তরল জমা হওয়া (Fluid retention)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

লক্ষণটি জল জমা হওয়া ও এডেমা (edema) হিসেবেও পরিচিত।

শরীরে তরল জমা বলতে রক্তসংবহনতন্ত্র, টিস্যু এবং শরীরের অন্যান্য গহবরে অতিরিক্ত পরিমাণে তরল জমা হওয়াকে বোঝায়। মানব শরীরের প্রায় ৭০% পানি। এই পানি শরীরের কোষের ভিতরে বা বাইরে জমা হতে পারে। রক্ত, মাংসপেশী ও বিভিন্ন অঙ্গেও পানি বিদ্যমান থাকে।

হৃৎপিণ্ড, রক্তপ্রবাহ ও কিডনির রোগসহ অন্যান্য রোগের কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, হরমোনজনিত বিষয় ও পানিশূন্যতার ফলে শরীরে তরলের ভারসাম্যে পরিবর্তন হয়। এই কারণে শরীরের ওজন কিছু অংশে বৃদ্ধি পেতে পারে। শরীরে তরল জমা হওয়া বলতে কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যাকেও বোঝানো হয়।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন:

শ্বেতরক্ত কণিকা সম্পর্কিত রোগ (White blood cell disease) যোনিদ্বারের ক্যান্সার (Vulvar cancer)
অ্যালার্জি (Allergy) মাম্পস (Mumps)
ডায়াবেটিক কিটোএ্যাসিডোসিস (Diabetic ketoacidosis) হার্ট ফেইলিয়র (Heart failure)
পাকস্থলীর ক্যান্সার (Stomach cancer) ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার (Ovarian cancer)
বদহজম (Indigestion) অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া (Aplastic anemia)
ব্রঙ্কিয়েক্টেসিস (Bronchiectasis) সিউডোটিউমার সেরেব্রি (Pseudotumor cerebri)
প্রাইমারী থ্রম্বোসাইথেমিয়া (Primary thrombocythemia) ডিজলোকেশন অফ প্যাটেলা (Dislocation of patella)
পা্লমোনারী কঞ্জেশন (Pulmonary congestion) গলব্লাডার ক্যান্সার (Gallbladder cancer)
পালমোনারী ইওসিনোফিলিয়া (Pulmonary eosinophilia) হেমাটোমা (Hematoma)
ডিজলোকেশন অফ দি প্যাটেলা (Dislocation of the patella) ফ্লুইড ওভারলোড (Fluid overload)
ইরাইথেমা মাল্টিফর্মি (Erythema multiforme) টুথ অ্যাবসেস (Tooth abscess)
লাং কনটিউশন (Lung contusion) হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি (Hepatic encephalopathy)
লিম্ফ্যাডেমা (Lymphedema) নন-ইনফেকশস গ্যাস্ট্রোয়েন্টেরাইটিস (Noninfectious gastroenteritis)
হাইপারনেট্রেমিয়া (Hypernatremia) সাবঅ্যাকিউট থাইরয়ডাইটিস (Subacute thyroiditis)
প্যারাথাইরয়েড অ্যাডেনোমা (Parathyroid adenoma) পোস্টঅপারেটিভ ইনফেকশন (Postoperative infection)
ফ্র্যাকচার অফ দি শোল্ডার (Fracture of the shoulder) কঞ্জেনিটাল ম্যালফরমেশন সিন্ড্রোম (Congenital malformation syndrome)
পেরিরেক্টাল ইনফেকশন/ অ্যানোরেক্টাল অ্যাবসেস (Perirectal infection/Anorectal abscess)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যে সকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

ভ্রূণ ও প্ল্যাসেনটার (placenta) প্রয়োজনীয় পানির জন্য গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পানি জমা হয়। এর ফলে এডেমা হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

নিম্নোক্ত ঔষধগুলি গ্রহণ করলেও শরীরে পানি জমার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়-

  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রহণকৃত ঔষধ।
  • ননস্টেরয়েডাল/স্টেরয়েডহীন অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ঔষধ।
  • স্টেরয়েডযুক্ত ঔষধ।
  • স্ট্রোজেন।
  • থায়াজোলিডাইনডিওন (thiazolidinedione) নামক কিছু ডায়াবেটিসরোধী ঔষধ।
আপনি হার্ট ফেইলিওর, লিভারের রোগ ও কিডনির রোগের মতো কোনো ক্রনিক রোগে (দীর্ঘস্থায়ী ও বারবার দেখা দেয়) আক্রান্ত হলে আপনার এডেমা হতে পারে। এছাড়া সার্জারির কারণে লিম্ফ নোড বাধাগ্রস্থ হয়। এর ফলে এক হাত বা পায়ে তরল জমতে (সাধারণত এক পাশে) পারে।  

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে এই লক্ষণ দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে।

জাত: শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা থাকে। হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: না। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে শিরা, কিডনি, লিভার বা হৃৎপিণ্ডে কোনো সমস্যা হয়েছে কীনা, বা কোনো ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কীনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া উচিত।

উত্তর: না। পানি পান করলে এই সমস্যা কমে না।

হেলথ টিপস্‌

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করে শরীরে তরল জমা হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যেতে পারে-

  • শরীর নড়াচড়া: শরীরের এডেমা আক্রান্ত অংশ নড়াচড়া করলে ওই অংশে জমে থাকা অতিরিক্ত তরল হৃৎপিণ্ডে ফিরে যেতে পারে। কোন ধরনের ব্যায়াম করে জমে থাকা তরল কমে যেতে পারে, সে ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • আক্রাস্ত স্থান উঁচু করে রাখা: আক্রান্ত স্থান হৃৎপিণ্ডের অনভূমিক তল থেকে দিনে কয়েক বার উঁচু করে ধরুন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘুমানের সময় আক্রান্ত স্থান উঁচু করে রাখলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
  • মাসাজ: আক্রান্ত স্থানে কিছুটা জোরে হাত বোলানো হলে (হৃৎপিণ্ডের দিকে) জমে থাকা তরল ঐ স্থান থেকে সরে যেতে পারে।
  • চাপ প্রয়োগ: আপনার শরীরের কোনো অংশে এডেমা হলে চিকিৎসক আপনাকে সেই স্থানে চাপ প্রয়োগ করে এমন সামগ্রী (মোজা বা গ্লাভস ) ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারে। এগুলি আক্রান্ত স্থানে চাপ প্রয়োগ করে টিস্যুতে তরল জমা প্রতিরোধ করে।
  • সুরক্ষা: আক্রান্ত স্থানে যাতে আঘাত না লাগে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। শুষ্কতা, ফেটে যাওয়া ও কেটে যাওয়ার ফলে ত্বকে ইনফেকশন সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনার পায়ে তরল জমার সম্ভাবনা বেশি থাকলে পায়ের সুরক্ষার প্রতি যত্নশীল হোন।
  • কম পরিমাণ লবণ গ্রহণ: আপনার কতোটুকু লবণ গ্রহণ করা উচিত, সে ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। লবণের কারণে শরীরে জমা হওয়া তরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং এডেমা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।