পুরুষত্বহীনতা (Impotence)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

পুরুষত্বহীনতা/ ধ্বজভঙ্গ হলো পুরুষাঙ্গের উত্থান জনিত একটি জটিল সমস্যা। এ অবস্থায় ব্যক্তি যৌন মিলনের অক্ষম হয়ে পড়ে।  ধ্বজভঙ্গ হলে পুরুষাঙ্গ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে শিথিল হয়ে যায় অর্থাৎ সঙ্গম ও বীর্যপাতের জন্য যথেষ্ট দৃঢ় হতে পারে না এবং পুরুষাঙ্গ দৃঢ় হলেও তা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। এ সমস্যা অনিয়মিতভাবে দেখা দিলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে বারবার দেখা দিলে অবশ্যই বুঝতে হবে এটি কোনো গুরুতর রোগের লক্ষণ এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারেঃ যেমন-   

বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেসিয়া, বি-পি-এইচ (Benign prostatic hyperplasia, BPH) ভ্যারিকোসিল অফ দা টেস্টিকল (Varicocele of the testicles)
ডায়াবেটিস জনিত কিডনির রোগ (Diabetic kidney disease) অণ্ডকোষে পানি জমা/হাইড্রোসিল (Hydrocele of the testicle)
লিঙ্গের উত্থানজনিত সমস্যা (Erectile dysfunction) ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স/ দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি অসহিষ্ণুতা (Lactose intolerance)
প্রিয়াপিজম (Priapism) বিনাইন কিডনি সিস্ট (Benign kidney cyst)
ফাইমোসিস (Phimosis) প্রস্টেট ক্যান্সার (Prostate cancer)
স্পারমাটোসিল (Spermatocele) অ্যাট্রোফি অফ দি করপাস ক্যাভারনোসাম (Atrophy of the corpus cavernosum)
মেনিয়ার ডিজিজ (Meniere disease) মাল্টিপল মায়েলোমা (Multiple myeloma)
ওভারফ্লো ইনকন্টিনেন্স (Overflow incontinence) ব্লাডার অবস্ট্রাকশন (Bladder obstruction)
অ্যাটনিক ব্লাডার (Atonic bladder) সাইকোসেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার (Psychosexual disorder)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষাঙ্গের উত্থান ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং এটি দৃঢ় হতে বেশি সময় নেয় ও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তবে শুধুমাত্র বয়সের কারণেই এ সমস্যাটি হয় না। বয়সের সাথে সাথে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা ও ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো হলোঃ

  • শারীরিক সমস্যা, বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের জন্য এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • তামাকের ব্যবহার স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে যার ফলে নানান ধরণের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। ফলে এ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • নির্দিষ্ট ধরণের কিছু চিকিৎসা যেমনঃ Prostate অপারেশন বা ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য রেডিয়েশন থেরাপির ব্যাবহার করা হলে এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  • লিঙ্গের উত্থান ক্ষমতা যেসকল স্নায়ু বা নার্ভের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেগুলো কোনো আঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ যেমনঃ antidepressants, antihistamines এবং উচ্চ রক্তচাপ, ব্যাথা ও Prostate ক্যান্সারের জন্য যেসকল ঔষধ দেওয়া হয় তা ব্যবহারের কারণে এ সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • মদ্যপান ও মাদক সেবনের জন্য এ সমস্যা হতে পারে।
  • দীর্ঘদিন সাইকেল চালানোর জন্য স্নায়ু সংকুচিত হয়ে যায় এবং লিঙ্গে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। যার ফলে কিছু সময়ের জন্য লিঙ্গের উত্থান ক্ষমতা কমে যায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতিদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ পুরুষত্বহীনতা/ ধ্বজভঙ্গ সম্পর্কে বুঝতে হলে অবশ্যই জানতে হবে যৌন উত্তেজনার ফলে পুরুষাঙ্গ কিভাবে দৃঢ় অবস্থায় পৌঁছায়। একটি পুরুষাঙ্গে দুটি ভাগ (chambers) থাকে যা করপোরা ক্যাভারনোসা (Corpora Cavernosa) নামে পরিচিত। এটি পুরো লিঙ্গ জুড়েই থাকে। এই চেম্বারগুলো এক ধরণের স্পঞ্জের ন্যায় টিস্যু দ্বারা পূর্ণ থাকে। এই করপোরা ক্যাভারনোসার চারপাশে একধরণের মেমব্রেন থাকে যাকে albuginea বলে। এই টিস্যুগুলোর মধ্যে মসৃণ পেশি, শিরা, ধমণী, তন্তুময় টিস্যু এবং ফাঁকা জায়গা থাকে। করপোরা ক্যাভারনোসার নীচের অংশে মূত্রনালী বা urethra অবস্থিত যার চারপাশে corpus spongiosum থাকে। Sensory বা মানসিক উদ্দীপনার ফলে যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আমদের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু থেকে এই উদ্দীপনার সংকেত আসলে পেশীগুলো শিথিল হয়ে পড়ে ও রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায় এবং ফাঁকা জায়গাগুলো রক্ত দ্বারা পূর্ণ হয়ে ওঠে। albuginea এর সাহায্যে রক্ত করপোরা ক্যাভারনোসায় আটকা পড়ে এবং লিঙ্গ দৃঢ় হয়ে ওঠে। এই রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে লিঙ্গ দৃঢ় হয় না।

উত্তরঃ Viagra এবং এই ধরণের ঔষধের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো মাথাব্যথা যা ১৬ শতাংশ ব্যবহারকারীর মধ্যে দেখা যায়। ১০ শতাংশ ব্যবহারকারীর মধ্যে রক্ত চাপ কমে যায়, মাথা ঝিমঝিম করে ও মুখে লাল ভাব দেখা দেয়। ১০ শতাংশ ব্যবহারকারীর বদহজম দেখা দেয়। ১০ শতাংশ ব্যবহারকারীর নাক বন্ধ হয়ে যায়। Viagra ব্যবহারকারীদের মধ্যে কারও কারও দৃষ্টিসংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়।

উত্তরঃ পূর্বে এ রোগের শুধুমাত্র একটিই চিকিৎসা ছিল আর তা হলো অপারেশনের সাহায্যে লিঙ্গের মধ্যে প্রোসথেটিক ডিভাইস স্থাপন করা। তবে এখন ঔষধের সাযায্যে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব এবং ঔষধের সাহায্যে চিকিৎসা সম্ভব না হলে শুধুমাত্র তখনই অপারেশন করা হয়। তবে অপারেশনের সাহায্যে এটি নিশ্চিতভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব।

হেলথ টিপস্‌

এ সমস্যা প্রতিরোধে করণীয়ঃ

  • হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য শারীরিক সমসায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • নিয়মিত চেক-আপ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
  • মাদক ও ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম ও অনুশীলন করতে হবে।
  • মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমাতে হবে।
  • যেকোনো মানসিক সমস্যা যেমনঃ উদ্বেগ ও বিষন্নতা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।