ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স/ দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি অসহিষ্ণুতা (Lactose intolerance)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

ল্যাক্টেজ এনজাইমের অভাবে ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স দেখা দেয়। এর ফলে একজন ব্যক্তি দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার হজম করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এটি কোনো বিপজ্জনক সমস্যা নয়, তবে ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্সের উপসর্গের কারণে অস্বস্তি বোধ হতে পারে। অনেকেরই পাকস্থলীতে ল্যাক্টেজ এনজাইমের মাত্রা কম থাকে। কিন্তু শুধু এই বিষয়টি ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্সের নির্তেশক নয়। কিছু নির্দেষ্ট লক্ষণ দেখা দিলে বলা যায় যে একজন ব্যক্তির ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স হয়েছে। ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্সের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেসব খাবারে দুধের পরিমাণ কম, সেসব খাবার খেতে হবে।

ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স তিন প্রকারের হতে পারে-

 

  • বয়স বাড়ার ফলস্বরূপ (প্রাইমারী ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স):

দুধ হলো শিশুদের পুষ্টির প্রাথমিক উৎস। সাধারণত জন্ম এবং শৈশবের সময় শরীরে প্রচুর পরিমাণে ল্যাক্টেজ এনজাইম উৎপাদিত হয়। খাদ্যে বৈচিত্র্য আসলে এবং দুধের উপর নির্ভরশীলতা কমে গেলে সাধারণত ল্যাক্টেজের উৎপাদন মাত্রা কমে যায়। এভাবে ল্যাক্টেজের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার ফলে ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স হতে পারে।

 

  • অসুস্থতা বা আঘাতের ফলস্বরূপ (সেকেন্ডারি ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স): যখন ক্ষুদ্রান্ত্রের কোনো ধরনের অসুস্থতা, অপারেশন বা ঐ স্থানে কোনো আঘাতের ফলে ল্যাক্টেজ উৎপাদনের মাত্রা কমে যায়, তখন ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স হতে পারে। সিলিয়াক ডিজিজ ও Gastroenteritis-এর মতো অন্ত্রের রোগ এবং Crohn ডিজিস-এর মতো ইনফ্লামেটরী বাওয়েল ডিজিজের কারণে  এটি হতে পারে। ল্যাক্টেজ এনজাইমের উৎপাদন বাড়িয়ে এই অবস্থার উন্নতি করা যেতে পারে।
  • জন্মগত কারণ (কনজেনিটাল ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স)
কিছু কিছু শিশুর শরীরে ল্যাক্টেজ এনজাইমের চরম ঘাটতি থাকে। তবে এই সমস্যাটি বিরল । উত্তরাধিকারসূত্রে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বিস্তারলাভ করা এই ব্যাধিকে অটোসোমাল রিসেসিভ (Autosomal recessive) বলা হয়। মা ও বাবা উভয়ের জিনের ত্রুটিপূর্ণ গঠনের কারণে শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। জন্মগত ল্যাক্টোজ  ইন্টলারেন্সের ফলে শিশু জন্ম থেকে ডায়রিয়ায় ভোগে, কারণ মায়ের বুকের দুধের ল্যাক্টোজ  শিশু হজম করতে পারে না। এই শিশুদের জন্য ল্যাক্টোজমুক্ত শিশু খাদ্য প্রয়োজন।

কারণ

ক্ষুদ্রান্ত্রে ল্যাক্টেজ এনজাইম কমে গেলে সাধারণত ল্যাক্টোজ  ইন্টলারেন্সের লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত, ক্ষুদ্রান্ত্রের আবরণী কোষ থেকেই ল্যাক্টেজ  নামক এনজাইম উৎপাদিত  হয়। এই ল্যাক্টেজ  এনজাইম খাবারের ভেতরের ল্যাক্টোজ অণুকে দুই প্রকার শর্করাতে (গ্লুকোজ এবং গ্যালাক্টোজ) ভেঙ্গে ফেলে যাতে তা রক্তে শোষিত হতে পারে। যথেষ্ট ল্যাক্টোজ এনজাইম না থাকলে খাদ্যের ল্যাক্টোজ  অপাচ্য অবস্থায়ই কোলনে পৌঁছায়, যেখানে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সাথে অপ্রক্রিয়াজাত খাদ্যের সংযোগ ঘটে। এর  ফলে গ্যাস, পেট ফোলা এবং ডায়রিয়া হতে পারে।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা

 চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

calcium lactase enzymes

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন: 

এইচ-বি-এ-ওয়ান-সি (HbA1c)
ও-জি-টি-টি (OGTT)
বায়োপসি (Biopsy)
Lactose tolerance test
Milk tolerance test

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়ের কারণে ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়-

