দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা (Premature ejaculation)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন (Premature ejaculation) হল পুরুষের দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা। স্বাভাবিক সময়ের পূর্বেই অর্গাজম হয়ে গেলে, অর্থাৎ যৌনসঙ্গম শুরু হওয়ার আগেই বা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বীর্যপাত হয়ে গেলে তাকে প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন বা দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা বলা হয়। বীর্যপাতের সঠিক সময় সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানে কোনো আদর্শ মাপকাঠি নেই। তবে দ্রুত অর্গাজম বা বীর্যপাত হয়ে গেলে পুরুষাঙ্গ শিথিল হয়ে পড়ে এবং যৌনসঙ্গম করা  সম্ভব হয় না।  অনেক পুরুষের জন্যই এটি বিব্রতকর ও হতাশাজনক ব্যাপার। এই সমস্যার কারণে পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে সঙ্গমের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। এছাড়া এ জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজন পুরুষ তার যৌনসঙ্গীর চাহিদা পূরণে সক্ষম হয় না। একই সাথে দ্রুত বীর্যপাতের কারণে একজন ব্যক্তির মধ্যে লজ্জা ও অপমানবোধ কাজ করে, যা পরবর্তীতে তার সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

কারণ

নিম্নলিখিত কারণে দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে-

মানসিক কারণ:

চিকিৎসকদের মতে, বয়ঃসন্ধিকালের কিছু যৌন অভিজ্ঞতা অভ্যাসে পরিণত হলে তা সহজে পরিবর্তন করা যায় না। এগুলি দ্রুত বীর্যপাতের কারণ হিসেবে কাজ করে। যেমন-

  • গোপনতা রক্ষার্থে বা লোকজনের দৃষ্টি এড়াতে তড়িঘড়ি করে বীর্যপাতের চেষ্টা করা।
  • অপরাধবোধ, যা ব্যক্তির মধ্যে সঙ্গমের সময় দ্রুত বীর্যপাতের প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে।

এছাড়াও যেসব মানসিক কারণে এ লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো-

  • পুরুষাঙ্গের উত্থানজনিত সমস্যা (Erectile dysfunction):  সঙ্গমের সময় যৌন উত্তেজনা ধরে রাখা বা লিঙ্গের দৃঢ়তা নিয়ে ব্যক্তির মধ্যে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কাজ করলে দ্রুত বীর্যপাত হতে পারে। এই প্রবণতা সহজে পরিবর্তন করা যায় না।
  • দুশ্চিন্তা: যেকোনো বিষয় নিয়ে একজন ব্যক্তির দুশ্চিন্তা কাজ করলে তার এই সমস্যা হতে পারে।
  • পারষ্পরিক সুসম্পর্কের অভাব: পারষ্পরিক সুসম্পর্কের অভাব নারী-পুরুষের  যৌনসম্পর্কের ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।  

জৈবিক কারণ:

  • হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়া।
  • ব্রেইন ক্যামিকেলসের (নিউরোট্রান্সমিটারস) অস্বাভাবিক মাত্রা।
  • ইজাকুলেটরি সিস্টেম স্বাভাবিকভাবে কাজ না করা।
  • প্রস্টেট ও মূত্রনালীর ইনফেকশন ও প্রদাহজনিত সমস্যা।

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যেসব কারণে এ লক্ষণ দেখা দয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় সেগুলো হলোঃ

  • মাঝে মাঝে বা ক্রমাগতভাবে লিঙ্গের উত্থান জনিত সমস্যা দেখা দেওয়া, বা লিঙ্গের দৃঢ়তা নিয়ে  উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কাজ করা।
  • গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা, যেমন-হৃদরোগ।
  • দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি।

জাতি:  হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।   শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ কম। কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন বা দ্রুত বীর্যপাত একটি সাধারণ সমস্যা। এটি যেকোনো বয়সের পুরুষদের হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি তিন জনে একজন পুরুষের এই সমস্যা হয়ে থাকে। 

উত্তর: এই দুটি সমস্যা পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত। পুরুষত্বহীনতা বা ইম্পোটেন্স হলো লিঙ্গের উত্থানজনিত সমস্যা, যার ফলে একজন ব্যক্তি যৌনমিলনে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে, প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন বা দ্রুত বীর্যপাত বলতে বোঝায় যৌনসঙ্গম শুরু হওয়ার আগেই বা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া, যার ফলে সঙ্গম দ্রুত শেষ হয়ে যায়। 

হেলথ টিপস্‌

দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা দেখা দিলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করুন-

  • যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করতে হবে। কেননা লিঙ্গের অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার কারণে দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা দেখা দেয়। কনডম লিঙ্গের অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কনডম অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও যৌনরোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
  • গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার পদ্ধতি ও মেডিটেশন এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  •  যৌনসঙ্গীর সাথে পারষ্পরিক বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে। এই সমস্যা সম্পর্কে  তার সাথে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করুন। দ্রুত বীর্যপাত হলে এ অবস্থায় বীর্যপাতের ঠিক আগ মুহূর্তে সঙ্গম কার্য থেকে বিরতি নিন এবং এই ব্যাপারে আপনার সঙ্গীর সহায়তা নিন।