মাংসপেশীর খিঁচুনি/টান (Cramps and spasms)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

দ্রুত সংকোচন-প্রসারণের ফলে মাংসপেশীতে খিঁচুনি/টান দেখা দেয়। অস্থির সাথে সংযুক্ত মাংসপেশীতে কয়েকটি কারণে খিঁচুনি/টান দেখা দেয় যেমনঃ মাংসপেশীর শিথিলতা এবং শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া। এছাড়াও মাসিক চলাকালীন সময়ে ও গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের (gastroenteritis) এর কারণেও মাংসপেশীতে খিঁচুনি/টান দেখা দিতে পারে। মাংসপেশীর বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক ও অনৈচ্ছিক সংকোচন-প্রসারনের জন্য খিঁচুনি/টান হয়। এ অবস্থায় খিঁচুনিসহ ব্যথা হতে পারে। সাধারণত পায়ের নিচের অংশের পেছনের দিকে, উরুর পেছনের দিকে এবং উরুর সামনের অংশে খিঁচুনি বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও পায়ের পাতা, হাত, বাহু ও পেটের অভ্যন্তরের প্রাচীরে খিঁচুনি হতে পারে। রাতে ঘুমানোর সময় মাংসপেশীতে খিঁচুনি/টান দেখা দিলে ব্যক্তির ঘুম নষ্ট হতে পারে ও হাঁটাচলার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে। আবার, কখনও কখনও ত্বকের নিচে পেশি টিস্যু পিন্ডের আকার ধারণ করলে মাংসপেশীতে খিঁচুনি/টান দেখা দেয়।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারেঃ যেমন-   

অ্যানাল ফিশার (Anal fissure) ব্লেফারোস্পাজম (Blepharospasm)
গনোরিয়া (Gonorrhea) যোনি পথের ছত্রাকের ইনফেকশন (Vaginal yeast infection)
যোনি পথের সিস্ট (Vaginal cyst) ডিম্বাশয়ের সিস্ট (Ovarian cyst)
মাসিক ব্যতীত রক্তপাত (Idiopathic non-menstrual bleeding) বেদনাদায়ক মাসিক (Idiopathic painful menstruation)
ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স/ দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি অসহিষ্ণুতা (Lactose intolerance) অনিয়মিত মাসিক (Irregular menstrual cycle)
রেক্টাল ডিজঅর্ডার / মলাশয়ের রোগ (Rectal disorder) পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (Polycystic ovarian syndrome, PCOS)
গর্ভকালীন সমস্যা (Problem during pregnancy) প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Placenta previa)
সারভিসাইটিস (Cervicitis) সেরিব্রাল পালসি (Cerebral palsy)
ইডিওপ্যাথিক এক্সসেস মেন্সট্রুয়েশন (Idiopathic excess menstruation) ইনডিউসড অ্যাবর্শন (Induced abortion)
হেমিপ্লেজিয়া (Hemiplegia) ক্রেনিয়াল নার্ভ পালসি (Cranial nerve palsy)
মিসড অ্যাবর্শন (Missed abortion) অ্যাকালাসিয়া (Achalasia)
ফ্ল্যাট ফিট (Flat feet) ফরেন বডি ইন দি গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট (Foreign body in the gastrointestinal tract)
স্পন্টেনিয়াস অ্যাবর্শন (Spontaneous abortion) টরটিকোলিস (Torticollis)
প্ল্যাসেন্টাল অ্যাব্রাপশন (Placental abruption) ভালভোডাইনিয়া (Vulvodynia)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যেসকল কারণে মাংসপেশীতে টান/খিঁচুনি দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় সেগুলো নিন্মে আলোচনা করে হলোঃ

  • বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি। কেননা বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাংসপেশীর পরিধি কমে যায়। ফলে খুব সহজেই মাংসপেশীতে টান লাগে।
  • গরমের সময়ে খেলাধূলার কারণে অ্যাথলেটদের মধ্যে অবসাদ ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়, যার ফলে মাংসপেশীতে টান লাগে।
  • গর্ভাবস্থায়ও মাংসপেশীতে টান/খিঁচুনি হতে পারে।
  • অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতা যেমনঃ ডায়াবেটিস বা নার্ভ, লিভার ও থায়রয়েডের সমস্যার জন্য এ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা একগুণ কম।

জাতিঃ কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্প্যানিক ও অন্যান্যদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা একগুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ অবসাদ ও পানিশূন্যতার জন্য খিঁচুনি দেখা দেয়। তাই পানিশূন্যতা প্রতিরোধে খেলাধূলা ও শারীরিক অনুশীলনের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে।

উত্তরঃ ফাইব্রোমিয়ালজিয়া নির্ণয়ের জন্য ভালো কোনো টেস্টের ব্যবস্থা নেই। তাই ফাইব্রোমিয়ালজিয়া খুব সহজে নির্ণয় করা যায় না এবং ব্যক্তিভেদে এর মধ্যে পার্থক্য দেখা দিতে পারে। ফাইব্রোমিয়ালজিয়ার কারণে মাংসপেশীতে টান/খিঁচুনি ও তীক্ষ্ণ ব্যথা হতে পারে।

হেলথ টিপস্‌

মাংসপেশীতে খিঁচুনি/টান দেখা দিলে নিম্নলিখিত উপায়ে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভবঃ

  • খিঁচুনি/টান দেখা দিলে স্ট্রেচিং করতে হবে ও আস্তে আস্তে মালিশ বা ম্যাসাজ করতে হবে। পায়ের কাফ মাসলে খিঁচুনি হলে পায়ের উপর ভর দিতে হবে ও ধীরে ধীরে হাঁটু ভাঁজ করতে হবে। দাঁড়াতে অসুবিধা হলে, মেঝেতে বা চেয়ারে বসে পা স্ট্রেচ করতে হবে। পা সোজা রেখে পায়ের পাতা উপরের দিকে উঠানোর চেষ্টা করতে হবে। উরুর পেছনে টান লাগলে (hamstring) এই পদ্ধতির সাহায্যে আরাম পাওয়া যায়। উরুর পেছনের অংশে খিঁচুনি দেখা দিলে (quadriceps) একটি চেয়ারে বসে পা পেছনের দিকে ভাঁজ করতে হবে।
  • আবার, একটি তোয়ালে বা হিটিং প্যাডের সাহায্যে খিঁচুনির স্থানে গরম স্যাঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়। একইভাবে বরফ বা ঠান্ডা পানি দিলেও আরাম পাওয়া যাবে।