  • বয়স বৃদ্ধি: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সাধারণত ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স দেখা দেয়। শিশু এবং তরুণদের মধ্যে এটি খুব কম দেখা যায়।
  • জাতি: কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান, হিস্প্যানিক এবং আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স দেখা যায়।
  • অকালে জন্ম: এই এনজাইম ভ্রূণ বৃদ্ধির তৃতীয় স্তরের শেষদিকে তৈরি হয় বলে অকালে জন্ম নেওয়া শিশুদের ল্যাক্টোজের মাত্রা কমে যেতে পারে।
  • ক্ষুদ্রান্ত্রের রোগ: ক্ষুদ্রান্ত্রের সমস্যার কারণে ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স, ব্যাকটেরিয়ার মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি, সিলিয়াক এবং Crohn-এর মত রোগ হতে পারে।
  • ক্যান্সার চিকিৎসা: ক্যান্সারের জন্য তলপেটে রেডিয়েশন থেরাপি দিলে বা কেমোথেরাপি থেকে অন্ত্রের জটিলতা তৈরি হলে, ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্সের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ মহিলা এবং পুরুষ উভয়ের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ এবং হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: ল্যাক্টোজ  ইন্টলারেন্সের কোন প্রতিকার নেই। দুগ্ধজাত খাদ্য খাওয়ার আগে ল্যাক্টেজ এনজাইম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে ল্যাক্টোজ হজম সহজতর হতে পারে। দুগ্ধজাত খাদ্য খাওয়ার পরিমাণ হ্রাস করলে এই অবস্থার উন্নতি হতে পারে। স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে।

উত্তর: সাধারণত আহারের পরে ৩০-১২০ মিনিটের মধ্যে অথবা আহারের পরে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত যে কোনো সময় উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

উত্তর: ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স পৃথিবীর অধিকাংশ অংশে (এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা) দেখা যায়।   দুগ্ধজাত খাদ্য পরিহার বা এড়ানোর মাধ্যমে ল্যাক্টোজ  ইন্টলারেন্সের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। সাধারন অবস্থায় ল্যাক্টেজ ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু গুরুতর অবস্থায় এটি কাজ করে না।

হেলথ টিপস্‌

দুগ্ধজাত খাদ্য কম খেয়ে ল্যাক্টোজ  ইন্টলারেন্সের লক্ষণ  কমানো যেতে পারে।

দুধ ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির অন্যতম উৎস। দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করা বাদ দিলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয় । কিন্তু অন্যান্য অনেক খাবারে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় যেমন:

  • ব্রোকলি।
  • ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ পণ্য, যেমন- রুটি এবং জুস।
  • দুধের পরিপূরক, যেমন- সয়া মিল্ক এবং রাইস মিল্ক।
  • কমলালেবু।
  • মটরশুঁটি।
  • রেউচিনি।
  • পালংশাক।

সব দুগ্ধজাত খাবার ত্যাগ করলে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খুব বেশি পাওয়া যায় না তবে ডিম, যকৃত এবং দই-এ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন ডি আছে। সূর্যের রশ্মি থেকে দেহে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। তবে সূর্যালোকের সংস্পর্শে যাওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ লেঃ কর্ণেল এস এম মিজানুর রহমান

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস(ঢাকা), এফসিপিএস(মেডিসিন), এফসিপিএস(গ্যাষ্ট্রোএন্টারোলজী)

ডাঃ শারমিন জাহান

মেডিসিন ( Medicine), এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজম ( হরমোন) ( Endocrinology & Metabolism), ডায়াবেটোলজিষ্ট ( Diabetologist)

এমবিবিএস(ডিএমসি), এফসিপিএস(মেডিসিন), এমডি(এন্ডোক্রাইনোলজী)

ডাঃ মোঃ রুহুল আমিন

এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজম ( হরমোন) ( Endocrinology & Metabolism), ডায়াবেটোলজিষ্ট ( Diabetologist)

এম বি বি এস, এম ডি (এন্ডোক্রাইন মেডিসিন)

ডাঃ মাহবুব ইফতেখার

এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজম ( হরমোন) ( Endocrinology & Metabolism)

এমবিবিএস (এসএমসি ঢাকা), এমএসসিইউ(ইউএসএ), ডিইএম

ডাঃ মোঃ ফজলে নূর

এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজম ( হরমোন) ( Endocrinology & Metabolism)

এমবিবিএস(ঢাকা), ডিইএম(ডিইউ)

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডাঃ শেখ বাহার হোসেন (অবঃ)

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এফআরসিপি, এফআরসিপি(গ্লাসগো), এফএসিপি(ইউএসএ)

অধ্যাপক ডাঃ ফারুক আহমেদ

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমডি(গ্যাস্ট্রো)

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ মোঃ ছাইদুর রহমান (অবঃ)

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology), মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস,(ডিইউ), এফসিপিএস(মেডিসিন), ওজেটি (গ্যাস্ট্রো), এফএসিপি, এফআরসিপি