ডায়াবেটিক ইনসিপিডাস (Diabetes insipidus)

শেয়ার করুন

বর্ণনা

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Diabetes Insipidus) সাধারণ কোনো রোগ নয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা (Polydipsia) সত্ত্বেও এ অবস্থায় রোগী তীব্র তৃষ্ণা অনুভব করে এবং তার প্রস্রাবের পরিমাণ অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে যায় (Polyuria)। এই দুই বৈশিষ্ট্যের দ্বারা ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের শরীর যখন সঠিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন উৎপাদন, সংরক্ষণ বা নিঃসরণ করতে পারে না তখন এ রোগ দেখা দেয়। তবে কিডনি যখন ঐ হরমোনের প্রতি সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না তখনও এ রোগ দেখা দিতে পারে। আবার গর্ভাবস্থায়ও ডায়াবেটিক ইনসিপিডাস হতে পারে, যা Gestational Diabetes Insipidus নামে পরিচিত। তবে এটি খুবই বিরল।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস (Diabetes Mellitus) ব্লাড সুগার সম্পর্কিত ডায়াবেটিসের খুব সাধারণ দুটি প্রকারভেদ এবং অনেকেরই ধারণা এই দুই প্রকারের ডায়াবেটিস পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত। ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস (Type 1 এবং type 2) এই দুই প্রকারের ডায়াবেটিসের মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণ খুঁজে পাওয়া গেলেও এই দুই প্রকারের ডায়াবেটিস পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত নয়।

তীব্র তৃষ্ণা এবং প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরিয়ে আনার জন্য চিকিৎসা রয়েছে।

কারণ

মানবদেহ যখন সঠিকভাবে তরল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস দেখা দেয়। সাধারণত কিডনির কাজ হল রক্তপ্রবাহ থেকে শরীরের অতিরিক্ত তরল সরিয়ে ফেলা। এই অতিরিক্ত তরল বর্জ্য পদার্থ আমাদের মূত্রাশয়ে মুত্রত্যাগ না করা পর্যন্ত জমা হয়ে থাকে। যখন আমাদের শরীরের তরল নিয়ন্ত্রণের এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে চলতে থাকে এবং ঘামের ফলে শরীরে তরলের পরিমাণ কমে থাকে তখন এ অবস্থায় কিডনি তরল সংরক্ষনের জন্য তুলনামূলকভাবে কম তরল বর্জ্য উৎপাদন করে।

একজন ব্যক্তির শরীরে উপস্থিত মোট তরল এবং এর গঠন সেই ব্যক্তি কি পরিমান পানি বা তরল গ্রহন করে এবং তার রেচন ক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। একজন ব্যক্তি  প্রতিদিন কতটুকু পানি বা তরল পান করবে তা মূলত তার তৃষ্ণার তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে ব্যক্তিগত অভ্যাসের জন্যও এর মধ্যে পার্থক্য হতে পারে। রেচন প্রক্রিয়ার সাহায্যে কি পরিমাণ তরল বর্জ্য আমদের শরীর থেকে নিষ্কাশিত হবে তা ADH (Anti-Diuretic Hormone) বা এন্টি-ডাই-ইউরেটিক (Anti-Di-Uretic) নামক এক ধরনের হরমোন দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। এই হরমোন ভেসোপ্রেসিন (Vasopressin) নামেও পরিচিত।

আমাদের শরীরে ADH উৎপাদিত হয় হাইপোথ্যালামাসে এবং তা সংরক্ষিত হয় পিটুইটারি গ্রন্থিতে। পিটুইটারি হলো আমাদের মস্তিষ্কের গোড়ায় বা নিম্নাংশে অবস্থিত একটি ছোটো গ্রন্থি। যখন আমাদের শরীরে তরলের পরিমাণ কমতে শুরু করে বা শুষ্ক হতে শুরু করে (Dehydrated) তখন রক্তে ADH নিঃসৃত হয়। এরপর এই হরমোন প্রস্রাবকে ঘনীভূত করে কিডনি Tubules কে ত্বরাণিত করে যাতে রক্তপ্রবাহে পুনরায় তরল ফিরে আসে, যা রেচনে তরলের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে।

আপনি কোন ধরণের ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস দ্বারা আক্রান্ত তা চিহ্নিত করা হয় আপনার রেচন প্রক্রিয়াটি কোন উপায়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। যেমনঃ

সেন্ট্রাল ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Central diabetes insipidus) :

সাধারণত অপারেশন, টিউমার, অসুস্থতা যেমন Meningitis, প্রদাহ বা মাথায় কোনো আঘাত পাওয়ার ফলে যদি পিটুইটারি গ্রন্থি বা হাইপোথ্যালামাস ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই রোগ দেখা দেয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে বংশগত সমস্যা বা অস্বাভাবিকতার ফলে এই রোগ হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রোগের কারণ অজানা থাকে। এর ফলে ADH এর স্বাভাবিক উৎপাদন, সংরক্ষণ ও নিঃসরণ ব্যাহত হয়।

নেফ্রোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Nephrogenic diabetes insipidus):

কিডনি Tubules এ কোনো সমস্যা দেখা দিলে এই ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এর ফলে আমাদের কিডনি ADH এর প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দিতে পারে না। এটি কিডনির ক্রনিক সমস্যা বা বংশগত কারণে হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ যেমনঃ Lithium ও Demeclocycline সেবনের ফলেও নেফ্রোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হতে পারে।

জেস্টেসেনাল ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Gestational diabetes insipidus) :

গর্ভাবস্থায় এই ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। একই সাথে যদি Placenta দ্বারা উৎপাদিত এনজাইম মায়ের শরীরে ADH নষ্ট করে তবে এই রোগ হতে পারে।

প্রাইমারি পলিডিপসিয়া (Primary polydipsia) :

এটি ডিপসোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (dipsogenic diabetes insipidus) বা সাইকোজেনিক পলিডিপসিয়া (psychogenic polydipsia) নামেও পরিচিত। এর ফলে প্রস্রাব লঘু হয়ে যায় এবং প্রস্রাবের পরিমাণ অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে যায়। শুধু ADH এর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার জন্যই নয়, এই রোগের অত্যাধিক পরিমাণে তরল পান করার জন্যও হয়। অত্যাধিক পরিমাণে তরল পান করার ফলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে এবং একই সাথে প্রস্রাব ঘনীভূত হতে পারে না। মানসিক অসুস্থতা এবং তীব্র তৃষ্ণার ফলেও প্রাইমারি পলিডিপসিয়া দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখতে পানঃ

চিকিৎসা

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের ঔষধগুলো দিয়ে থাকেনঃ

desmopressin vasopressin
amiloride hydrochloride carbamazepine
diclofenac sodium hydrochlorothiazide
ibuprofen indomethacin
ketoprofen naproxen
chlorpropamide

চিকিৎসকেরা এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নের টেস্টগুলো দিয়ে থাকেনঃ

ব্লাড গ্লুকোজ, আফটার মিল (Blood Glucose, After meal)
ব্লাড গ্লুকোজ, ফাস্টিং (Blood Glucose, Fasting)
ব্লাড গ্লুকোজ, র‍্যান্ডম (Blood Glucose, Random)
ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
ও-জি-টি-টি (OGTT)
ইউরিন আর/ই (Urine R/E)
এ-ডি-এইচ (ADH)
ইউরিনারী স্পেসিফিক গ্রাভিটি (Urinary specific gravity)
ওয়াটার ডিপ্রাইভেশন টেষ্ট (Water Deprivation Testing)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

বংশগত কারণে জন্মের পরপরই নেফ্রোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Nephrogenic diabetes insipidus) দেখা দিতে পারে যা স্থায়ীভাবে কিডনির প্রস্রাব ঘনীভূত করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। সাধারণত পুরুষরা এই রোগ দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে মহিলাদের মাধ্যমে তাদের শিশুদের মধ্যে এই রোগের জিন বিস্তার লাভ করতে পারে।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতিঃ কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ৪২ গুণ কম। হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২ গুণ বেশি। শ্বেতাঙ্গদের এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ খুব সামান্য প্রভাব ফেলে। কিডনির প্রস্রাব ঘনীভূত করার ক্ষমতা হ্রাস পেলে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস দেখা দেয় যার ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং তীব্র তৃষ্ণা অনুভূত হয়। এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা করা হলে ততটা ক্ষতি হয় না এবং জীবনকালের উপর কোনো প্রভাব পড়ে না।

উত্তরঃ এটি বিভিন্ন কারনের উপর নির্ভর করে। কখনও কখনও মস্তিষ্কের অপারেশনের পর ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস সাময়ি্ভাবে হয়ে থাকে। পিটুইটারি গ্রন্থি বা কিডনির সমস্যার ফলে এই রোগ স্থায়ী হয়ে থাকে যা সাধারণত নিরাময়যোগ্য নয়। তবে ADH এর অভাব দূর করা গেলে খুব সহজে এর চিকিৎসা সম্ভব।

উত্তরঃ এই রোগের চিকিৎসার জন্য অবশ্যই ঔষধের প্রয়োজন। তবে এর আগে অবশ্যই কি কারণে এই রোগ হয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে। এক ধরনের পিটুইটারি হরমোনের অভাব এটি হয়ে থাকে। এর সাধারণ কারণগুলো হলো মাথায় কোনো ধরণের আঘাত, পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার বা অপারেশন। কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ যেমনঃ Lithium সেবনের ফলে নেফ্রোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হয়ে থাকে। রোগের কারণ জানা গেলে কখনও কখনও চিকিৎসার ধরন পরিবর্তন হতে পারে। তবে এই রোগের ক্ষেত্রে Desmopressin দ্বারা চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।

হেলথ টিপস্‌

যদি আপনার ডায়াবেটিক ইনসিপিডাস দেখা দেয় তবেঃ

  • অবশ্যই পানিশূন্যতা বা Dehydration রোধ করতে হবে। ঔষধের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং এর জন্য  সবসময় নিজের সাথে পানির বোতল রাখতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন ও জীবনযাপন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

ডাঃ ইন্দ্রজিৎ কুমার দত্ত

মেডিসিন ( Medicine), গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ( খাদ্যনালী, পরিপাকতন্ত্র) ( Gastroenterology)

এমবিবিএস (ডিএমসি), এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (গ্যাষ্ট্রো)

ডাঃ রোজিয়াত পারভীন

মেডিসিন ( Medicine), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এমবিবিএস, এমডি, বিসিএস, এনআইসিভিডি

ডাঃ কাজী মোঃ শফিকুর রহমান

মেডিসিন ( Medicine), নেফ্রোলজি ( কিডনি) ( Nephrology), কার্ডিওলজি ( হার্ট) ( Cardiology)

এম বি বি এস (ঢাকা), এম আর সি পি (ইউ কে), পার্ট-২

ডাঃ মোঃ নাহিদুজ্জামান সাজ্জাদ

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস , এফসিপিএস(মেডিসিন)

ডাঃ লেঃ কর্ণেল আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া

মেডিসিন ( Medicine), নেফ্রোলজি ( কিডনি) ( Nephrology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস, এফসিপিএস(মেডিসিন), এফসিপিএস(নেফ্রোলজী)

মেজর জেনারেল অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আলী মিয়া

মেডিসিন ( Medicine), নিউরোলজি ( স্নায়ুতন্ত্র) ( Neurology)

এমবিবিএস, এমসিপিএস, এফসিপিএস

ডাঃ মোঃ মতিউর রহমান

মেডিসিন ( Medicine), রিউম্যাটোলজি ( বাতরোগ) ( Rheumatology)

এমবিবিএস, , এমডি(ইন্টারনাল মেডিসিন), , এফসিপিএস(মেডিসিন), এফএসিআর(ইউএসএ), এপলার ক্লিনিক ফেলোশিফ ট্রেনিং ইন রিউম্যাটোলজ

অধ্যাপক ডাঃ মনোয়ারুল ইসলাম সরকার

মেডিসিন ( Medicine)

এমবিবিএস, এমসিপিএস, ডিএফএম(ডিইউ), পিজিটি(মেডিসিন)