনের ঔষধ যা ব্রনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, এই ঔষধ বেশি খেলে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • ননস্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরী মেডিকেশন যেমন- ইবিউপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন, ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ঔষধের কারনে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • পরিবেশগত কারন ও খাদ্যাভাসের কারণেও এই রোগ হতে পারে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ  পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতিঃ  শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার যেমন- ভুষি, রুটি, সিরিয়াল, সীম, ফলমূল এবং শাক-সবজি বেশি খেতে হবে।

উত্তরঃ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার যেমন- ভুষি, রুটি, সিরিয়াল, সীম, ফলমূল এবং শাক-সবজি বেশি খেতে হবে।

উত্তরঃ  যেসব খাবার খেলে IBS হতে পারে তা হলোঃ

  • চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।
  • দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমন- পনির বা আইস-ক্রিম।
  • চকোলেট।
  • অ্যালকোহল।
  • ক্যাফেইন।
  • কোমল পানীয়।
  • সরবিটল।
  • সীম, ব্রকোলি ও বাঁধাকপি জাতীয় শাকসবজি প্রভৃতি।

হেলথ টিপস্‌

নিম্নলিখিত পন্থা অবলম্বন করে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়ঃ

  • দুগ্ধ জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
  • কম চর্বিযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে।
  • মশলাযুক্ত খাবার, ক্যাফেইন ও মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে।
  • অল্প অল্প করে খেতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
  • ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে।
  • চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে শারীরিক অনুশীলন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোহাম্মদ শোয়েব চৌধুরী

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এম বি বি এস, এম ডি( গ্যাষ্ট্রোএন্টারোলজী)

ডঃ এস এম রোকনুজ্জামান

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology), হেপাটোলজি ( লিভার) ( Hepatology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(গ্যাস্ট্রো এন্টারলজি এন্ড হেপাটোলজি)

ডাঃ রঞ্জিত কুমার বনিক

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস,, এমডি(গ্যাষ্ট্রোএন্টারোলজী)

ডাঃ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমডি(গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজী)

ডাঃ মোঃ কবীরউজ জামান

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, , এমসিপিএস, , এফসিজিপি(ইউএসএ)

ডাঃ মোঃ শোয়েব চৌধুরী

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এম বি বি এস, এম ডি(গ্যাষ্ট্রোএন্টারোলজি)

অধ্যাপক ডাঃ ফারুক আহমেদ

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমডি(গ্যাস্ট্রো)

ডাঃ মোহাম্মদ কামরুল হাসান

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস মেডিসিন, এমডি(গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজী)