মুত্রের সাথে রক্ত যাওয়া (Blood in urine)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

এটি হেমাচুরিয়া (Hematuria) বা মুত্রনালী থেকে রক্ত পড়া নামেও পরিচিত। চিকিৎশাস্ত্রে মুত্রে লোহিত রক্ত কণিকা থাকলে তাকে হেমাচুরিয়া বলে। এই সমস্যার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে কিডনীতে পাথর হলে বা মুত্রনালীতে টিউমার হলে প্রস্রাবের সাথে রক্ত পড়তে পারে। মুত্রে যদি লোহিত কণিকার সাথে শ্বেত কণিকাও থাকে তবে তা মুত্রনালীতে ইনফেকশন নির্দেশ করে। মুত্রের সাথে রক্ত পড়তে দেখলে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কোনো মারাত্নক ব্যাধির জন্যও প্রস্রাবের সাথে রক্ত পড়তে পারে। প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি খালি চোখে দেখা গেলে তাকে গ্রস হেমাচুরিয়া (Gross Hematuria) বলে। অপরদিকে, প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি খালি চোখে দেখা না গেলে এবং মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে রক্তের উপস্থিতি বোঝা গেলে তাকে মাইক্রোস্কোপিক হেমাচুরিয়া (Microscopic Hematuria) বলে। কি কারণে প্রস্রাবের সাথে রক্ত পড়ছে তার সঠিক কারণ নির্ণয় করতে হবে। কারণ, এর উপরই চিকিৎসা নির্ভর করে।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারেঃ যেমন-

বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেসিয়া, বি-পি-এইচ (Benign prostatic hyperplasia, BPH) মূত্রথলির ক্যান্সার (Bladder cancer)
অণ্ডকোষে পানি জমা/হাইড্রোসিল (Hydrocele of the testicle) লিঙ্গের উত্থানজনিত সমস্যা (Erectile dysfunction)
কিডনিতে পাথর (Kidney stone) কিডনির ক্যান্সার (Kidney cancer)
অ্যাট্রোপিক ভ্যাজাইনাইটিস (Atrophic vaginitis) বিনাইন কিডনি সিস্ট (Benign kidney cyst)
ফাইমোসিস (Phimosis) পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (Polycystic kidney disease)
প্রস্টেট ক্যান্সার (Prostate cancer) সেন্ট্রাল অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (Central atherosclerosis)
কোয়াগুলেশন (ব্লিডিং) ডিজঅর্ডার (Coagulation (bleeding) disorder) ইনজুরি টু দি অ্যাবডোমেন (Injury to the abdomen)
এপিডিডাইমিটিস (Epididymitis) টেস্টিকুলার ক্যান্সার (Testicular cancer)
থ্রম্বোসাটোপেনিয়া (Thrombocytopenia) স্পাইনোসেরিবেলার অ্যাটাক্সিয়া (Spinocerebellar ataxia)
স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স (Stress incontinence) ওভারফ্লো ইনকন্টিনেন্স (Overflow incontinence)
ব্লাডার অবস্ট্রাকশন (Bladder obstruction) পেলভিক অরগান প্রোলেপ্স (Pelvic organ prolapse)
অ্যাটনিক ব্লাডার (Atonic bladder) ইনজুরি টু ইন্টারনাল অরগান (Injury to internal organ)

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলোঃ

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

এ লক্ষণের জন্য ঝুকিপূর্ণ বিষয়গুলো হলোঃ

  • যেসব পুরুষদের বয়স ৫০ এর ঊর্ধ্বে তাদের প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
  • পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারনে কিডনীতে প্রদাহ হলে এই লক্ষণ দেখা যায়।
  • পরিবারের অন্য কারো এই সমস্যা থাকলে পরিবারের সদস্যের এই সমস্যা হতে পারে।
  • অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খেলে এই সমস্যা দেখা যায়।
  • দৌড়বিদদের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতিঃ  কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতিদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ কিডনী প্রতিনিয়ত রক্তকে পরিশোধন করতে থাকে, এই ছাকন প্রক্রিয়ার ফলে রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ অপসারিত হয় এবং এই বর্জ্য পদার্থগুলো পরবর্তীতে মূত্রে রূপান্তরিত হয় কিডনীতে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালী রয়েছে যারা এই ছাকন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে থাকে। মুত্রনালী ও রক্তনালী আলাদা, এই দুই নালী একটি পাতলা কোষের আবরণ দ্বারা পৃথক থাকে, এর মধ্য দিয়ে রক্তের বর্জ্য পদার্থ মুত্রের সাথে মিশে যায়।

উত্তরঃ এক্ষেত্রে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিজের খেয়াল রাখতে হবে।

হেলথ টিপস্‌

সাধারণত হেমাচুরিয়া সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে যেসব রোগের কারণে এটি হয়ে থাকে, কিছু পন্থা অবলম্বন করে সেসব রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায়। এই পন্থাগুলো হলোঃ

  • মুত্রনালীর ইনফেকশন( Urinary tract infections): প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। যৌনসঙ্গমের পর প্রস্রাবের চাপ আসার সাথে সাথেই মুত্রত্যাগ করতে হবে এবং যৌনাঙ্গ ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। যৌনাঙ্গে কোন ধরনের প্রসাধন সামগ্রী বা অন্যান্য হাইজিন প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
  • কিডনির পাথর (Kidney stones): প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত লবণ, প্রোটিন ও অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার (যেমন-পালং শাক) পরিহার করতে হবে।
  • মুত্রথলীর ক্যান্সার (Bladder cancer): ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে বেশি থাকা যাবে না।
  • কিডনির ক্যান্সার (Kidney cancer): ধূমপান ত্যাগ করতে হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সুষম খাবার খেতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে, বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের থেকে দূরে থাকতে হবে।