পারকিনসন্স ডিজিজ (Parkinson disease)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

পারকিনসন্স  ডিজিজ স্নায়ুতন্ত্রের একটি ক্রমবর্ধমান ব্যাধি, যা শরীরের স্বাভাবিক নড়াচড়া করার ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক হাতে সামান্য কাঁপুনি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এই ব্যাধির সূত্রপাত ঘটে। তবে কাঁপুনি পারকিনসন্স  ডিজিজের প্রধান লক্ষণ হলেও এর ফলে শরীরে অনমনীয়তা দেখা দেয় এবং শরীরের স্বাভাবিক নড়াচড়া ধীর হয়ে যায়।

পারকিনসন্স  ডিজিজের প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখমণ্ডলে অভিব্যক্তি কম প্রকাশ পায়, বা একেবারেই প্রকাশ পায় না। হাঁটার সময় এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির হাত ঠিকমতো দোলে না। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির কথাও বেধে যেতে পারে। পারকিনসন্স  ডিজিজের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে লক্ষণগুলিও আরও তীব্র হতে থাকে।

পারকিনসন্স ডিজিজের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকলেও, কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে এর লক্ষণগুলিকে প্রশমিত করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে লক্ষণগুলি প্রশমিত করার জন্য সার্জারিও  করা হয়।

কারণ

পারকিনসন্স ডিজিজের সঠিক কারণ এখনো অজানা, তবে এই রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হয়

  • জিন: গবেষকরা সুনির্দিষ্ট কিছু জিনের পরিবর্তন চিহ্নিত করেছেন( genetic mutations) যেগুলি পারকিনসন্স ডিজিজের কারণ হতে পারে। তবে  একই পরিবারের বেশ কিছু সংখ্যক ব্যক্তি পারকিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার  ক্ষেত্রে ব্যতিত এই ধারণাটি অন্য কোনো ক্ষেত্রে তেমন প্রযোজ্য  নয়।
  • সুনির্দিষ্ট জিন ছাড়াও অন্যান্য জিনগত পরিবর্তনও পারকিনসন্স ডিজিজেজ ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তবে এই ঝুঁকির মাত্রা খুব বেশি নয়।
  • পরিবেশগত প্রভাবক: কিছু বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ এবং পরিবেশগত বিষয় পারকিনসন্স ডিজিজের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে এই ঝুঁকিও বেশি মাত্রার নয়।
  • লিউই বডিজের ( Lewy bodies) উপস্থিতি: মস্তিষ্কের কোষের মধ্যে গুচ্ছাকারে থাকা উপাদান পারকিনসন্স ডিজিজের নির্দেশক। এগুলিকে লেউই বডিজ বলে। গবেষকরা ধারণা করেন যে, এগুলির সাথে পারকিনসন্স ডিজিজের কারণ সম্পর্কযুক্ত।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

amantadine hydrochloride entacapone
levodopa + carbidopa rivastigmine
selegiline memantine
donepezil hydrochloride levodopa + carbidopa
rivastigmine selegiline
memantine entacapone
tolcapone

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

ডিপ্রেশন স্ক্রিনিং (Depression screen)
লাম্বার পাংচার (এল-পি) (Lumber Puncture (LP))
ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এম-আর-আই) (Magnetic resonance imaging (MRI))
পজিট্রন এমিশন টোমোগ্রাফি (Positron emission tomography, PET)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পারকিনসন্স ডিজিজের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:

  • বয়স: তরুণরা পারকিনসন্স ডিজিজে কম আক্রান্ত হয়। সাধারণত মধ্যবয়স্ক বা তার চেয়েও বেশি বয়সের ব্যক্তিদের এই রোগ হয়ে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • বংশ: আপনার কোনো নিকটাত্মীয়ের পারকিনসন্স ডিজিজ থাকলে আপনার এই ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। তবে আপনার বহু সংখ্যক আত্মীয় এতে আক্রান্ত না হলে আপনার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
  • লিঙ্গ: মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা পারকিনসন্স ডিজিজে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
  • বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ: হারবিসাইডস/আগাছানাশক ( herbicides) এবং পেস্টিসাইডস/কীটনাশক ( pesticides) এর সংস্পর্শে গেলে পারকিনসন্স ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। নারীদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাত: হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: গবেষকদের ধারণা মতে,  কিছু জিনগত বিষয় এবং পরিবেশগত প্রভাবক পারকিনসন্স ডিজিজ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। তবে যেহেতু এই ব্যাধির সঠিক কারণ এখনো অজানা, তাই তা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।

