গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা (Problems during pregnancy)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের হিসাব মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রসবজনিত মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৭০ জন। প্রতি বছরই প্রায় ১২ হাজার নারী প্রসবজনিত জটিলতার কারণে মারা যান। গর্ভাবস্থায় নারীদের চাই বিশেষ যত্ন। মহিলাদের গর্ভধারণের পূর্বেই নিজের স্বাস্থ্য, গর্ভধারণ ও সন্তান পালন সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। কারণ একজন সুস্থ্য মা-ই পারে একটি সু্স্থ ও স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে। তাই গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজন সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা। গর্ভকালীন যত্ন বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করতে পারে।

গর্ভকালীন জটিলতার ফলে মা ও শিশু উভয়ের জীবনের ঝুঁকি দেখা দেয়। এসব জটিলতার ৫টি বিপদ চিহ্ন রয়েছে। এরকম অবস্থায় মায়েদের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। এই ৫টি বিপদ চিহ্ন হলো-

  • গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খুব বেশি রক্তস্রাব এবং গর্ভফুল না পড়া।
  • গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর তিনদিনের বেশি জ্বর বা দুর্গন্ধ যুক্ত স্রাব নির্গত হওয়া।
  • গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে ও প্রসবের পরে শরীরে পানি আসা, খুব বেশি মাথা ব্যথা হোয়া ও চোখে ঝাপসা দেখা।
  • গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পরে খিঁচুনী।
  • প্রসব ব্যথা ১২ ঘন্টার বেশি থাকা ও প্রসবের সময় বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ প্রথমে বের হওয়া।

(সূত্রঃ জাতীয় ই-তথ্যকোষ)

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারেঃ যেমন-

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত কারণে গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়-

  • ডায়াবেটিস।
  • কিডনি রোগ।
  • স্থূলতা।
  • উচ্চ রক্তচাপ।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ  মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিঃ  কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিক ও অন্যান্য জাতির ক্ষেত্রে মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা একগুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ সাধারণত ১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে মাতৃগর্ভে বাচ্চার উপস্থিতি বা নড়াচড়া টের পাওয়া যায়।  এই সময়ের মধ্যে গর্ভবতী মহিলারা যদি গর্ভে বাচ্চার উপস্থিতি টের না পায় তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। 

উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় এ লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।  বিশ সপ্তাহের পূর্বে রক্তপাত হলে আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে এটি গর্ভপাত  কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। প্লাসেন্টার ত্রুটিজনিত কারণে রক্তপাত হতে পারে এবং গর্ভবতী হওয়ার ২০ সপ্তাহের পর এই ত্রুটি চিহ্নিত করার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। এ অবস্থায় যৌনমিলন থেকে বিরত থাকা উচিত। 

হেলথ টিপস্‌

গর্ভবতী মায়ের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। এ সময়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের উচিৎ তার প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। সবসময় তাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে, এবং নিয়মিত পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খেতে দিতে হবে। সন্তান প্রসব ও প্রসবের পরবর্তীতে মাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।

খাদ্যের প্রধান তিনটি কাজের উপর ভিত্তি করে গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজনীয় খাবারকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়-

শক্তি উৎপাদনকারী খাবার যেমন ভাত, রুটি/পরাটা, আলু, চিনি, গুড়, সুজি, সয়াবিন তেল, বাদাম, কলিজা, ঘি/মাখন, ডিমের কুসুম ইত্যাদি ; দেহ গঠন ও ক্ষয়পূরণকারী খাদ্য-যেমনঃ  মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের সাদা অংশ, বিভিন্ন ধরনের ডাল, মটরশুটি, সীমের বীচি ইত্যাদি ; রোগ প্রতিরোধক খাদ্য-যেমনঃ সবুজ, হলুদ ও অন্যান্য রঙ্গিন শাক-সবজি, সবধরনের মৌসুমী ফল-মূল।  

প্রতিদিন তিন ধরনের খাবারের তালিকা থেকেই কিছু কিছু খাবার খেতে হবে এবং প্রতিবেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি খেতে হবে।   অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।   

গর্ভাবস্থায় করণীয়- 

  • গর্ভাবস্থায় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় ২টি টিটি টিকা নিতে হবে।
  • বেশি পরিমাণে পানি পানি করতে হবে।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
  • দুপুরের খাবারের পর কমপক্ষে ১-২ ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হবে।

গর্ভবতী অবস্থায় যা করা যাবে না 

  • গৃহস্থলীর কঠিন কাজ ও ভারী কোন কিছু তোলা।
  • দূরে যাতায়াত করা এবং ভারী কিছু বহন করা।
  • শরীরে ঝাঁকি লাগে এমন কাজ করা।
  • দীর্ঘ সময় কোন কাজে লিপ্ত থাকা।
  • ঝগড়া-ঝাটি এবং ধমক দেয়া।
  • তামাক ও গুল ব্যবহার করা ।
  • ধূমপান বা অন্য কোন নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা।
  • স্বাস্থ্য কর্মী বা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ গ্রহণ করা।

(সূত্রঃ জাতীয় ই-তথ্যকোষ)