আবেগগত সমস্যা (Emotional symptoms)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন একটি মানসিক বা আবেগজনিত সমস্যা। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এই সমস্যা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন জটিলতা দূর করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে তা বাইপোলার ডিজঅর্ডার (bipolar disorder) এর একটি লক্ষণ হতে পারে। মানসিক অসুস্থতা একজন ব্যক্তির চিন্তাধারা, আচরণ ও মেজাজের উপর প্রভাব ফেলে। বিষন্নতা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, সিজোফ্রেনিয়া, খাদ্যাভাসে অস্বাভাবিকতা, মাদকাসক্তি- এগুলোর সবকয়টিই মানসিক অসুস্থতার উদাহরণ। অধিকাংশ মানুষেরই কখনও না কখনও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এটা যেকোনো ধরনের ছোটোখাটো দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ হতে পারে। এই উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা যদি ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে জটিলতার সৃষ্টি করা তবে তা মানসিক অসুস্থতার রূপ নেয়। যার ফলে ব্যক্তির কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে পারিবারিক জীবনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত ঔষধ ও কাউন্সিলিং বা সাইকোথেরাপির সাহায্যে মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা করা হয়।

কারণ

বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন:

  • অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার (Antisocial personality disorder)
  • অ্যাঞ্জাইটি ডিজঅর্ডার (Anxiety disorders)
  • অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার (Attention-deficit hyperactivity disorder) বা এ-ডি-এইচ-ডি (ADHD)
  • বিহেভিয়েরাল ডিজঅর্ডার (Behavioral disorders)
  • বাইপোলার ডিজঅর্ডার (Bipolar disorder)
  • বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার (Borderline personality disorder)
  • ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিজঅর্ডার (Intermittent explosive disorder)

আবার কিছু গুরুতর শারীরিক জটিলতার কারণেও আবেগজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ

  • অ্যাকিউট ডেলিরিয়াম (Acute delirium)(এ অবস্থায় শারীরিক অসুস্থতা ও বিষক্রিয়ার কারণে মানসিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে)
  • ঔষধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার (drug overdose)
  • ম্যানিয়া (Mania) (elevated mood and energy levels that can occur in bipolar disorder)
  • মেনিঞ্জাইটিস (Meningitis) (স্পাইনাল কর্ড বা মস্তিষ্কে ইনফেকশন বা ইনফ্লামেশন দেখা দিলে)
  • স্ট্রোক (Stroke)
যোনিদ্বারের ক্যান্সার (Vulvar cancer) ডায়াবেটিক ইনসিপিডাস (Diabetes insipidus)
টেস্টিকুলার টরশন/মোচড়ানো অণ্ডকোষ (Testicular torsion) প্রেসবাইএকিউসিস (Presbyacusis)
কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং (Carbon monoxide poisoning) ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ডিজিজ (Tricuspid valve disease)
গলব্লাডার ক্যান্সার (Gallbladder cancer) টারনার সিন্ড্রোম (Turner syndrome)
জি-৬-পি-ডি এনজাইম ডেফিসিয়েন্সি (G6PD enzyme deficiency) এমফাইসিমা (Emphysema)
এপেন্ডাইমোমা (Ependymoma) এপিডুরাল হেমারেজ (Epidural hemorrhage)
পালমোনিক ভাল্ভ ডিজিজ (Pulmonic valve disease) হার্শপ্রাং ডিজিজ (Hirschsprung disease)
ওমফ্যালাইটিস (Omphalitis) ইন্টাসাসসেপশন (Intussusception)
অটোস্ক্লেরোসিস (Otosclerosis) অ্যানিমিয়া অফ ক্রনিক ডিজিজ (Anemia of chronic disease)
টক্সোপ্লাজমোসিস (Toxoplasmosis) প্ল্যাসেন্টাল অ্যাব্রাপশন (Placental abruption)
অ্যাটনিক ব্লাডার (Atonic bladder) হাইপারট্রোফিক অবস্ট্রাক্টিভ কার্ডিওমায়োপ্যাথি (এইচ-ও-সি-এম) (Hypertrophic obstructive cardiomyopathy (HOCM))

সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ

এই লক্ষণের সাথে অন্যান্য যেসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

  • রক্তসম্পর্কীয় কারো যেমনঃ বাবা-মা বা ভাই-বোনের মানসিক সমস্যা থাকলে এ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় কোনো মা যদি ক্ষতিকর ঔষধ, অ্যালকোহল, ভাইরাস বা বিষাক্ত কোনো পদার্থের সংস্পর্শে আসলে জন্মের পর শিশুর মানসিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
  • মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার কারণে মানসিক অসুস্থতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • ক্রনিক শারীরিক অসুস্থতা, যেমন- ক্যান্সারের কারণে এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • মস্তিষ্কের গুরুতর আঘাত পেলে মানসিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
  • কোনো অনাকাঙ্খাকিত ঘটনায় মানসিক আঘাত পেলে এ লক্ষণ দেখ দিতে পারে।
  • অবৈধ মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
  • শৈশবে কোনো নির্যাতন বা অবহেলার শিকার হলে পরবর্তীতে মানসিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
  • ব্যক্তিগত জীবনে বন্ধু-বান্ধব ও সুসম্পর্কের অভাব থাকলে ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতায় ভোগে।
  • পূর্বে কখনও মানসিক অসুস্থায় আক্রান্ত হলে পুনারায় এ লক্ষন দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

 লিঙ্গঃ মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা আটগুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তর: বিভিন্ন কারণে খাদ্যাভাসে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ বিষন্নতা, অত্মবিশ্বাসের অভাব ও নিজের শারীরিক গঠন নিয়ে অসন্তুষ্টি কাজ করা। আবার পুর্বে কখনো যৌন হয়রানির শিকার হলেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। একই সাথে নিজের মনোভাব বা আবেগ প্রকাশ করতে না পারলেও খাদ্যাভাসে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।

হেলথ টিপস্‌

  • সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। থেরাপি সেশন বাদ দেওয়া যাবে না। তবে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাতে হবে।
  • মাদকের ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম ও অনুশীলন করতে হবে। কর্মবিমুখতা এড়িয়ে চলতে হবে ও পরীশ্রম করতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার, সাইক্লিং বা দৌড়ানো যেতে পারে।
  • মানসিক অসুস্থতায় ভুগলে বা আবেগজনিত সমস্যা দেখা দিলে এ সময় কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধান্ত গ্রহণ করা উচিৎ নয়।