উ: যদিও পারকিনসন্স ডিজিজ খুব ধীরে বৃদ্ধি পায়, তবুও রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। পর্যায়ক্রমে শরীরের স্বাভাবিক নড়াচড়ার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াকে মেনে নেওয়া  আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে খুব কঠিন হতে পারে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে রোগটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। ভবিষ্যতে রোগটির কারণে কী  হতে পারে, তা জানলে আক্রান্ত ব্যক্তির দুশ্চিন্তা অনেকাংশে কমে যেতে পারে।

উত্তর: পারকিনসন্স ডিজিজের লক্ষণের মাত্রা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। রোগটি ঠিক কতো দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, তাও সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। পারকিনসন্স ডিজিজ প্রাণনাশক কোনো রোগ  নয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনকাল স্বাভাবিক জীবনকালের মতোই হয়ে থাকে। তবে পারকিনসন্স ডিজিজের কারণে সৃষ্ট অন্যান্য সমস্যার(যেমন- নিউমোনিয়া, পড়ে যাওয়ার কারণে আঘাত পাওয়া এবং বিষম খাওয়া ) জন্য মৃত্যু হতে পারে। চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের  কিছু লক্ষণের মাত্রা কমিয়ে রাখা সম্ভব। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকতে পারেন।

হেলথ টিপস্‌

আপনি  পারকিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত হলে নিম্নে লিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করতে পারেন:

শরীরের ওজন  নিয়ন্ত্রণে রাখা: পারকিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। পারকিনসন্স ডিজিজের  মাত্রা বৃদ্ধি পেলে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাবার চাবানোর সময়েও বেশ পরিশ্রম করতে হয়। তাছাড়া ক্রমাগত ওজন কমতে থাকলে তা স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। আপনি এই রোগে আক্রান্ত হলে এমন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন, যা খেতে আপনাকে খুব বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হয় না।

ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর নমনীয় রাখুন: পারকিনসন্স ডিজিজের কারণে শরীরের  কিছু কিছু অংশের স্বাভাবিক নড়াচড়া ব্যাহত হয়। তবে ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনি কিছুটা হলেও এই সমস্যা কমাতে পারবেন। ব্যায়াম করার সময় শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধির উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, শক্তি বৃদ্ধির উপরে নয়।

হাঁটার সময় লাঠি ব্যবহার: পারকিনসন্স ডিজেজের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে হাঁটার সময় আপনি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়তে পারেন। তাই স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করা আপনার জন্য নিরাপদ নয়। এজন্য হাঁটার সময় লাঠি ব্যবহার করুন।

স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে সতর্ক হওয়া: পারকিনসন্স ডিজিজ বা বয়সজনিত কারণে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া এই রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ঔষধের[যেমন- বেঞ্জট্রোপিন( benztropine) এবং ট্রাইহেক্সিফেনিডাইল( trihexyphenidyl)] কারণেও স্মৃতিশক্তি প্রভাবিত হতে পারে। আপনি এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ মোঃ মোমেনুজ্জামান খাঁন

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এমডি(নিউরোলজি), সি সি ডি(বারডেম)

ডাঃ মোঃ নাহিদুল ইসলাম

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এমডি(নিউরোলজি)

ডাঃ মোঃ ইসমাইল চৌধুরী

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউরোলোজি), এ্যাভান্স ট্রেনিং ইন নিউরোলোজি (টোকিও)

অধ্যাপক ডাঃ মেজর জেনাঃ কে এম ওমর হাসান(অবঃ)

মেডিসিন ( Medicine), নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এফআরসিপি(গ্লাসগো)

ডাঃ মোঃ রাশেদুল ইসলাম

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস , , এফসিপিএস(মেডিসিন গোল্ড মেডালিষ্ট) , এমআরসিপি (ইউকে), এমএসিপি (ইউএসএ )

ডাঃ খন্দকার পারভেজ মাহমুদ

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস(ডি,ইউ), এমএসসি, ডায়াবেটিস(ইউকে), পিএইচডি নিউরোমেডিসিন(ইটালি)

ডাঃ আহমেদ হোসেন চৌধুরী

নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য), এমডি(নিউরোলজি

ডাঃ শেখ মোঃ আবুল ফজল

মেডিসিন ( Medicine), নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস (ঢাকা মেডিকেল কলেজ), এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউরোলজি)